অনন্য আজাদ:
২০১৫ সালে শামিমা বেগম নামে একজন ১৫ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে আইএস এর পক্ষে সন্ত্রাসবাদী কার্যাকলাপে যুক্ত হতে সিরিয়াতে রওনা দিয়েছিলেন। যেখানে আইএস এর নাম শুনলেই দুনিয়ার মানুষজন থরথর করে কেঁপে উঠতো/উঠে, সেখানে এই মেয়েটি আইএস এর পক্ষে যৌনদাসী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। একাধিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে জানা যায় যে, তিনি আরও দুজন বান্ধবীকে নিয়ে সিরিয়াতে জিহাদিদের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলেন।
শামিমার এই ভয়ংকর ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। এই শামিমা বাঙলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মেয়ে। অর্থাৎ তার শেকড় আমাদের মাটিতেই। ২০১৫ সালে বাঙলাদেশের পরিস্থিতিও ভীতিকর ছিল। প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে গরু জবাই করার মতো মানুষ জবাই করার এক বীভৎস উৎসবে মেতে ছিল ইসলামি সন্ত্রাসীরা। কখনো তারা আল্লাহু আল্লাহু চিৎকার করতে করতে বাসায় ঢুকে মানুষ জবাই করেছিল। আবার কখনো কখনো নারায়ে তাকবীর বলতে বলতে অফিসে ঢুকে শরীর থেকে মাথা আলাদা করেছিল। স্বাধীনতার পর বাঙলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টিশীলতাকে বিনাশ করার অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মধ্যে একটি বছর ২০১৫। অর্থাৎ ২০১৫ সালে বাঙলাদেশও পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, এই আলোড়ন সৃষ্টিশীল মানুষদের একের পর এক হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্যে ছিল। ওদিকে শামিমা নামের মেয়েটির পরিচয়েও বাঙলাদেশের নাম ছিল।
পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলির শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলো বাঙলাদেশকে ধুয়ে মুছে একাকার করে দিয়েছিল। ২০১৫ সালে বাঙলাদেশ ছিল পাকিস্তানের থেকেও অনিরাপদ একটি দেশ। যেখানে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান, এবং নিশ্চয়তার পরিণতিও মৃত্যু।
এখন সিরিয়াতে মারামারি শেষ। কাটাকাটি শেষ। গণ্ডগোল শেষ। রক্তারক্তি শেষ। তাই শামিমা নামের সেই বাঙলাদেশী বংশদ্ভূত ব্রিটিশ মেয়েটি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চাইছে। এখন তার ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে। যতদিন মানুষ খুনাখুনি চলছিলো, বোমা পড়ছিল, ধর্ষণ হচ্ছিলো, জবাই চলছিল, ততদিন সেখানে থাকতে তার কোন সমস্যা হয়নি।
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে, সেই শামিমা বেগম নামের বাঙলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মেয়েটি তার কর্মকাণ্ডের অনুতপ্ত নন। কোন অনুশোচনা নেই। তিনি মনে করেন না যে, অমুসলিমদের হত্যা করা ভুল। তিনি মনে করেন না যে, তার চোখের সামনে যে সকল কাফের, অমুসলিম, বিধর্মীদের গলা কেটে জবাই করা হয়েছিলো, দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল শরীর- তা মন্দ নয়। তার কাছে একটা বিষয়ই খারাপ লেগেছিল; তা হলো- এক মুসলিম যখন আরেক মুসলিমকে হত্যা করেছে তা দেখে তিনি পীড়নবোধ করেছিলেন।
কী অদ্ভুত ও বিকৃত মানুষের চিন্তাধারা তাই না? যে কাফেরকে হত্যা করা তার কাছে স্বাভাবিক লেগেছিল, এখন সেই কাফেরদের দেশ যুক্তরাজ্যেই তিনি ফিরে যেতে চাইছেন! এমন অসুস্থ, মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তিকে গ্রহণ করা কি সম্ভব? এখন যুদ্ধ নেই, তাই সিরিয়ার প্রতি তার কোন মায়াও নেই। এখন তার যুক্তরাজ্যের প্রতি টান জেগেছে। কী ভয়ংকর লোভী সর্বনাশী ব্যাকুলতা।
সর্বশেষ, যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তার মতো চিন্তার মানুষকে সেই দেশ ধারণ করতে চাইছে না। যুক্তরাজ্য খুবই প্রাক্টিকাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তাহলে মেয়েটি যাবে কোথায়? পিতামাতার সূত্র ধরে তাহলে কি তাকে বাঙলাদেশে পাঠানো হবে?
মানুষ উন্নত জীবনের জন্যে সভ্য সমাজে দৌড়ে যায়, অথচ সভ্য সমাজে বেড়ে উঠেও মানুষ অসভ্য, বর্বর, হিংস্রতাকে কীভাবে বেছে নেয় তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
২০১৪/১৫ সালে বাঙলাদেশ থেকেও হাজার হাজার ইসলামি জিহাদি সিরিয়াতে গিয়েছিল। এদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে, আবার অনেকেই ফেরত এসেছে। বাঙলাদেশে জিহাদির সংখ্যা কম নয় কিন্তু! তা ২০১২/১৩/১৪/১৫/১৬ সালেই জানা গিয়েছিল। তাহলে কি এই আইএস এর যৌনদাসী শামিমা বেগমকে গ্রহণ করতে বাঙলাদেশের সমস্যা হবে? যদিও বিবিসি এবং গার্ডিয়ান এর তথ্যমতে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও বেশ জোরের সাথেই জানিয়ে দিয়েছে যে, শামিমা মোটেও বাংলাদেশি নাগরিক নয়, এবং কখনই বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করেনি। কাজেই তাকে গ্রহণ করার প্রশ্নই উঠে না।