চিরায়ত ক্যাচাল, নারীর শত্রু কে?

সপ্তদ্বীপা নীলাঞ্জনা:

সে অনেককাল আগের কথা। এক দেশে এক রাজা ছিল। তার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, অনেক সৈন্য সামন্ত আর কোষাগারে অঢেল সোনাদানা হীরে-জহরতে ভরপুর ছিল। রাজ্যে প্রজারা বসবাস করতো পরম সুখে। কিন্তু রাজার নিজের মনেই ছিল না সুখ। তার ছিল দুই বউ। সুয়োরাণী আর দুয়োরাণী। সুয়োরাণীকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন অনেক বছর আগে। রাণী কর্মে অতি নিপুণা। অন্দরমহলের সমস্ত ভার ছিল তার হাতে। সংসারের সমস্ত ঘরকন্নার কাজ, রাজার খাবার দাবারের তদারকি, এইসব নিয়ে তার দিন কাটছিল বেশ। সবাই তাকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। সাক্ষাত মা লক্ষ্মী, মা অন্নপূর্ণা, এইসব নামে তার জয়জয়কার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক বছর পর রাজা নতুন রাণী ঘরে আনেন, দুয়োরাণী। দুয়োরাণীর ঐশ্বর্য প্রাচুর্যের সংসারে কোনকিছুতে মন নেই। সারাক্ষণ ঘরে বসে সংগীত সাধনা করেন, বীণা বাজান। আপনমনে নিজের জগতে ঘুরে বেড়ান। না পারেন রাঁধতে, না পারেন ঘরকন্নার কাজ, না পারেন অন্য নারীদের সঙ্গে ঠাট্টা মশকরায় মশগুল হতে; যেন সব জায়গায়ই বেমানান। তারপরেও রাজা তাকে বেশি ভালবাসেন, তার কাছে বেশি সময় কাটান। রাণীর বিদগ্ধ পাণ্ডিত্য তাঁকে মুগ্ধ করে রাখে সবসময়। এভাবেই দিন কাটতে পারতো! কিন্তু অন্দরমহলের অন্য নারীরা তাকে দেখে টিপ্পনী কাটে, তাকে কোথায় যেন বারবার সংসারের অযোগ্য দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে যে একটু অন্যরকম, আলাদা, এইটি যেন মস্ত বড় দোষ। দিনে দিনে দুয়োরাণী একঘরে হয়ে পড়লো, তার নামে ছি ছি পড়ে গেল চারিদিকে। সেই দু:খে শোকে অভিমানে একদিন রাণী রাজ্য ছেড়ে চলে গেল অনেক দূরে। তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

ওপরের এই গল্পটার সাথে বর্তমান সময়ের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে? যদি মিল পাওয়া যায়, তাহলে এইবার গল্পটা থামিয়ে মূল প্রসঙ্গে আসি। একটা বিপ্রতীপ বিবর্তনের বিপ্লবে বদলে যাচ্ছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, মানুষের জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধ। বিবর্তনের ঢেউ লাগে অন্য সবকিছুর মতো নারী সমাজেও।

নারীরা সনাতনী প্রথা ভেঙ্গে আধুনিক মননের হাওয়ায় ভাসতে শুরু করে। এতে নারী স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত হতে শুরু করলো। মেয়েরা স্বাবলম্বী ও সাহসী হয়ে সমাজে পরিচিতি পেতে শুরু করলো। আলোচনার শুরুতেই বলে রাখা ভালো, আমি শুধু বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নারীদের অবস্থান নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ করছি; বিশ্বসংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নয়। ইদানীং লক্ষ্য করছি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের বৃহৎ একটা অংশই নিজেদের দাবি করে আধুনিক প্রগতিশীল নারী হিসেবে। তারা ওয়েস্টার্ন কালচারটাকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে আধুনিক তকমায় ভূষিত করছেন।

এতে আমার সমস্যা নেই, সমস্যা সেই মেয়েদেরই যারা পায়ের তলায় সরষে দেখেন। তাহলে গণ্ডগোলটা কোথায়? গণ্ডগোলটা একদম গোড়াতেই ওই “আধুনিক” শব্দটায়। “আধুনিক” বলতে ঠিক কী বুঝি? ওয়েস্টার্ন হলেই কি প্রগতিশীল; নাহলে হয়? আমার মনে হয় গালভরা চার অক্ষরের এই “আধুনিক” শব্দটা আসলে একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আনুষঙ্গিক আরো কিছু বিষয়কে যুক্ত করে।
সহজ কথায়, এটি এক রকমের “নিয়ম ভাঙ্গার খেলা”, চিরাচরিত নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজের স্বাধীন সত্ত্বাকে স্থাপন করা; দৃপ্ত বলিষ্ঠ সাহসিকতার চূড়ান্ত পর্যায়। বাঙ্গালী জাতির একটা উদ্ভট স্বভাব হচ্ছে, নতুন কিছু একটা দেখলে আর রক্ষে নেই, সেটা তার তক্ষুণি পাওয়া চাই। সে সনাতনীকে ভুলে পশ্চিমা কায়দা রপ্ত করার জন্য যেন জান প্রাণ এক করে দিল!

আচ্ছা, সনাতনীকে বাঁচিয়ে রেখে আধুনিক হওয়া যায় না? আমার তো মনে হয়, সনাতনীটা শিকড় হয়ে আধুনিক হবার রসদ জোগাবে। এইবার আসি, সনাতনী’টা কী? ধরা যাক, একটা বাঙ্গালী মেয়ে যে শুধু বিদেশী গান জানে, বিদেশী সাহিত্য পড়ে কিন্তু কোনদিন নিজের দেশের কোন কিছু নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। সে জানে শার্টের সাথে কোন জিন্সটা ম্যাচ করবে, অথচ এইটা জানে না কোন শাড়িটায় কোন ব্লাউজটা মানাবে। তাহলে সে কি আপনার চোখে আধুনিক?

আমার তো মনে হয়, এই মেয়ের চাইতে অনেক বেশি আধুনিক অন্য একটা মেয়ে যে কিনা রবীন্দ্রসংগীত গায়, আবার বব ডিলানও আওড়ায়; যার ব্যাগে জয় গোস্বামী বা শঙ্খ ঘোষের কবিতার বই পাওয়া যায়, অথচ মোবাইলের নোটপ্যাডে র‌্যাবো, কাফকা, মারকেজের লেখাগুলোও থাকে, যে পূজায় স্নিগ্ধরঙা শাড়ি পরে ঠাকুর দেখতে বেরোয়, আবার পার্টিতে সকলের নজর কাড়ে, যে পিকাসোর পেইন্টিং এ মুগ্ধ হয় আর জয়নুলের ছবিতে প্রাণ জুড়ায়; এমন ভারসেটাইল হলে তবেই না আধুনিক!

যেমন আমার দিদাকে (মায়ের মা) আমি আধুনিক বলে মনে করি। তিনি সত্তরের দশকে গ্রামে থেকে লেখাপড়া শিখেছেন নিজ তাগিদে ঘরে বসে, স্বামীর সাথে সংসার করেছেন, সংসারের হিসেব নিকেশ করেছেন, বিভিন্ন সময়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সেটিকে রূপায়ন করেছেন (এটি সেই সময় যখন অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়েদের পড়বার সুযোগ ছিল না, সংসারে কোন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার বা সাহস কোনটাই ছিল না)।

আলোচনার শুরুতেই বলেছি, সময়টা এখন বিপ্রতীপ বিবর্তনের। তাই বিবর্তনের হাওয়া যে বিপ্রতীপ দিক থেকে বইছে, তা তে আর সন্দেহ কী! উঠতি বয়সের বাঙ্গালী মেয়েরা এখন শুধু বাইরের পোশাকি চলনটাই রপ্ত করে নিচ্ছে, ভেতরের অন্তর্নিহিত বোধটাকে নয়। কিছু মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকে একইসময়ে একাধিক। বেশ কিছুদিন ধরে এই ট্রেন্ডও চলছে। এর উত্তরে একটি ট্রেডমার্ক কথা বেশ শোনা যায়, “why fit in one box when I can choose many?” কথা হচ্ছে, যা শুনবেন, তাই কি মেনে নেবেন? সেটা আপনার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে৷ কোনটা আপনার জন্য আর কোনটা আপনার জন্য নিয়, সেটা ভেবে নিয়ে বিষয়টা রপ্ত করুন।

ধরুন, এক ডাক্তার একজনকে জ্বর হলে তাকে প্যারাসিটামল দেবেন, সেই ডাক্তারই অন্যজনের ক্যান্সার হলেও কি প্যারাসিটামল দেবেন? যদি না দেয়, তাহলে যে রোগের যে ওষুধ। পাশ্চাত্যের মেয়েরা বিভিন্ন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে, ঘনিষ্ঠ হয়, আবার সেই সম্পর্ক থেকে নিজেই বেরিয়ে আসে। এটা এমন কোন মাথাব্যথার কারণ নয়। আর এখানের সেই আধুনিক মেয়েরাই সেই why I fit in one box মাথায় রেখে ইচ্ছামতো এর-তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়, ঘনিষ্ঠ হয়, অমুক সমুদ্র- তমুক পাহাড় ইত্যাদিতে ঘুরে বেড়ায়।
তারপরে যদি কয়দিন পর কোনো কারণে ছেলে ছেড়ে চলে যায় বা ব্রেকআপ হয়ে যায়, তখন তা নিয়ে কেলেংকারি কাণ্ড বাঁধিয়ে আকাশ পাতাল এক করে ফেলে। কখনো সুইসাইড করে, কখনো মিডিয়াতে মুখ খোলে, কখনো নিজের কর্মগুণে ভারচুয়াল জগতে ভাইরাল হয়ে যায়।
বলি, যা সামলাতে পারবেন না, তা নিয়ে টানাটানি করে মরেন কেন? আধুনিক হতে হলে এই বিষয়েও পাশ্চাত্যের আধুনিকতা গায়ে জড়িয়ে দেখান। এবার বোধকরি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে দুর্বাঘাসের মতো গজিয়ে ওঠা শত শত নারীবোদ্ধারা আমাকে এক প্রস্থ দেখে নেওয়ার কথা ভাবছেন!
হাত নিশপিশ করছে, এখনি দু কলম লিখে তুলোধুনো করে ছাড়বেন ভাবছেন!.. তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, নারীবিদ্বেষ মনোভাব নিয়ে কথাগুলো বলছি না, বলছি এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে সত্যিই নতুন করে ভাবা দরকার।বর্তমানে সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে সহমর্মি হয়ে বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট থেকে বলছি। এইসমস্ত অতিমাত্রায় স্মার্টনেস প্রদর্শনপূর্বক ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই মেয়েরা সমাজের চোখে নিচে নেমে যায় এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় নিজেকে কোনমতে মরে বেঁচে থাকে।

ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এই ঘটনাগুলো আলাদা করে রাখলে, মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে খেয়াল করে দেখবেন, একটা মেয়ের বন্ধু যেমন একটা মেয়ে, তেমনি তার সবচেয়ে বড় শত্রুও একটা মেয়েই। ছোটবেলায় মেয়ের চেয়ে ছেলেকে বেশি প্রাধান্য দেয় তার মা, খালারা। ছোটবেলায় মেয়েরা বাইরে খেলতে চাইলে বাবার আগে মায়েরা তাদের নিষেধ করেন। কোনো হয়রানির শিকার হলে মেয়ের পরিবারের নারী সদস্যরা তা বাইরে বলতে নিষেধ করেন। একটা পরিবারের নারীসদস্যরা ছেলেকে বড় করে তোলেন এমনভাবে যেন তিনি মহারাজাধিরাজ। ছেলেকে বাড়ির অন্দরমহলের কোন কাজই শেখানো হয় না। তার জন্য পারমানেন্ট মানুষ হিসেবে আনা হয় বউকে। এই মনোভাবটা তাকে দিনের পর দিন শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বউ তার পছন্দমতো রাঁধবে, জামা কাপড় কাচবে, তার যখন যা প্রয়োজন তাই এনে হাজির করাই বউয়ের সারাজীবনের একমাত্র সাধনা, যদি এতে স্বামীর মন পাওয়া যায়!

ছেলেদের এভাবে আদরের আতিশয্যে বড় করে তুলেছে কে?

এবার আসি বিয়ে প্রসঙ্গে।

বিয়ের সময় মেয়ের বাপের বাড়ির নারীমহল সারাক্ষণ এই কানপড়াই দিতে থাকে, “স্বামীর সাথে মানিয়ে চলতে হয়।” আরেহ ভাই, মানিয়ে নেবার মতো হলে এমনিই মানিয়ে যাবে, তার জন্য জোরজবরদস্তি শিখে নিতে হয় না। অবশ্য মানিয়ে নেবার কথা শুধু মেয়েদেরই শুনতে হয়, পুরুষদের হয় না। তাদের কারো কাছে কোন দায় পড়েনি দুইজনে মিলেমিশে মানিয়ে চলার; একজনের হুকুম অন্যজনে মানলেই সংসারে সুখ শান্তি বিরাজ করবে।

এই তো গেল বাপের বাড়ির অষ্টপ্রহর কীর্তন, এবার আসি শ্বশুরবাড়িতে। প্রত্যেক মেয়েরই বিয়ে করতে ভয় পাবার অন্যতম প্রধান ও গোপন কারণ শ্বশুরবাড়ির তিন অক্ষরের একটা নারীবাচক শব্দ। শ্বশুরবাড়ীর অন্দরমহলে টিকা টিপ্পনী, সারাক্ষণ এইটা ওইটা ভুল ধরা, এই নিয়ে ঝগড়া, তর্ক- বিতর্ক এমনকি হাতাহাতিতেও গড়ায় বিভিন্ন ঘটনা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে এই চিত্র প্রতিদিনের। অন্দর তো মহিলারা সামলান, তাহলে এখানেও এতো অত্যাচার কেন?

ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে এবার একটু বাইরে তাকালে দেখা যায় অন্য চিত্র। সেটি আরও ভয়ংকর। প্রত্যেক নারীই চায় কোন না কোনভাবে অন্য নারীকে হেনস্তা করতে, তা যেভাবেই হোক না কেন! নারীবাদী আখ্যা দেয়া গণ্যমান্য ব্যক্তিরা “নারীদের বিরুদ্ধে নারীদের অসম দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিক নির্যাতনকে কী বলে অভিহিত করবেন?”

মনে আছে সেই দুই বউ এর গল্পটা? এটা আর কিছু নয়, সমাজের বাস্তব অবস্থার রূপক দৃষ্টান্ত। আমি নিজে দেখেছি, কিছু মেয়ে স্বভাবজাতভাবেই শুধু মেরুদণ্ডহীন মেয়ে হয়েই জন্মেছে, মানুষ হয়ে নয়। বহু বছরের পুরনো প্রথাকে তারা আগলে রেখেছে এবং অন্য মেয়েদের ক্ষেত্রেও সেইরকমটাই আশা করে থাকে। তারা সেই সুয়োরাণীর মতো শুধু সংসার করতেই ভালবাসেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান না, এবং কোন ইচ্ছাও কাজ করে না। এইসব মেয়েদের অন্দরমহলে তাদের প্রশংসার জয়জয়কার।

ছেলেরা আবার এক্ষেত্রে দুইধাপ এগিয়ে। তারা ঘুরবে ফিরবে প্রেম করবে এমন মেয়ের সাথে যে খুব স্মার্ট, উচ্চশিক্ষিত এবং বিশেষ করে অতি সুন্দরী (এই ধরনের মেয়ের সাথে প্রেম করলে বন্ধুমহলে আলগা ভাব নেওয়া যায়); কিন্তু তারাই আবার বিয়ের সময় মুখ বেঁকিয়ে বলবে, শিক্ষিত মেয়ে নট এলাউড। নিজের চেয়ে বেশি শিক্ষিত বউ হলে সংসারে সবকিছুতে নাক গলাবে, তাই আমার মোটামুটি পড়াশুনা জানা মেয়ে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধুদের সামনে ইমেজ রাখবার জন্য, নাহলে নির্দ্বিধায় অশিক্ষিত কাউকে বিয়ে করলেই সবচেয়ে ভাল হতো মনে করতো), অত বেশি সুন্দরী নয় (কেননা সুন্দরী মেয়েদের পেছনে অনেক ছেলেই ঘুরে, পড়ুন (যেমনটা নিজেও ঘুরতো)), এবং সংসারে নিপুণা, রান্নাবান্না জানে, ঘরের কাজ কর্ম পারে এমন মেয়েকেই বিয়ে করে ঘরে আনে। আর বউ নির্বাচনের এই সেকেলে ক্যাটাগরির ইন্ধনটা আসে ছেলের পরিবারের নারীদের থেকেই। এই চিত্রটা কি অন্যরকম হতে পারতো না?

আর যারা শিক্ষিত আধুনিকমনস্ক নারীদের বিয়ে করেন, যে মেয়েরা সেই দুয়োরাণীর মতো সংসারের রাজনীতি বা অর্থনীতির বাইরে গিয়েও চিন্তা করতে চায়, তাদের সংসারে কিছু অশান্তি দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য থাকার কারণে। যদি সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত ভালো মনের স্বামী তার বউকে তার মতো করেই মেনেও নেয়, তা সমাজ মানে না। তাই সর্বদাই সেই মেয়েকে সমাজের নারীসমাজে বেমানান হয়েই প্রতীয়মান হতে থাকে। একটা সময় দুয়োরানীর মতো হারিয়ে না গেলেও সেই নারীর স্বতন্ত্রসত্ত্বা মরে যায়।

কোন একজনের একটা লেখায় পড়েছিলাম, “কতো সরস্বতীই তো মরে যায় শুধু লক্ষ্মী হবার ছলনায়”… রোজকার আটপৌড়ে জীবনে কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। বোধের এই মৃত্যুটা কি নারীরাই বেশি করে তৈরি করে দিচ্ছে না? (মানসিকভাবে) নারীরাই যদি নারীদের এতো নিপীড়ন করে, তাহলে শুধু একপাক্ষিকভাবে পুরুষদের কীভাবে অভিযুক্ত করা যায়?

আমরা বড্ড বেশি অন্যের উপর আঙুল তুলে তার ভুল ধরতে পছন্দ করি। নারীরা মানুষ, পুরুষেরাও মানুষ। আদিমকাল থেকেই পুরুষরা নারীদের উপর নির্যাতন করে আসছে এবং সেই নির্যাতন মানসিকের থেকে বেশি শারীরিক নির্যাতন এবং সেটা কতটা হিংস্র পর্যায়ের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা মানলাম। এবার এটিও দেখতে পাচ্ছি, নারীরা নারীদের উপর নির্যাতন করছে, সেটি আবার শারীরিকের চেয়ে বেশি মানসিক। শারীরিক আক্রমণে মেয়েটির যেমন শরীর মন দুটোর ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানসিক আক্রমণে মেয়েটি বোধদণ্ডহীন- অসাড়- পরাধীন হয়ে এক জড়জীবন কাটাচ্ছে।

কোন চরম অবস্থা থেকে শান্তিপূর্ণ সমাধান আসে না। চরমতম অবস্থা (extreme) যদি শ্রেষ্ঠও হয়, তবু তা উত্তম হবার দাবি রাখে না। এক্ষেত্রে মধ্যম অবস্থাকে আমি বলবো “আরামদায়ক সহাবস্থান”, যা মানুষকে একে অপরের সাথে কলহে লিপ্ত না করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই মানবতাবাদকেই মধ্যম পন্থা বা আরামদায়ক সহাবস্থান হিসেবে বিবেচ্য বলে মনে করি। নারীরা মানুষ হয়ে উঠুক, নারী হয়ে নয়। তাই নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে নয়; সর্বোপরি নিজেকে মানবতাবাদী মানসিকতা থেকে যে কোনকিছু বিশ্লেষণ করে সভ্যতার সমুখে এগিয়ে যাক।

প্রত্যেক মানুষই উত্তম মানুষ হয়ে উঠুক,
প্রত্যেক মানুষই প্রকৃত আধুনিক হয়ে উঠুক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.