পেডোফিলিকদের থেকে সাবধান!

মনিদীপা মুখার্জি:

এক রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার তার স্ত্রীকে ডিভোর্স করে ছোট্ট মেয়েটাকে জোর করে নিজের কাছে রেখে দিয়ে নিয়মিত ধর্ষণ করতো।
সাম্প্রতিক সময়ের শকিং নিউজ। এখানেই শেষ? না।

একদিন বয়সের নবজাতককে ধর্ষণ করার ব্যাপারটি খুব বেশিদিন আগের না। এরপর আসলো যোনিপথ ব্লেড দিয়ে কেটে বড় করে তারপর ধর্ষণ। কয়েকদিন থেকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে কিংবা ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে।

পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা বেশ জটিল। কারণ শুধুমাত্র মানসিক রোগের কারণে তারা এমন ঘটাচ্ছে বললে ছোট ছোট মেয়েগুলোকে অপমান করা হয়। আমরা অনেকেই জানি এই অবস্থার একটা নাম আছে, পেডোফিলিয়া। গত কয়েক বছরে এ নিয়েও কম লেখালেখি হয়নি। কিন্তু এই সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানে কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেয়া হয়েছে বলে কানে আসিনি। এর ফলাফল হিসেবে গত কিছুদিনের ধর্ষণের ঘটনাই যদি আমরা তুলে ধরি, তাহলেই দেখবো যে, শিশুরাই এর মারাত্মক শিকার হচ্ছে।

পেডোফিলিয়া হলো শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ। এক্ষেত্রে শিশুর বয়স একদিনও হতে পারে। অথবা ১৬/১৮ এর নিচেও হতে পারে।
পেডোফিলিয়ার বেসিক ব্যাপারটা হলো- এখানে দোষী ব্যক্তিটি হবে পূর্ণবয়স্ক। ভিকটিম হবে ১৬ বা ১৮ এর নিচে।
যদি ভিকটিমের কনসেন্ট নিয়েও যৌনকর্ম করে, তবুও এটাকে অপরাধ হিসেবেই ধরা হবে।

পেডোফিলিকদের শিকার কারা?
১। অবুঝ (একদিনের বাচ্চা থেকে তিন বছরের বাচ্চা)।
২। অভাবী (যাদের পিতামাতার খাবার কিংবা কসমেটিক্স কিংবা খেলনা কিনে দেবার সাধ্য থাকে না)।
৩। মানসিকরোগে আক্রান্ত শিশু।
৪। অজ্ঞান শিশু (হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় শিশুকেও হাসপাতালের কর্মচারী দ্বারা ধর্ষণের ইতিহাস আছে)।

শিকার শুধু মেয়ে হবে এমন নয়। ২০% ক্ষেত্রে ছোট ছেলেরাও ধর্ষণের শিকার হয়।
পেডোফিলিক বা দোষী যে সচরাচর ছেলে হবে তাও নয়। অনেক নারী আছেন যারা পেডোফিলিক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কাজেই বলা চলে যে পেডোফিলিকদের মধ্যে নারী-পুরুষ নেই।

কেন এমন করে?

এ নিয়ে অনেক স্টাডি হয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট খুবই অল্প। অনেকগুলো কারণে পেডোফিলিক জন্ম নেয়। আমি কিছু কারণ বলবো। তবে বাই অর্ডার সাজাইনি। তাই উপরের কিংবা শেষের কারণগুলোর গুরুত্ব কম বা বেশি হবে না।

১। পেডোফিলিকদের একটি অতীত থাকে, যেখানে নিজেরাই একটা সময় ভিকটিম ছিল।
২। প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন কিংবা ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগতে পারে। ফলে পূর্ণবয়স্ক নারীদের সাথে সফল যৌন সঙ্গমে ব্যর্থ।
৩। যৌন পার্টনারের সাথে বাজে অভিজ্ঞতার যৌনসম্পর্ক।
৪। মানসিকভাবে দুর্বল ও হতাশাগ্রস্থ মানুষ।
৫। দীর্ঘদিনের একাকিত্ব। ফলে নারীদের সাথে মিশতে পারে না।
৬। বন্ধু-আত্মীয়-সমাজে গ্রহণযোগ্যতা কম।
৭। মাদকাসক্ত।
৮। বয়স হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ কিংবা যৌনসঙ্গী না থাকা (এর পেছনেও নানা কারণ)।

কোনো একটা স্টাডিতে দেখেছিলাম এটা কোন রোগ নয়। এটা এক ধরনের ‘এডভেঞ্চার’ টাইপের অনুভূতি দেয় পেডোফিলিকদের মধ্যে। এডভেঞ্চারের অনুভূতি নিতে তারা ধীরে ধীরে মাংসখেকো বাঘের মতো সীমা ছাড়িয়ে যায়।

কীভাবে রোধ করবেন?

১। আপনার শিশুর খেলাধুলার স্থান রাখুন দৃষ্টিসীমার মাঝেই।
২। পরিচিত কিংবা অপরিচিত বয়স্ক মানুষের কোলে বসতে দিবেন না।
৩। আপনার সন্তানকে কেউ চুমু খেতে চাইলে নিরুৎসাহিত করুন।
৪। আত্মীয় এলে কখনোই একই বিছানায় পাঠাবেন না। সে কাজিন-বয়স্ক চাচা-চাচী-খালা-খালু কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হলেও। আলাদা বিছানায় একা শোবার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।
৫। আপনার শিশু কারো সাথে যেতে না চাইলে, কারো প্রতি বিতৃষ্ণা দেখালে ভদ্রতাবশত জোরাজুরি করবেন না। লেট হিম/হার গো।
৬। আপনার সন্তানকে পিতা-মাতার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখার স্বভাব থেকে মুক্ত করুন। হয়ে যান বেস্ট ফ্রেন্ড। তার সাথে বন্ধুর মতো সকল ধরনের আলোচনা করুন। সেটা স্মোকিং-যৌন শিক্ষা সবকিছুই হতে পারে।
৭। কাউ আদিখ্যেতা দেখিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে, খাবার লোভ দেখিয়ে কাছে ডাকলে-খেলনা দেবার প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলে সতর্ক থাকুন।

হ্যাঁ…সবাই পেডোফিলিক নয়…আবার কেউ এই সন্দেহের বাইরঁও নয়। যেখানে আপন পিতা দায়ী হচ্ছে…সেখানে কাকে বিশ্বাস করবেন?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.