শিল্পী জলি:
পরকীয়াও একটি প্রেম। যেটা অধিকতর জটিল এবং ক্ষতিকর। আর প্রেম মানুষ যতটা না করে তার চেয়ে হয়ে যায় বললে মানায় বেশী। কথা উঠেছে মিতুর পরকীয়ার কারণে আকাশের আত্মহত্যা নিয়ে। যেটুকু জানা যায়, তাতে একজন নয় দু’জনের সাথে মিতুর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। আবার বিয়ের আগেই তার একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক নিয়েও তথ্য রয়েছে।
বিয়ের সময়কার একটি ভিডিওতে দেখলাম মিতু বলছেন, আকাশকে তিনি ভাইফোঁটা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ বিয়ে লিখে রেখেছিলেন বলেই হয়তো দেয়া হয়ে ওঠেনি। তার এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় আকাশের প্রতি তিনি আকৃষ্ট ছিলেন না, তথাপি বিয়ে হয়েছে তাদের, কেন? এমন বিয়ের ভবিষ্যত কী সেটা আমাদের সামনে।
আকাশের বাবা ছিল না। তার মা অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছেন। সেখানে একটি বড় ক্ষত তার ছিল যেটা তার নিজের কথাতেই স্পষ্ট। মানসিকভাবেই হয়তো তিনি অসুস্হ ছিলেন, নইলে আত্মহত্যা করতেন না। আত্মহত্যা মানসিক অসুস্হতাই, সেটা যে কারণেই হোক না কেন।
মিতুই পৃথিবীতে প্রথম নারী নয় যিনি পরকীয়ায় মেতেছেন। তাও একজনের সাথে নয়, দু’জনের সাথে। সেই বিবেচনায় এটা যতটা না মানসিক প্রেম ,তার চেয়ে বেশি শারীরিক বিষয়।
বিবাহিত হলেও অনেক দম্পতিদের মাঝে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকে না, সেটিও একটি বিবেচ্য বিষয় এখানে। তখন হয়তো দম্পতিদের কেউ একজন যার/তার সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। কেননা বিয়ে করা যত সহজ, ডিভোর্স তত সহজ নয়। নানাবিধ চাপ থাকে ডিভোর্সে। সামাজিকভাবেই আমরা এখনও সহজভাবে ডিভোর্সকে এক্সসেপ্ট করতে পারি না। সেখানে যদি আবার ৩০/৪০ লক্ষ টাকার কাবিন ঝুলিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কথা ছিল যার যার সাধ্য অনুযায়ী কাবিন ধরা। এমন কী সাধ্য না থাকলে কয়েকটি খেজুরও নাকি হতে পারে কাবিন। সেখানে মেয়েদের পরনির্ভরশীল রেখে বিয়ের নামে বিয়েকে লক্ষ লক্ষ টাকার চুক্তির ফাঁদে আটকানো–না থাকে এ কূল, না থাকে ওকূল। বউ হারাবার শোক এবং টাকার শোক দু’টোই চাপে একই সাথে। ডিভোর্সকে আরও সহজ করা জরুরি। সেইসাথে মনে রাখা দরকার বিয়ে একটি চুক্তিই। একপক্ষ না চাইলেই যখন তখন ভঙ্গুরযোগ্য।
এমনও বিয়ে থাকে যেই বিয়েতে বছরের পর বছর কোন শারীরিক সম্পর্ক থাকে না। এমনকি শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পুরুষলোক বার বার বিয়ের কবুল পড়েন। কারও কারও কোনমতে দু’একটি সন্তানের জন্ম ঘটলেও অর্থাৎ ফার্টাইল হলেও (স্পার্ম কার্যকরি ) যৌন সম্পর্ক ঘটাতে অক্ষমতা চলে আসে। হয় ইরেকশন হয় না, অথবা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন ঘটে। এমন দাম্পত্য জীবন যারা বয়ে বেড়ান, তারাই বোঝেন বিষয়টি হ্যান্ডেল করা কতটা কঠিন ও ভয়াবহ। কেননা এমন পুরুষ যে শুধু শারীরিকভাবেই অক্ষম তাই নয়, মানসিকভাবেও তারা জটিল হয়ে উঠেন দিন দিন। এদের বেশিরভাগই নিয়মিত স্ত্রীকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করেন নিজের অপারগতার কারণে। তাদের চোখে তখন স্ত্রী’ই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তখন মেয়েটি ভালো হলেও তার আর তেমন কিছু করার থাকে না। কেননা আমাদের সমাজে নারী যতো সহজে তার অক্ষমতাকে মেনে নিতে শেখে, পুরুষ শেখে না।
আবার এমনও পুরুষ আছেন যারা ডিভোর্স হবার পরও প্রাক্তন স্ত্রীকে চেইজ করতে থাকেন। বিশেষ করে যদি স্ত্রী ডিভোর্সটি প্রোসিড করেন। এটা যতোটা না ভালোবাসার কারণে, তার চেয়ে বেশী প্রতিহিংসা পরায়ণতা জনিত। কেননা তারা ব্যর্থতা বা রিজেকশনকে মেনে নিতে শেখেন না। অথচ জীবনে চলার পথে ব্যর্থতা থাকবেই। আর ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমেই মানুষের সমৃদ্ধি আসে, কষ্টকে উপলব্ধি করে আরও মানবিক হয়ে ওঠে মানুষ।
বিয়ে হলেও নারীপুরুষ দু’টি আলাদা সত্ত্বাই কেউ কারও প্রোপার্টি নয়। আর বিয়ে কোন চিরস্হায়ী চুক্তি নয়।