বাবা বনাম পুরুষ – কে জয়ী হবে?

সালমা লুনা:

এই যে এক ডাক্তার আত্মহত্যা করার আগে তার প্রেমিকা এবং ‘প্রিয়তমা স্ত্রী’র গুপ্তকথা সব ফাঁস করে দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, তিনি কত ভালো তাকে বাসতেন। অথচ সেই স্ত্রীটিই কিনা এইরূপ বিশ্বাসঘাতক!

সচিত্র প্রমাণ সব প্রকাশ করে স্ত্রীকে সমাজপতিদের কোপানলে ফেলে গেলেন, আইনের কাছেও দায়ী সাব্যস্ত করে গেলেন, যার ফলে সমস্ত ডাক্তার সমাজ ফুঁসে উঠলো।

পুরুষরা সব হৈহৈ রৈরৈ করে উঠলো। তারা পারলে এখনই বিনা বিচারে আইন আদালত ছাড়াই তাকে ফাঁসি দিয়ে দেয়। শুধু তাই না, তাকে ফাঁসি দেয়ার আগে তার সাথে আরও কী কী যেন ভালো কাজ করার আকাঙ্খা প্রকাশ করে!

আইনজীবীরাও দেখলাম একাট্টা হয়ে তার বিরুদ্ধে এমন ভীষণ ভয়ানক সব বাণী উচ্চারণ করছেন যে সেই ভিডিও দেখে ভয়ে বাংলার নারীদের কলজে ফুসফুস গুর্দা সব কেঁপে কেঁপে উঠে।
তারা ভয়ে গর্তে ঢুকে যায়।

পরকীয়া সমাজ থেকে উঠে যায় যায় যখন দশা, ঠিক এমনি সময়ে এক নারী এক মা এক অদ্ভুত অভিযোগ নিয়ে হাজির হলেন।

এক বাবা ডিভোর্স চাওয়া মাকে শিক্ষা দিতে নিজ কন্যাকে ধর্ষণ করেছে!
জ্বী ঠিকই শুনছি আমরা। তিনি আবার একজন শিক্ষিত ব্যাক্তি ও সমাজের উপরতলারই লোক। একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার।

এখন কী হবে??

এখন কি বাংলাদেশের সমস্ত বাবারা একযোগে ওই বাপের ফাঁসি চেয়ে রাস্তায় নামবেন?
সব উকিলরা কি বলবেন, এই লোককে আমরা এমন শাস্তি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থাই করবো, যাতে বাপদের মাথার কলঙ্ক ধুয়ে যায়?

অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা কি ব্যানারে এই লোকের ফাঁসি চাই বলে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়াবেন?

ইতিমধ্যেই বলাবলি হচ্ছে মা’টিই নাকি মিথ্যে বলছে।
কেননা সন্তানের কাস্টডি পেতে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বেশ তো!
বাবামায়ের ডিভোর্স হলে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক সন্তানদের কাস্টডি নিয়ে এই দেশে এতো জটিলতাই বা কেন হয় যে এক মাকে এতো ঘৃণ্য কোন অভিযোগের আশ্রয় নিতে হয়?
কাস্টডি জটিলতায় কতো মা আর কতো সন্তানের কপাল যে পুড়ছে, তার খবর কে রাখে!

সব হ য ব র ল, তাইনা ?
তাহলে সব গোড়া থেকেই ঠিক করুন না বাবুমশাইরা। ঠিক করুন। সব পচে-গলে দমবন্ধ হয়ে সবাই মরার আগেই সব ঠিক করুন।

আর কতো?
মানুষই মরে গেলে আপনাদের ক্ষমতা কি কাউয়া চিলের উপরে খাটাবেন?
শেষে প্রশ্নটা রেখেই যাই,
বাবা বনাম পুরুষ – কে জয়ী হবে?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.