রেহানা আক্তার:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ঘুরছিল। চোখে পড়া মাত্রই ভালো করে পড়লাম। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পৃথিবীতে আসা নবজাতক শিশুটির জন্য।
নবজাতকের পিতৃপরিচয় এখন সামনে এসেছে। রনি মোল্লা। এই রনি মোল্লা দীর্ঘদিন প্রেম করে, প্রেমের ফসল “সন্তানকে” স্বীকৃতি দিতে বা ঘরে তুলতে পারলো না। এ এক চরম ব্যর্থতা। মৃত্যুবরণ করে নবজাতক শিশুটি চারপাশের প্রেমিক প্রেমিকাদের বুঝিয়ে দিয়ে গেল, তোমরা মানুষ না। তোমরা ঘাতক। তোমরা প্রেম-ভালবাসা করো স্রেফ আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য। তোমাদের ভালবাসার মধ্যে কোন দায়বদ্ধতা বা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নেই। যদি তা থাকতো, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান যদি এসেই পড়ে, তাহলে তোমরা দুজনেই সেই নবজাতককে বরণ করে নিতে।
দুঃখজনক সত্যি হলো, রনি মোল্লার মতো লাখো রনি মোল্লারা সমাজের আনাচে-কানাচে ঘাপটি মেরে থাকে। এসব ছেলেরা একবারও ভাবে না অনৈতিক কাজের পরিণতি কী হতে পারে!
মেয়েরা যেহেতু গর্ভধারণ করার ক্ষমতা রাখে তাই ভোগান্তিগুলো মেয়েদের উপর এসে পড়ে। রনি মোল্লা যদি তাদের সম্পর্ককে স্বীকার করে পিতৃত্বের ভারটুকু নিতো, তাহলে জন্ম নেয়া একজন নবজাতককে অকালে ঝরে পড়তে হতো না। তার তো কোনো দোষ ছিল না? মানুষের জন্ম কখনই পাপের ফসল হতে পারে না। তাই তো আমরা সব সময় বলতে শুনি “পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়”।
আজ সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে দেশের মানুষ মেয়ে টিকে নিয়ে আজেবাজে ভাষায় কথা বলছে। ধরেই নিবো মেয়েটি ভালো, কারণ সে তার ভালবাসার মানুষকে বিশ্বাস করে একান্তে সান্নিধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল তার প্রেমিকের কাছে। কিন্তু প্রেমিক শুধুমাত্র দিনের পর দিন চোরের মত তাকে ব্যবহার করবে, সময় কাটাবে, কিন্তু বিয়ে নামক একটি শর্তের মধ্যে আবদ্ধ হবে না। এটা তো হতে পারে না। বোকা মেয়েটি তার প্রেমিকের চালাকিও বুঝতে পারে নাই।
এ লজ্জা এখন কার? তারা যদি বিয়ে করে ফেলতো তাহলে ঐ নিষ্পাপ নবজাতককে অবৈধ ঘোষিত হতো না। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটিকেও সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতককে ট্রাংককে ভরে রাখতে হতো না।
মেয়েটির এখন উচিৎ হবে রনি মোল্লাকে তার জীবনে দ্বিতীয়বার স্থান না দেয়া। শতবার জনম নিলেও তার জীবনের অপমান তো ঘুচবে না।
এখানে একটি কথা খুবই জরুরি তা হলো, মেয়েদের সাবধান হওয়া দরকার। সমাজের চোখে ছেলেরা দোষী হয় না। দোষী হয় মেয়েরা। প্রকৃতিগতভাবেই মেয়েদের একটি গর্ভ আাছে। যেখানে সে সন্তান ধারণ করে। এটা তো ছেলেদের নেই, তাই তারা একদম হাত পা ঝাড়া। মেয়েরা ছেলেদের কাছে সস্তা বস্তু হয়ে উঠবে না। মিথ্যা ভালবাসা প্রেমের আবেগে গা ভাসিয়ে না দেয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তোমার দু:সময়ে দেখবে তোমার সেই ভালবাসার মানুষটি তোমার পাশে নেই। তবে সত্যিকারের ভালবাসাতে এসব নেই। তাই সত্যি মিথ্যার রূপ তোমাদের চিনতে হবে।
তাই সব মেয়েদের উদ্দেশ্য বলতে চাই –
“মেয়েরা তোমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখো। যদি জীবনে চলার পথে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো অঘটন ঘটেও যায়, তখনও মাথা উঁচুতেই রাখবে কারণ এ দায় শুধু তোমার একার নয়। তোমার প্রেমিকেরও। শিরদাঁড়া সোজা করো। শিক্ষিত হয়ে উপার্জন করতে শিখো এবং রনির মতো লেবাসধারী ছেলে বন্ধুদের বন্ধুত্বকে “না” বলতে শিখো। আজ “না” শব্দটি না বলার কারণে দেখো জাবি’র মেয়েটি জীবিত থেকেও মৃত। সবাই তার দিকেই আঙুল তুলছে। থুথু দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে ভালবাসতে শিখতে হবে। নিজের জীবন নিয়ে যখন যা খুশি তা করা যাবে না। তা না হলে এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তোমার বিচারই করবে। রনি মোল্লাদের কখনই বিচারের কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হয় না। সবাই বলবে “মেয়ে তুমিই খারাপ”। তাই শ্রেষ্ঠ বাক্য হচ্ছে “না”।
এই “না” শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে তোমার নৈতিক কাজ করার প্রতি হাজারও উত্তর। জীবনে চলার পথকে সুখময় করে তোল, বিষাদময় নয়।
স্টুডেন্ট এডভাইজর
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।