বিশ্বজুড়েই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার মায়েরা

working motherউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশ কর্মজীবী মা এক জরিপে বলেছেন, সন্তান জন্মের পর নতুন দায়িত্ব সেরে কাজে ফেরাটা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। যুক্তরাজ্যের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইনী সংস্থা স্ল্যাটার এন্ড গর্ডন জানিয়েছে, জরিপে মোট ১৯৭৫ জন কর্মজীবী নারীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছিল। এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন, ক্যারিয়ার ঠিক রাখা তাদের জন্য অসম্ভব ছিল। শতকরা ৫৪ ভাগ বলেছেন, কর্মজীবী মায়েদের প্রতি আরেকটু সহায়ক হতে পারতেন তাদের নিয়োগদাতারা। শতকরা ৩৫ ভাগ বলেছেন, বাচ্চা জন্মের পর থেকে তাদের আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে।

তবে নিয়োগদাতারা বলেছেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং মায়েদের কাজে ফেরার বিষয়টিতে কর্মক্ষেত্র আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সহায়ক। ইংল্যান্ডের এমপ্লয়মেন্ট মন্ত্রী জো সুইনসন জানান, অন্ত:সত্ত্বা অবস্থায় বা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকার কারণে কোন নারীকে ছাঁটাই করা আইনত অবৈধ। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপের মানে হলো গর্ভাবস্থার সাথেই বৈষম্য এবং এটা হলে সেই নিয়োগদাতাকে এমপ্লয়মেন্ট ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড় করানো যেতে পারে। বোর্ডরুম থেকে শপ ফ্লোর পর্যন্ত যেকোনো চাকরিক্ষেত্রের সবজায়গায় নারীর মেধার সর্বোচ্চ সু-ব্যবহার হয়, সে ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর এজন্যই ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে জন্মের প্রথম বছর সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার লক্ষ্যে পিতৃত্বকালীন ছুটি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার’।

জরিপে শতকরা ৩৫ ভাগ মা জানিয়েছেন, তাদের গর্ভাবস্থায় কর্মক্ষেত্র সহায়ক ছিল না। ৩১ ভাগ মনে করে, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকার সময় নিয়োগদাতারা তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করেননি। শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ বলেছেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার আগেই তাদের কাজে ফেরার ব্যাপারে তারা চাপের মুখে ছিলেন। আবার কাজে ফিরলেও ২৯ ভাগ মনে করেন যে, মা হিসেবে বাড়তি দায়িত্বের কারণে তাদের পদোন্নতির বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ৪৮ ভাগ ভেবেছিলেন, মা হওয়ার পর থেকে তাদের ক্যারিয়ার থমকে গিয়েছিল, ৫১ ভাগ মনে করেন,  গর্ভাবস্থার খবর কর্মক্ষেত্রে জানানোর পর তাদের প্রতি সহকর্মী এবং অধ:স্তনদের আচরণ বদলে গিয়েছিল, ২৫ ভাগ মা মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, ৪৮ ভাগ মনে করেন, তাদের পদোন্নতি উপেক্ষিত হয়ে পড়ে, ১৮ ভাগের পদাবনতি ঘটে এবং শতকরা ৩৫ ভাগ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। শতকরা ৭০ ভাগ কর্মজীবী মা তাদের প্রতি এমন আচরণের জন্য কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেননি এবং ২৬ ভাগ মা ‘নৌকা নাড়াতে’ চাননি।

স্ল্যাটার এন্ড গর্ডন এর আইনজীবী কিরন ডাউরকা জানান, এটা খুবই দু:খজনক যে, খুব কমসংখ্যক কর্মজীবী মা-ই তাদের বৈষম্যের ব্যাপারে মুখ খুলতে চেয়েছেন। নিয়োগদাতারা এই ইস্যুগুলো কখনই বলতে চার না, তারা বালুতে মুখ গুঁজে থাকেন। কিন্তু তাদের এই বিষয়গুলো ভাবতে হবে, কারণ একজন মা হওয়ার পর তার দায়িত্ব বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের সেই সুযোগটুকু দিতে হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই ইস্যুগুলো বের করে আনতে হবে। আমি আশা করি, এই বিষয়গুলো আরও খোলামেলাভাবে আলোচনা হবে এবং নারীরা যাতে ভাবতে পারেন যে, তারা একা নন, তাদের অধিকার আছ এবং তারা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং আমরা সামনে এগোতে পারি’।

কিন্তু সিবিআই কর্মকর্তা নিল ক্যারবেরি বলেছেন, এখানে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, এগুলোর সাথে আমরা ততটা পরিচিত নই। কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, গত ৩০ বছরে কর্মক্ষেত্র অনেকটাই বদলে গেছে। আগের চেয়ে এখন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং মায়েদের কাজে ফেরার সাথে অনেকখানিই সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মক্ষেত্রগুলো। তিনি বলেন, ‘নিয়োগদাতাদের দায়িত্বের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন খুবই স্পষ্ট্। একটা বিষয় স্বচ্ছ থাকা উচিত যে, গর্ভাবস্থার ওপর ভিত্তি করে কোন নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই। যদি তারা তা করে, তাহলে সেই মাকেও নিশ্চিত হতে হবে যে, তারা এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবেন’।

ফেডারেশন অব স্মল বিজনেসেস এর ন্যাশনাল চেয়ারম্যান জন অ্যালান বলেন, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি পারিবারিক-বন্ধুভাবাপ্ন্ন এবং সবার প্রতিই একই রকম। এখানে কর্মরতরা সাধারণত মেয়েদের গর্ভাবস্থা বা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। অন্যদিকে, একজন স্টাফ মাতৃত্ব বা পিতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে এর বিশাল প্রভাব পড়ে ছোট ব্যবসা্ প্রতিষ্ঠানে। কাজেই সময়মতো গর্ভাবস্থার খবরটি জানা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.