শাহমিকা আগুন:
বসে আছি পুলিশ স্টেশনে। হুম। এবারও। বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। আমি বসে আছি চব্বিশ ঘন্টা পুলিশ প্রহরায়। কারণ পুলিশের ভয় আমাকে একা রাখলে আমি হয়তো আত্মহত্যা করতে পারি। হয়তো না। আমি আসলেই কাজটা করে ফেলতাম। ইংল্যান্ডে পুলিশ সহায়, মানুষের সবচেয়ে কাছের জন হয়। সেই মুহূর্তগুলোতে পুলিশ ছেলেটাকে মনে হচ্ছিল আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। আমার বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে অবশিষ্ট ছিল না। কারণ মাথার ভেতর থেকে প্রতিটি নিউরন চিৎকার করে ডেকে ডেকে বলছিল, ব্যর্থ! তুই একটা ব্যর্থ প্রাণ! বেঁচে থেকে তুই কী করবি! তুই মরে যা! বিয়েটাই তুই ঠিক করে রাখতে পারলি না! আহা! সবাই এবার তোকে দেখে হাসবে! পেছনে তোর চরিত্র নিয়ে কথা বলবে! তোর জন্য তোর বাবা –মা- ভাই-বোনের কত হেনস্থা হবে!

আর তোর ছেলে! সেও মনে রাখবে না তোর কথা! মরে যা! কী যে যন্ত্রণা মাথার ভেতর তা বলে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিল হাতুড়ি দিয়ে কেউ ঘা মেরে যাচ্ছিল মহাকালের কোন এক রহস্যময় গুমোট শূন্যতা থেকে। আর সেই প্রকট শক্তি আমাকে টেনে নিয়ে চলছিল শীতার্ত গহ্বরের মৃত্যুর হাতছানির দিকে।
সেখানেই সমাপ্তি। আর কিছু মাথায় আসছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, আমি পারলাম না। আমার ভালবাসার মানুষটা আমাকে ছেড়ে দিল! আমি হেরে গেলাম আরেকটা মেয়ের কাছে! আমার বেঁচে থাকার আর কোন মানে হয় না। আমি মরে যাবো। এতো লজ্জা, এতো গ্লানি থেকে মুক্তি মিলে যাবে আমার! পুলিশ আমাকে পাঠিয়ে দিল নারী রেফিউজ এ । সারাক্ষণ পাহারায় আছি! অনেকটা জেলখানার কয়েদি মনে হলো নিজেকে!
যদিও এ ছাড়া উপায়ও ছিল না কর্তৃপক্ষের। আমি তখন সর্বহারা! একজন মানুষের আরেকজনের প্রতি প্রেমের কী দারুণ মূল্য দিতে হলো আমাকে! মনে হচ্ছিল, আমার কোথায় ভুল হয়ে গেল! আমার কী দোষ! আমি কেন সব হারালাম!
সেই ছিলাম আমি। দীর্ঘদিন ভুগেছি মারাত্মক ডিপ্রেশনে। সারারাত মাথার ভেতর পেরেক ঠোকার শব্দ হতো। কখনো কখনো মনে হতো, এই এখনই বুঝি মাথাটা বিস্ফোরিত হয়ে মগজগুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়বে।
এই ছিলাম আমি যখন আমি প্রতারিত হয়েছিলাম। সবাই আমাকে জানতো মানসিকভাবে অনেক শক্ত একজন মানুষ হিসেবে। সেই আমি এক ধাক্কায় মৃত্যু চিন্তায় বিভোর! কাউন্সেলিংয়ে এ পাঠানো হলো। তাতে আমার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে লাগলো।
কারণ তথাকথিত কাউন্সেলিং আমাকে কোন সাহায্য করতে পারলো না। বেশ কয়েক মাস ভোগার পর ছেলের কথা ভেবে ঠিক করলাম, আমার মাথার নিয়ন্ত্রণ আমাকেই নিতে হবে।
কিন্তু কীভাবে! যাক! ইচছে থাকলে উপায় হয়ে যায়।
আমি সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করেছি। আমি নিজে প্রাক্টিশনার। আমার অর্ধেক রোগী আসে অটিজম, লার্নিং ডিসএবিলিটি নিয়ে, বাকি চল্লিশ ভাগ আসে মারাত্মক ডিপ্রেশন, আত্মহত্যার চিন্তা, পারিবারিক অশান্তি নিয়ে, যা মানসিকভাবে মানুষটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অন্য দশ ভাগ আসে যাদের অন্যসব রোগ আছে।
পেশায় আমি পুষ্টিবিদ এবং ক্লিনিক্যাল থেরাপিস্ট এবং মানুষের শরীর ও মনস্তাত্মিক জগতের সুস্বাস্থ্য কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আমার কাজ। আমি প্রায় পনেরো বছর ধরে পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে আছি।
আমার ছেলে এবং ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কারণে আমি ঝুঁকে পড়ি মানসিক বা ইমোশনাল স্বাস্থ্যর দিকে। আমার জীবনে যে ঝড় এসেছিল, তা থেকে উতরানোর কারণেই হোক বা মানসিক স্বাস্থ্যকে হারাতে হারাতে খপ করে ধরে ফেলার কারণেই হোক, বা আত্মহত্যার মতো কঠিন অবস্থার থেকে নিজেকে ছিটকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসার কারণেই হোক, বা নিজের ছেলেকে অটিজমের মতো কঠিন শারীরিক-মানসিক- স্নায়বিক যন্ত্রণার হাত থেকে যতটা সম্ভব পরিত্রাণ দেয়ার কারণেই হোক, বা একেবারেই নিঃস্ব করে দেয়া এই আমাকে মাত্র কয়েক বছরের চেষ্টায় আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার কারণেই হোক না কেন, বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান, যারা নারী-শিশু নিয়ে কাজ করে তারা আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে গেছে একজন সফল মানুষ হিসেবে। আমার গল্প নাকি অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে।
সেই সাহস থেকেই আজকে বাংলাদেশের নাজুক একটি ঘটনার জন্য লিখতে বসা।
পরকীয়ার ছোবল এবং আত্মহত্যার চিন্তা, দুটোই আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশে ঝড় বইছে আকাশ আর মিতুকে নিয়ে। মনে হতে পারে আমার অবস্থান মিতুর বিপক্ষে, আর আকাশের পক্ষে যাবে। আমার এতো বছরের এতো পড়াশুনা পুরোই ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ওদেরকে বিচার করি।
আমার কোন ক্লায়েন্টকেই আমি বিচারদণ্ডে দণ্ডিত করি না,বরং সাহায্য করার চেষ্টা করি। একজন মানুষ অনেকগুলো ঘটনার প্রেক্ষিতে বিন্দু বিন্দু করে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে অনেকটা নিজের অজান্তেই। আমার কাছে যে মানুষগুলো আসে সাহায্য চাইতে এবং তারা যারা পরকীয়া করে এবং তারা যারা আসে আত্মহত্যার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে, তারা, তাদের কেস হিস্ট্রি নেয়ার কিছু বছর পর আমি স্তব্ধ হয়ে আবিষ্কার করলাম যে, তাদের জীবনের গল্পে অনেক মিল আছে। সবচেয়ে বড় মিল হলো তারা খুব প্রিয় কিছু হারিয়েছে, জীবন আর কখনো তাদের নিজের আনুগত্যে থাকেনি। না বাবা, না মা, না ভাই- বোন, না ক্যারিয়ার, না জীবনসঙ্গী, না জীবন নিজেই!
বিয়ে এবং পরকীয়া! একটি থাকলে আরেকটি থাকবে না। বিয়ে মানেই কমিটমেন্ট। একটি সুস্থ বিয়ে যখন করা হয়, তখন স্বামী-স্ত্রী কেউ এই ভেবে বিয়ে করে না যে আমরা মাত্র পাঁচ –কী দশ –কী পনের বছরের জন্য বিয়ে করবো! সারা জীবন একসাথে থাকার কমিটমেন্ট নিয়েই বিয়ের শুরু হয়।
অসুস্থ বিয়ে হলো যখন বিয়েটা করা হয় যৌতুকের লোভে, বা গাড়ি-বাড়ি –বিদেশ যাবার বা থাকার লোভে বা এরকম আরো নানান কারণে। বিয়ে হলো মানুষকে সভ্যকরণ, আইনের আওতায় এনে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের সম্পদের সঠিক বণ্টন। একটি পরিবারতন্ত্র গঠন।
বিয়ের মতবাদ এবং এর প্রয়োগ কিন্তু পৃথিবীর সৃষ্টির তুলনায় নিতান্তই নবজাতক। আমাদের কাছের দেশ শ্রীলংকাতেই ব্রিটিশ সরকার আসার পর জোরপূর্বক বিয়েপ্রথা শুরু করা হয়। পাশ্চাত্যে একই অবস্থা ছিল। মানুষ তিন সাড়ে তিনশ বছর বিয়ে প্র্যাকটিস করে এখন হয়রান। সৌদি আরবে বিয়ের প্রচলনও অনেকটা আরোপিত হয় ইসলাম আসার পর থেকে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো শেকল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া। সেখানে বিয়ের মতো বন্ধনে সবাইকে আটকে রাখা বেশ কঠিন কাজ।
বেশিরভাগ সময় পুরুষ সঙ্গীটিই বের হয় ঝটিকা অভিযানে। পেয়েও যায় কাউকে না কাউকে। শুরু হয় পরকীয়া। বিবাহিত নারী-পুরুষ অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক শুরু করলে তাকে বলা হয় পরকীয়া। কিন্তু আমার কাছে অনেকেই আসে যারা দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ এবং বিয়ে হয়নি বলে আইন বা সমাজ তাদের পাশে নেই, তারাও তো প্রতারিত হয় এবং আমার মতে এটাও পরকীয়া।
যে নারীটি বা পুরুষটি জেনে শুনে পরকীয়া করছে, তাদের মনস্তাত্মিক গঠনটা বেশ জটিল। তারা জানছে তাদের এই পদক্ষেপটি আরেকজন মানুষের জীবনটা ওলট-পালট করে দিতে পারে। তাহলে কীসের নেশা তাদেরকে তেড়ে বেড়ায়!
আমার মনে আছে সেসব দিনের কথা, যখন আমার যত্ন করে সাজানো ঘরে আর কেউ থাকছে ভাবতে ভাবতে চিৎকার করে আর্তনাদ করতাম। বারবার অভিশাপ দিতাম! কিন্তু এই আমি বদলেছি নিজেকে, নিজের চিন্তাকে। বলা হয়, পরকীয়া যে মানুষটি করে সে একজন অসৎ মানুষ। কিন্তু কেন একজন মানুষ অসৎ হবে!
আমার এতো ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা আমাকে জানান দেয় যে, এই মানুষটি একজন অসহায় মানুষ, যে নিজেকে কখনো ভালবাসতে শেখেনি, শেখেনি দায়িত্ব নিতে, নিজের মনের কাছে, শরীরের কাছে, স্যাক্সুয়ালিটির কাছে পরাজিত একজন মানুষ। তাদের ভেতর আমি দেখি অসহায় একজন শিশুকে, যে খুব ছোটবেলায় কোন না কোন এবিউজের শিকার হয়েছে, কিংবা বড় হয়েছে ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায়, কিংবা হারিয়েছে বাবা- বা মা বা খুব প্রিয় কাউকে এবং নিজেকে প্রতারিত মনে করেছে। সেইভাবে তার মনস্তত্ত্ব গড়ে উঠেছে।
কথা হচ্ছে শিশুটি কি জানে যে তার ভেতরের অবচেতন মন তাকে কেমন করে বদলে দিল! না জানে না। আমাদের অবচেতন মন আমাদেরকে পঁচানব্বই ভাগ দখল করে আছে। আমরা কীভাবে কথা বলবো, কীভাবে হাঁটা চলা করবো, কাকে বন্ধু হিসেবে বা প্রেমিক- প্রেমিকা বা জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করবো, জীবনে কোন ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবো, সব ঠিক করে দেয় অবচেতন মন।
প্রতি সেকেন্ডে আমাদের স্নায়ু দুই মিলিয়ন সিগন্যাল পায় বাইরের পৃথিবী থেকে। সারাক্ষণ ভাইব্রেশন চলতে থাকে এবং আমরা সেখন থেকে পাঁচ কী দশটি জিনিস আমাদের চেতন মনে ধারণ করি। এই দুই বিলিয়ন সিগন্যাল থেকে যে পাঁচটি জিনিস আমি নিজের জন্য বেছে নিচ্ছি, সেটি কে ঠিক করে দিচ্ছে! ঠিক করে দিচ্ছে আমার অবচেতন মন। কীভাবে ঠিক করছে? ঠিক করছে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে যে ব্লুপ্রিন্ট এবং প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে আছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে।
যে শিশুটির ভেতরটা অস্থির, কমিটমেন্টের কোন প্রয়োজনীয়তা তার ভেতর তৈরি হয়নি বা যার মনস্তত্ব তৈরি হয়েছে যে, প্রতারণার বদলে প্রতারণা অথবা আমি তখন আমার জীবন কন্ট্রোল করতে পারিনি, এখন করবো এবং তা যেভাবেই হোক বা অন্যকে আমি কষ্ট দিব, কারণ আমি কষ্ট পেয়েছি; সে বড় হয়ে সেরকম আচরণ করা শুরু করে দিবে।

এক্ষেত্রে পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাবা-মা, শিক্ষক কেউ শেখায় না শেয়ার করা মহান। খুব কম বাবা-মাই আছেন যিনি বাচ্চা পরীক্ষার সময় অন্য একজনকে প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়ায় বাচ্চাকে চড়-থাপ্পড় দেয়ার বদলে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে, ওয়াও! যখন শিশুটি চড় খেলো অন্যের উপকার করার জন্য , সে কী শিখলো! কী প্রোগ্রাম তৈরি হলো তার অবচেতন মনে!
আমরা যারা প্রাণী বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি করেছি, তারা কত সহজে টিকটিকি, তেলাপোকা, ব্যাঙ ধরে এনে ওদেরকে জ্যান্ত অবস্থায় ব্যবচ্ছেদ করেছি। মনে হতে পারে খুব সহজ একটি কাজ। কিন্তু প্রতিটি শিক্ষার্থীর অবচেতনে এই ঘটনার অনুকূলে বা প্রতিকূলে একটি প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে যায়, তা তার পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বিশ্বাসের একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে দেয়।
আমাদের সমাজ, পরিবার, বাবা-মা ক্রমাগত আমাদের সন্তানদের স্বার্থপর ও লোভী হতে সাহায্য করছে। সেটা বাংলাদেশ, ইন্ডিয়াতে যেমন, পাশ্চাত্যেও তেমন। এক ভাই এর সন্তানরা বছরে দু’ তিনবার হলিডে তে যাচ্ছে, আরেক ভাই এর সন্তানরা স্কুলের ইউনিফর্মের জন্য চ্যারিটি শপে ঢুঁ মারছে।
আমরা বাচ্চাদের শেখচ্ছি না সাম্যতা, সহমর্মিতা। একসাথে যে ভাই-বোন বেড়ে উঠছে, তারাই আবার সম্পদের লোভে মরিয়া হয়ে একজন আরেকজনের চরম শত্রুতে পরিণত হচ্ছে। আপনি আমি যখন বস্তা ভরে বাজার করে রাস্তায় বসে থাকা ভিখারিটিকে পাশ কাটিয়ে যাই, বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাঁপতে থাকা গৃহহীন মানুষটিকে এড়িয়ে যাই এই ভেবে যে, এর দায়ভার আমি কেন নেবো! সে মুহূর্তে আপনার বা আমার হাতে ধরা শিশুটির ভেতরে প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডে কোন গৃহহীনকে খাবার দেয়া অপরাধ। তাই দিনশেষে সুপার মার্কেট বা খাবারের দোকানগুলো উচ্ছিষ্ট খাবারে পানি ঢেলে দেয়। একটা রাষ্ট্র তার নতুন প্রজন্মকে কী শেখাচ্ছে! প্লেজারিজমের ভয়ে কোনো শিক্ষার্থী একসাথে লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে না। একটা প্রচণ্ড স্বার্থপর, একাকিত্বে ভরা প্রজন্ম তৈরি করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
আমি যে শিশুদের নিয়ে বা বড়দের জন্য কাজ করি, তার একটা বড় অংশ স্কুলে বুলিয়িং বা র্যাগিং এর শিকার। এই কোমলমতি শিশুদের মধ্যে এতো হিংস্রতা কোথা থেকে উদয় হয়! আপনি যখন টেলিভিশনে ফিলিস্তিনে মানুষ মরতে দেখে পাশের বাড়ির হিন্দুর ঘর জ্বালিয়ে দেন, বা আমি যখন সিরিয়ার শিশুদের দুর্দশা দেখে এই সমস্যার সমাধান হবে না ভেবে চ্যানেল বদলে হিন্দী ‘আঁখ মারে হে লাড়কা আঁখ মারে’ দেখা শুরু করি, আমরা ভাবি না আমাদের পরবরতী প্রজন্মকে আমরা কী শেখাচ্ছি এবং কীভাবে দায়িত্ববোধ এড়িয়ে একজন আমি সর্বস্ব নীতিহীন মানুষ হিসেবে তৈরি হবার প্রোগ্রাম সেট করে দিচ্ছি!
আমরা ভুলে যাই, সবকিছুর চর্চা যেমন পরিবার থেকে শুরু হয়, তেমনি প্রয়োগও পরিরার থেকে। ফলে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু বান্ধব, সমাজ সবাই আক্রান্ত হবে। আমি অবাক হয়ে ভাবি এই যে আমার এতো ক্লায়েন্ট, ওদের তো টাকা বা খাবার বা কর্মসংস্থানের চিন্তা নেই, তাহলে কেন ভেতরে এই অস্থিরতা! বেশিরভাগ সময় তাদের অবচেতন মন থেকে যে উত্তর আসে তা হলো, বাবা–মা সময় দেয়নি, অথবা পারিবারিক বিচ্ছেদ অথবা খুব প্রিয়জনকে হারানো, বা খুব কন্ট্রোলিং বাবা-মা, ফলে ছোটবেলায় যা করতে ইচ্ছে করতো, তা করতে পারেনি, তাই বড় হয়ে তার সুদসমেত তুলে নেয়া!
নারী-পুরুষ এখানে বড় বিষয় নয়, বিষয় হলো সিস্টেম। মিতুর কথা আমি জানি না, তবে এইটুকু বলতে পারি, ওর শৈশব বা কৈশোর খুঁজলে পেয়ে যেতে পারেন ওর অতৃপ্ত জীবনের বা যাকে ব্যভিচার বলা হচ্ছে, তার পেছনে কোন হাহাকেরের গল্প, যা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সে নিজেও জানে না তার অস্থিরতার কারণ! যে ভালবাসা বা নিরাপত্তা বা গ্রহণযোগ্যতা তার জীবনে হারিয়ে গেছে, তা পেতেই হয়তো এই ছুটে চলা!
আত্মহত্যা! মানুষ কেন নিজের সবচেয়ে প্রিয় যে জীবন তা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে চায়! এটি একটি মানসিক রোগ। মানুষ খুব প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেললে মরে যেতে চায়। খুব বড় কোন বিপর্যয় ঘটলে বা অনেক শোক থেকে বা অনেক শক থেকে মস্তিস্কের মেডালা পার্ট জেগে ওঠে। মানুষ যখন নিজেকে পরাজিত মনে করে তখন মরে যেতে চায়। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল।
আত্মহত্যার চিন্তার এই প্রাথমিক ধাক্কাটা অত্যন্ত ভয়াবহ। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যায় এই সময়টাতে। কারণ নিজের মস্তিষ্কের ওপর তখন কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কর্ম সাবাড়। এই ধাক্কাটা সামলে যারা বেঁচে যায়, তারা পরিণত হয় আত্মহত্যার চিন্তার দাস! চলে যায় সারভাইবাল মোডে। প্রচুর পরিমাণ এড্রেনাল হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। মানুষ বাস করা শুরু করে মৃত্যু চিন্তা নিয়ে এবং আত্মহত্যার পরিকল্পনা করতে শুরু করে। ফলে অবচেতন মন শরীরকে জানিয়ে দেয় তুমি বিপজ্জনক অবস্থায় আছো। যে কোনো সময় তোমার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়া হবে।
শুরু হয় আদিম খেলা। সন্দেহ, ঘৃণা, হিংসা, জিঘাংসা, ইত্যাদি বেড়ে যায়। একটা পশু যেমন শিকারির ফাঁদে আটকা পড়লে মরিয়া হয়ে যায়, মানুষও এই পরিস্থিতিতে নিজের সঙ্গে সেরকম আচরণ করতে থাকে এবং আশেপাশের মানুষের সঙ্গেও। কেউ বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কেউ শুধু পরিকল্পনা করে, কেউ ফিরে আসে, কেউ ফিরে আসে না। দীর্ঘদিন চলার পর আত্মহত্যার চিন্তা একটা প্রবণতায় পরিণত হয়।
আমি নিজেকে অনেক ধন্যবাদ দেই যে আমি বিজয়ী হয়ে বীরের বেশে ফিরে এসে এখন অনেক মানুষকে সাহায্য করতে পারছি মৃত্যুর হিমশীতল হাতছানি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।
আত্মহত্যা যারা করে বা করার চেষ্টা করে, তাদের জন্য মানুষের সহানুভূতি কম থাকে। বিদ্রুপের চোখে দেখে। মানুষের একাকিত্ব যেমন বাড়ছে, আত্মহত্যার পরিমাণও তেমন বাড়ছে। মেয়েদের সংখ্যা বেশি। কিশোর কিশোরীর সংখ্যাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আমার সারাক্ষণ মনে হতো, সবকিছু শেষ! কোথাও কেউ নেই। ব্যক্তিত্বের গঠনে কিছু মানুষ শক্ত হয়, আবার কিছু মানুষ খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ে।
আমার মনে আছে আমি নিজের হাতে লাগানো ডেফোডিল গাছগুলোর ফুল ফোটা আর দেখতে পাবো না বলে কতো কান্না করেছি! এখন মনে হয় নিজের ইমোশনের কাছে কতো অসহায় ছিলাম আমি!
আকাশ নামের মানুষটি মরে গেছে। অনেকেই বলছেন সে কেন বিবাহ বিচ্ছেদ করে আলাদা হয়ে গেল না! মানুষের চারিত্রিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু মানুষ থাকে শামন ট্যাংকার, যারা সবকিছু ছিনিয়ে নিতে পারে, আবার কিছু মানুষ থাকে গাছের মতো, যারা বিলিয়ে দিতে পছন্দ করে; কিছু মানুষ থাকে লিডার, আবার কিছু মানুষ থাকে টিম প্লেয়ার। কিছু মানুষ থাকে সিংহের মতো গর্জন করে, আবার কিছু মানুষ থাকে যারা প্রক্রেস্টিনেটর (Procrastinator), যারা কিছুই করতে পারে না, করতে চায় না।
কিছু মানুষ কোনকিছুই ধরে রাখে না এবং নদীর মতো বয়ে চলে, কোন কিছুই ধরে রাখে না, আবার কিছু মানুষ হলো গাছের গুঁড়ির মতো, কোনকিছুই ছাড়তে পারে না। কিছু মানুষের জন্য অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ, আবার কিছু মানুষের জন্য নিজের এক পরিচয় থেকে বের হয়ে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হওয়া খুব কঠিন।
কিছু মানুষ থাকে যারা বদলানোর চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করে। আত্মহত্যার প্রবণতার মানুষদের আমার অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি তা হলো, শৈশবে এই মানুষগুলো খুব সমালোচনার ভেতর দিয়ে বড় হয়। ফলে নিজেকে নিয়ে তারা বেশ লজ্জিত থাকে। নিজের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কম থাকে। এই মানুষগুলো সেলফ হারমার হয় এবং নিজেকে আঘাত করে, নিজেকে শাস্তি দেয়।
এক্ষেত্রে আমার কাছে ক্লায়েন্ট এলে ডান, বাম, সামনের এবং পেছনের মস্তিষ্কের ওপর কাজ করা হয়। মস্তিষ্কের সারভাইবাল পার্টকে দমিয়ে অন্য অংশগুলোকে জাগিয়ে তোলা হয় যত দ্রুত সম্ভব। সেইসাথে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় খাবার, সাপ্লিমেন্টস এবং মাসাজ থেরাপি এবং অবচেতন মন পরিবর্তনের থেরাপি। তারপর একজন মানুষ চাইলেও আর মরে যেতে পারে না। চিন্তাগুলোই আর আসে না।
এটা বোঝা খুব জরুরি যে, কঠিন সময় আসবে এবং একে ধৈর্য সহকারে অতিক্রম করাটাই যুক্তিযুক্ত। যে মানুষগুলো আমাদের জীবনে ঝড় হয়ে আসে, তারা কোন না কোনভাবে আমাদের শিক্ষক হয়ে আমাদেরকে আরেকটি ধাপে নিয়ে যায়।
নিজেকে প্রশ্ন করা খুব জরুরি, আমি কেন এমন একটি মানুষ বা ঘটনাকে আকর্ষণ করলাম! আমরা Law of Attraction নিয়ে কথা বলি না বা জানি না। পৃথিবীতে আমরা তাই আকর্ষণ করি যা আমরা ভাবি বা বিশ্বাস করি। আমি নিজে এই নিয়ম পালন করি, অনেক ট্রেইনিং নিয়েছি, নিজের চিন্তা ও মস্কিষ্কের ফাংশনের ওপর অনেক কাজ করেছি। আমার জীবন বদলে ফেলেছি। আমার ক্লায়েন্টদেরকে সাহায্য করি। যে নারী বা পুরুষটি এসেছিল ভয়াবহ সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা নিয়ে বা ভয়াবহ মৃত্যু চিন্তা নিয়ে, তারা প্রত্যেকে কাজে ফিরে গেছে, সংসারে ফিরে গেছে, ক্যারিয়ার তৈরি করছে। আমরা ভুলে যাই খারাপ স্মৃতি মনের মধ্যে পুষে রেখে বা খারাপ চিন্তা করে অন্যের ক্ষতি চেয়ে আমরা অন্যের ক্ষতি করছি না, করছি আসলে নিজের ক্ষতি।
মিতু এবং আকাশকে নিয়ে দুটো দল হয়ে গেছে। ওরা এই কেন করেনি বা তারা সেই কেন করেনি। সত্য হলো আমরা কেউ তাদের জীবনটা যাপন করিনি। আমরা কেউ অন্যের জীবন যাপন করি না। আমরা জানি না একজন মানুষ কেন কোন মুহূর্তে কীসের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে থাকে।
আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমাদের নিজের বিচারে। আমরা কি নিজের ভেতর যে প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে ক্রমাগত, তার থেকে বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারি? না, পারি না। কেউ দেনমোহর নিয়ে কথা বলছে, তো কেউ পুরুষতন্ত্র নিয়ে। আমার প্রশ্ন হলো, আমরা জীবনকে কেন নানা তন্ত্র মেনে এতো জটিল করে ফেলছি!
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বিয়ে, যৌতুক, কোরবানির গরুর দাম, মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হয়ে আছে বহু বছর থেকে। মিতু আর আকাশের ঘটনাটি একটি মাত্র উদাহরণ হতে পারে। একজন বাবাকে কী পরিমাণ উপঢৌকন দিতে হয়, তা অবিশ্বাস্য এবং শিক্ষিত ছেলেরাই সংস্কৃতির নামে সেই উপঢৌকন নেয়। ফি বছর মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গরু এবং খাসি পাঠাতে হয় কোরবানির সময়। এটা রীতিমতো ত্রাস। মেয়েদের দেনমোহরও তাই এখানে বেশ চড়া। যদিও দেনমোহর দেবার নিয়ম বিয়ের প্রথম দিন, কিন্তু বাংলাদেশে তা কেউ করে না এবং একমাত্র তালাকের সময় দেয়া হয়। কিন্তু নিয়ম হলো তালাকের সময় সম্পদের সমান ভাগ করে দুজনকে দেয়া হবে। সেটা ক’জন করে! ক’জন শপথ নিতে পারবেন যে, আমি কোন যৌতুক নেবো না!
যদি ধর্ম মেনে বিয়ে করি তো দেনমোহর বিয়ের প্রথম দিনই দিয়ে দেব। নয়তো পরিবারকে, সমাজকে বলবো আমি এসব মানি না, আমি রেজিট্রি অফিসে গিয়ে করবো। একই কথা মেয়েদেরকেও বলছি। পারবেন বিয়ের সময় বাবা এবং শ্বশুর বাড়ির লোককে বলতে যে কোনকিছু আদান প্রদান ছাড়াই বিয়ে হবে! বেশিরভাগ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বিয়ের সময় লোভী জোঁকে পরিণত হয়। কে কার থেকে কতটুকু রক্ত চুষে নেবে তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখনই পরম্পরার কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে!
আরেকটি বিষয় এসেছে যে, মেয়ের আমেরিকান পাসপোর্ট থাকায় তার এতো অপকর্ম জেনেও তাকে ডিভোর্স দেয়া হয়নি আমারিকা যাবার লোভে। পাসপোর্টের লোভে বা বিদেশ যাবার লোভে নারী এবং পুরুষ দু’পক্ষই বিয়ে করে। ইংল্যান্ডে হাজার হাজার মেয়ে আছে, যাদেরকে বিদেশ আসার লোভে বিয়ে করা হয়েছে, বাচ্চা পয়দা করানো হয়েছে এবং পাসপোর্ট হাতে পাবার পর ফেলে রেখে চলে গেছে, আবার বিয়ে করেছে।
মিতু আর আকাশের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা কেউ জানে না। জানাটা খুব জরুরিও না। বিয়ে যদি পাসপোর্টের লোভে হয়েই থাকে, তাহলে তা শুধু কাগজের বিয়ে হয়েই থেকে যায়, বিয়ের সব কমিটমেন্টগুলো সমাজ আশা করলেও স্বামী-স্ত্রী এই ধরনের সম্পর্কের ঘানি টানতে টানতে নিঃশেষ হতে থাকে। কারণ তারা দুজনেই জানে, এখানে ভালবাসা বলে কিছু নেই, আছে শুধু আদান-প্রদান।
ক’জন মানুষ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে, আমি কোন লোভ-লালসা ছাড়া শুধু ভালবাসার কারণে বিয়ে করবো বা করেছি! নিজের কাছে আমরা ক’জন সৎ! আমি যখন পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গেলাম, তখন পুলিশকে বলা হলো, আমি ভিসার কারণে ওকে বিয়ে করেছি। পুলিশ সবকিছু তদন্ত করে দেখলো যে পাঁচ বছর আগেই ভিসা হয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু কিছু লেখা হলো। আর আমি তখন ঘরবাড়ি, স্বামী সংসার হারিয়ে নিজের সঙ্গে নিজের মৃত্যু কখন কীভাবে করবো তাই ভাবছিলাম, পারছিলাম না। নারী রেফুজে সারাক্ষণ সিসিটিভি, কর্মীরা এসে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছিল। পৃথিবীতে অনেক মানুষই রয়ে গেছে, যারা আসলেই সংসার করার জন্যই বিয়েটা করে থাকি।
এখন আমি পেছনে ফিরে তাকালে নিজের পিঠ চাপড়ে বাহবা দেই। আমার কাছে সফলতার সংজ্ঞা এই নয় যে আমি এক কাপড়ে শূন্য থেকে শুরু করে আমি আবার সব তৈরি করেছি, আমার কাছে আমি সফল, কারণ আমি একজন সৎ মানুষ। সেই কঠিন অবস্থাতেও নিজের মাথা, শরীর কিছুই বেচে দেইনি, চাইলে বাংলাদেশ থেকে নানানভাবে টাকা রোজগার করা যেত, কেননা বীরাঙ্গনা নিয়ে কাজ করছিলাম এবং তা ব্যবহার করে আমি তখন অনেক কিছু বাগাতে পারতাম, কিন্তু করিনি। কারণ বীরাঙ্গনাদের মতো অসহায় নারীদের নাম বেচে টাকা রোজগার করার চেয়ে আত্মহত্যা অনেক লোভনীয় ছিল আমার কাছে।
না খেয়ে ছিলাম বহুদিন, কারণ যে খাবার দেয়া হতো তাতে আমার বিড়ালের খাবারের মতো গন্ধ করতো, যেহেতু যে সংসারের জন্য সব উজাড় করে দিয়েছিলাম সেখান থেকে কিছু আনতে পারিনি, তাই হাতে কোন টাকা ছিল না, আর কাজে যাবার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। অনেক অনেক শক্তি নিয়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি, যা আমার কাছে মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় সফলতা।
আমি নিজেকে আরও সফল মনে করি এই কারণে যে, যারা পরকীয়া করে আমাকে অপদস্থ করেছে, তাদের ওপর আমার কোন রাগ বা ঘৃণা কিছু নেই। আমি অদেরকে ভালবাসি। খুব অবাক লাগতে পারে। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি, ঘৃণা শুধু ঘৃণাই বয়ে আনবে। ভালবাসা, ভালো চিন্তা বয়ে আনবে সুন্দর সুমিষ্ট অভিজ্ঞতা। আমি নিজের চিন্তাকে ব্যবহার করি সুস্থ চিন্তায়। তা দিয়ে আমার চারপাশ বদলে দিলাম।
আকাশ এবং মিতু আমাদের সামনে অনেক বড় দৃষ্টান্ত। ওদেরকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি না করে দেখুন তো আপনি নিজের ভেতরের কোন জিনিসটার সঙ্গে ওদের মিল পান! যদি আপনি আকাশকে সাপোর্ট করে থাকেন, তবে কেন করছেন? যদি আপনি মিতুকে সাপোর্ট করছেন, তো কেন? কোথায় নিজের যন্ত্রণার সঙ্গে মিল বা অমিল পাচ্ছেন! কীভাবে নিজেকে এর হাত থেকে উদ্ধার করবেন যেন বারবার একই অভিজ্ঞতা না হয়!
যারা খুব খারাপ ভাষায় লিখছেন, ভাবুন তো, কেন লিখছেন? কেন এরকম ভাষা আপনার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে! আক্রোশটা আসলে কার ওপর!
একবার তাকান তো আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে। ইগো দিয়ে নয়। সহানুভূতি নিয়ে তাকান। ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকান। দেখবেন, প্রত্যেকেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আছে। হাতটা প্রসারিত করে দেখেন তো ধরতে পারেন কিনা হাতটা! হাঁটতে পারেন কিনা কিছুটা পথ ওই মানুষটির হাত ধরে! দেখেন তো কতক্ষণ হাঁটতে পারেন কোন দোষ না ধরে!
ইমেইল: [email protected]
Website: http://www.angelichealingwithshahmika.co.uk/