যে ছয় ধরনের পুরুষকে বিয়ে করতে হয় না!!!!

সামারা তিন্নি:

আরবিতে একটা প্রবাদ আছে – ছয় ধরনের নারীদের বিয়ে করতে হয় না। তারা হচ্ছে আন্নানা, মান্নানা, হান্নানা, হাদ্দাকা, বাররাকা এবং শাদ্দাকা। এই বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। ফেসবুকে এক আপুর পোস্টে এ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার পরে কৌতূহলবশত নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখি এই প্রবাদ আসলেই আছে।

এক কথায় প্রকাশ করলে শব্দগুলোর অর্থ সম্ভবত অলস, দাম্ভিক, পরপুরুষে আসক্ত, লোভী, অতিরিক্ত সাজগোজপ্রিয় এবং বাচাল।  তবে কোন ধরনের পুরুষদের বিয়ে করতে হয় না, সে বিষয়ে ইংরেজি, বাংলা সব দিয়ে সার্চ দিয়েও তেমন কিছুই পেলুম না।

সামারা তিন্নি

কিছু পত্রিকার আর্টিকেল আসলো বস্তাপচা সব তথ্য নিয়ে, যেমন – তেমন ছেলেকেই বিয়ে করো যে কিনা তোমার পরিচিত বাকি সব ছেলেদের থেকে আলাদা। অদ্ভুত কথা! অথবা – তেমন পুরুষই তোমার যোগ্য যে তোমার অন্তরের সৌন্দর্যকে বোঝে। এটাও বাস্তব জীবনে অসাধ্য কাজ। অন্তরের সৌন্দর্য বোঝে কী বোঝে না তা বুঝতে মাঝে মাঝে অর্ধ-জীবন লেগে যায়। এতো সময় কার আছে? সুতরাং ভাবলাম যে আরবি প্রবাদটাকেই একটু ঘুরিয়ে দেই -অর্থাৎ

যেই ছয় ধরনের পুরুষদের বিয়ে করতে হয় না —

আন্নান: এর ইংরেজি অর্থ হচ্ছে স্লো এ্যক্টর বা স্লাগিশ। খাঁটি বাংলায় – কুঁড়ের বাদশা। যেই পুরুষেরা একদিন কাজ করে তিনদিন হেঁচকি তোলে, অথবা অফিস থেকে ফিরে বলে, ‘তোমার অফিসে কোন কাজ হয় না, সারাদিন তুমি বসে থাকো। আর আমি এতো কাজ করি যে শরীর চলে না, তাই বাসার সব কাজ তুমি করো’ – তারাই আন্নান। বিয়ের পূর্বে এদের এই স্বভাব বোঝার উপায় হচ্ছে রেঁস্তোরায় খেতে যাওয়া। তারা ওয়েটারের সাথে কেমন ব্যবহার করছে, বিল দিতে তুড়ি বাজিয়ে ডাকছে, নাকি নিজেই উঠে যাচ্ছে, খাবার পরে সব প্লেট গুছিয়ে দিচ্ছে, নাকি ওখানেই হাত ধোয়ার বায়না করছে — এসব দেখেই আন্নান বুঝতে পারার কথা।

আলমুকালাদ: ইংরেজিতে অর্থ স্নব, আর বাংলায় নাক উঁচু ব্যক্তি। কথায় কথায় যে খোঁটা দেয় অথবা নিজের প্রাধান্য জাহিরের জন্য অস্থির থাকে, তাদের থেকে এক কিলোমিটার দূরে থাকাই নিরাপদ। এদের বুঝতে পারার জন্য কিছুটা সময় কথা বলাই যথেষ্ট। যারা দাম্ভিক, তারা চাইলেও খুব বেশি সময় সেটা লুকোতে পারে না। এক ফাঁকে বলেই বসে – ‘আরে তুমি যত বেতন পাও, তার চেয়ে বেশি বেতন তো আমার আব্বা আমাদের ড্রাইভারকে দেয়।’ তাদের বেশিরভাগ গল্পে তারাই থাকে হিরো এবং বাকি সবাই জিরো। অধস্তন ব্যক্তিদের প্রতি তাচ্ছিল্যভাব প্রদর্শন তাদের চরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য।

আলফাসিক: এদের জন্য ইংরেজিতে একটি চমৎকার শব্দ রয়েছে – ক্যাসানোভা। বাংলায় কী বলে জানি না। কথ্য বাংলায় – কঠিন প্রেমিক পুরুষ। এরা কাউকেই না বলতে পারে না। এমনকি যেসব মেয়ে ‘না’ বলে, তাদেরকে অনেক ভাবে পটিয়ে ‘হ্যাঁ’ যতক্ষণ না বলায়, ততক্ষণও তাদের ভালো লাগে না। রেঁস্তোরায় গেলে সবসময় তাদের পাশের টেবিলের খাবারের দিকে তাকিয়ে, “ইশ কী মজার খাবার অর্ডার করেছে! আমি কেন যে করলাম না” বলে মুখ গোমড়া করে নিজের খাবার খায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদের কোনভাবেই বিয়ের আগে বোঝার উপায় নেই। এমনকি বিয়ের পরেও বুঝতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্ত্রীর কাছে ‘দারুণ রোমান্টিক স্বামী’ বলে বিবেচিত হওয়ায় যখন এদের কাহিনি প্রকাশ পায়, সর্বাগ্রে স্ত্রীই অন্য মেয়েটিকে ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দেয়ার প্রত্যয় জাহির করতে করতে নাকি গলায় বলে, ‘আমার কুচুমুচুর কী দোষ, ওই পেত্নি কুচুমুচুর মাথা খাইছে!”

আলজাসে ওয়াল বাইস:  সোজা কথায় – লোভী এবং কৃপণ। এদের বিয়ে করলে জীবন ঝ্যাড়ঝ্যাড়া। এদের যখন বলা হয়, ‘তোমার তো এতো পয়সা, কেন এরকম কিপটামি করো?’ – তখন তারা মুচকি হেসে বলে, ‘কিপ্টামি করি বলেই তো ব্যাংকে এতো পয়সা। খরচ করলে বড়লোক থাকে কেউ?’ এরা বাসার বাজার নিয়ে দিবারাত্র হা হুতাশ করলেও দাওয়াতে ভালোই খেতে দেখা যায়। এছাড়া প্রায়শই এদের কীসব হিসেব করতে করতে বউকে প্রশ্ন করতে শোনা যায় – ‘আচ্ছা, তোমার বাবার যে অমুক জায়গায় জমি আছে, সেটার কত ভাগ তুমি পাবা বলো তো?’ সংসার খরচ দেবার সময় তারা হিমালয়ের মৌনী বাবার রূপ ধারণ করে এবং ভুলেও জানতে চায় না সে বউ-বাচ্চা-সংসারের কাজ কারবার হচ্ছে কী করে!

মাহউস: এর অর্থ হচ্ছে অবসেসড অথবা সর্বক্ষণ ঘোরে থাকা ব্যক্তি। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কেউ কেউ বলে যে পড়াশোনা কিংবা টাকা বানানোর অবসেশন থাকা ভালো। তাদের জানিয়ে দেই, কোন কিছু নিয়েই ঘোরে থাকা ভালো না। বাংলায় ‘লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়’ কথাটা এমনি এমনি আসেনি। সুতরাং ভিডিও গেম হোক, কিংবা টাকার নেশা অথবা অতিরিক্ত পড়ার নেশা যা সামাজিক কাজ করতেও বাধাগ্রস্থ করে – সব ধরণের নেশাই মন্দ। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে যে বিয়ে করা ঠিক না, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সবারই আছে।

কেথির আলকালাম: এক কথায় – গসিপবাজ। অমুকের কথা তমুককে, অথবা তমুকের কথা অমুককে বলায় যাদের জুড়ি নেই। প্রয়োজনবোধে দুই তিনটি শব্দ এদিক ওদিক করে সম্পূর্ণ বাক্যের ভাবপ্রকাশ বদলে দেয়। ধরা পরলে দেঁতো হাসি দিয়ে বলে – ‘আমি তো বুঝি নাই’ কিংবা ‘আহা দুষ্টুমি করেছিলাম।’ পরের ঘরের খবর জানার জন্য সারাক্ষণ উশখুশ করা অথবা কারণ ছাড়া অন্যের সংসারে ঢুকে উপদেশ দেয়ার প্রবণতাও এদের বড্ড বেশি। ক্ষেত্রবিশেষে বউকে শিখিয়ে পড়িয়ে গোয়েন্দা বানানোর দিকেও তাদের ঝোঁক থাকে। সবকথার শেষেই তার মাথা দুলিয়ে বউকে বলে, ‘গীবত করার অর্থ হচ্ছে মৃত ভাইয়ের মাংস খাবার মত পাপ। আমরা তো শুধু একটু আলোচনা করি, ঠিক কিনা?’

এই ছয় ধরনের পুরুষ ছাড়াও আরেক ধরনের মানুষ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। মানুষ বললাম কারণ, এই স্বভাব নারীপুরুষ দুই গ্রুপেরই আছে। সেটা হচ্ছে অন্যকে ছোট করে দেখার প্রবণতা। আরো সংকীর্ণভাবে বললে, মেয়েদের ছোট করে দেখার প্রবণতা। ‘মাইয়া মানুষের বুদ্ধি’ অথবা ‘অফিসে তো প্রমোশন পাইবোই, মাইয়া না?’ কিংবা ‘বিয়ের পর শুধু মেয়েদেরই স্যাক্রিফাইস করতে হয়, তোমার মাও করেছে, আমিও করছি’ – এই ধরনের কথা যারা বলে, সম্ভব হলে আগে থেকেই তাদের  টাটা বাই বাই দেয়া ভালো।

একজন আপু আরও একটি পয়েন্ট যোগ করেছেন, যেটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ:

সিঘাত আল মালাকিয়া: বাংলা অর্থ অধিকারসূচক বা অধিকার ফলানো ব্যক্তি। যদিও ইংরেজিতে পজেসিভ শব্দটাই বেশি যুতসই লাগে আমার কাছে। আপনি যদি সাত চড়ে রা না করা মানুষ হোন, তবে ভিন্ন কথা। নয়তো বিয়ের পরে এরা আপনার জীবন তেজপাতার মতো করে দেবে। এটা খেলে কেন, এই কাপড় পরলে কেন, এভাবে হাঁটলে কেন, ওভাবে হাসলে কেন?এদের এই স্বভাব বিয়ের আগে বোঝা একটু কঠিন হলেও একটু খোঁজ নিলে জানবেন, তাদের আগেও অনেকবার বিয়ে হতে হতেও হয়নি মাত্রাতিরিক্ত খবরদারির কারণে। আর যদি তাও বের করতে না পারেন, তবে দুইদিন তার সাথে অন্তত বাইরে কোথাও ঘুরতে বা খেতে যেতে পারেন। প্রথমদিন বিয়ে করার আগ্রহে মুখোশে মুখ ঢেকে রাখলেও দ্বিতীয়দিন এই স্বভাব বেরিয়ে আসতে বাধ্য, যেটা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কারণ আপনার যেকোন পছন্দের উনি অগ্রাহ্য করে ওনারটা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন।

পরিশেষে বলি, যেটা দোষ সেটা নারী পুরুষ নির্বিবাদে সবার জন্যই দোষ। আবার গুণের ক্ষেত্রেও তাই। কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন, তবে কি বিয়ে করবোই না? দোষবিহীন কোন মানুষ কি আছে? আমিও আপনার সাথে একমত, দোষ বিহীন কোন মানুষ নেই। দোষে-গুণে মেলানো বলেই মানব জীবন এতো বৈচিত্র্যময়, এতো অনন্য। বিয়ের অন্যতম একটি চমৎকার দিক হচ্ছে নিজের কমতি পূরণ করা। আমার যে গুণটি নেই, সেটি পূরণ করার জন্যই কারো না কারো হাত ধরা। তবে সমস্যা তখনই, যখন কোন একটি দিক এতো বেশি প্রাধান্য পেয়ে যায়, যাতে সেই মানুষটির বাকি সব গুণগুলো ঢাকা পড়ে। কতকটা দুধে লেবুর রস পড়ার মতো ব্যাপার।

শেষমেষ আরো দুইটি আরবি প্রবাদ দিয়ে লেখার ইতি টানছি – ইসমি ফি গানাআযা ওয়ালা তিমসি ফি গাওয়াযা। বাংলা করলে – কারো বিয়ের আয়োজনে জড়ানোর চেয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজনে থাকা ভালো।

আবার – ইয়া বাখত মিন ওয়াফফা রাআসিন বিন হালাল। অর্থ- তারাই সৌভাগ্যবান যারা দুইজন ব্যক্তিকে একত্র হতে সাহায্য করে। অর্থাৎ যারা অনুমোদনযোগ্য বিয়ে অ্যারেঞ্জ করতে সাহায্য করে।

সুতরাং একেই বলে দিল্লিকা লাড্ডু!

পুনশ্চঃ প্রত্যেকটি অনুবাদ এবং আরবি শব্দ খুঁজতে গুগল ট্রান্সলেশন এবং অনলাইন আরবি ডিকশনারির সাহায্য নিয়েছি। উচ্চারণগত ভুল থাকতেই পারে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টির প্রত্যাশায়।

আর যারা ছয় নারীর বর্ণনা পড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য স্ট্যাটাস হুবহু কপি করে দিয়েছি নিচে:

যে ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত না!  ১. আন্নানা, ২. মান্নানা, ৩. হান্নানা, ৪. হাদ্দাকা, ৫. বাররাকা, ৬. শাদ্দাকা।
.
১. “আন্নানা” হলো সেই নারী যে সবসময় ‘হায় আফসোস’ ‘হায় আফসোস’ করতে থাকে। এবং অলস, ‘রোগিনী’র ভান করে বসে থাকে। এমন নারীকে বিয়ে করলে সংসারে বরকত হয় না।
২. “মান্নানা” হলো সেই নারী যে স্বামীকে প্রায়ই বলে- ‘আমি তোমার জন্যে এই করেছি, সেই করেছি।’ হেন করেছি, তেন করেছি, ইত্যাদি ইত্যাদি।
৩. “হান্নানা” হলো সেই নারী যে তার পূর্বের স্বামী বা প্রেমিকের প্রতি আসক্ত থাকে।
৪. “হাদ্দাকা” হলো সেই নারী, যে কোনো কিছুর উপর থেকেই লোভ সামলাতে পারে না। সব কিছুই পেতে চায়, এবং স্বামীকে তা ক্রয়ের জন্যে নিয়মিত চাপে রাখে।
৫. “বাররাকা” হলো সেই নারী যে সারাদিন কেবল সাজসজ্জা ও প্রসাধনী নিয়ে মেতে থাকে। এই শব্দের অন্য একটি অর্থ হলো, যে নারী খেতে বসে রাগ করে চলে যায়। এবং পরে একা একা খায়।
৬. “শাদ্দাকা” হোলো সেই নারী যে সবসময় বকবক করে।
৬ নম্বর বাদে বাকি গুলি যাচাইয়ের উপায় কি? অবিবাহিত মেয়েদের এসব বৈশিষ্ট্য আছে কি না, কেমনে বুঝা যাবে? (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.