টুপি তৈরি করে স্বচ্ছল ৬ হাজার নারী

Bangladeshi women making capউইমেন চ্যাপ্টার: লক্ষীপুরের চরাঞ্চলের নারীরা আর পরিবারের বোঝা নয়। কিংবা ঘরের রান্নার কাজেও তারা সীমাবদ্ধ নন। তারাও কাজ করে হতদরিদ্র পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেন। দারিদ্র্যকে জয় করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন।

‘ওমানি’ টুপি তৈরি করে পরিবারের দারিদ্র্য নিরসনে অবদান রেখে এটা প্রমাণ করলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনার উপকূলীয় চরাঞ্চল মতির হাট কোডেক কলোনী, মাতব্বর হাট, চরফলকন, সাহেবের হাট, চর জগবন্ধু, চর লরেন্স ও কাদির পন্ডিত হাট এলাকার প্রায় ছয় হাজার নারী।
বর্তমানে ওই নারীদের হাতে অসাধারণ বুননে টুপি তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। এখানে তৈরিকৃত টুপির অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের ওমানসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে। আর চরাঞ্চলের হতদরিদ্র নারীদের এ ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা।
সরকারি বা দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় চরাঞ্চলের আরো বহু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার কাদির পন্ডিতের হাট এলাকার মিজান ২০০৩ সালে স্থানীয় অবহেলিত নারীদের নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন। পরে এ ব্যবসায় এগিয়ে আসে মেঘনা বহুমুখি উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠন, কাদির পন্ডিতের হাটের সিরাজ, মাতব্বর হাটের শাহজাহান, চলফলকনের জসিম, মহিউদ্দিন, সাহেবের হাটের তাজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা। এখানে তৈরীকৃত টুপির অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে রফতানি হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এ টুপিগুলো ‘ওমানী টুপি’ নামে পরিচিত।
শুরুতে টুপি তৈরিতে ৭০/৮০ জন নারী কাজ করলেও বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার নারী এ কাজে জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে নিয়মিত কাজ করে নারীরা তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে অবদান রাখছেন। এ নারীদের অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। সংসারে কাজের ফাঁকে মহিলারা টুপির কাজ করে হতদরিদ্র পরিবারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। ছাত্রীরা লেখা-পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি বুনে বাড়তি রোজগার করছে।
কাদির পন্ডিতের হাট এলাকার গৃহিনী শাহনাজ জানান, টুপিতে তাদের পুঁজি খাটাতে হয় না। উদ্যোক্তারা বাড়িতে টুপির উপকরণ দিয়ে যান। তারা শুধু তৈরি করেন। এ কাজ গ্রামের অন্য এক নারীদের কাছ থেকে তিনি দেখে শিখেছেন। তার স্বামী পেশায় জেলে। স্বামীর উপার্জন কম হওয়ায় সংসারে অভাব অনটন ছিল। টুপি তৈরির কাজ করায় তার সংসারের দারিদ্র্য দূর হয়েছে।

মাতব্বর হাটের গৃহিনী নাজমা বেগম জানান, তার অভাব অনটনের সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে টুপি। টুপি তৈরি করে মাসে তিনি আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করছেন।

কাদির পন্ডিতের হাট ইসলামিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মনোয়ারা বেগম জানায়, সে দুই বছর যাবত পড়াশোনার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ করে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করছে।
এই এলাকার টুপি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, টুপি তৈরির সকল সরঞ্জাম উদ্যোক্তারা নারীদের মাঝে সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিটি টুপি তৈরি বাবদ নারীদের ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা দেয়া হয়। আর ফেনী ও ঢাকায় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি হয়।
জানা গেছে, শুরুতে টুপি তৈরী, ডিজাইন মহিলাদেরকে শিখিয়ে দিলেও বর্তমানে মহিলারা নিজেরাই একজন অন্যজনের কাছ থেকে দেখে তা তৈরী করছেন।
স্থানীয় চর লরেন্স ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফ উল্যাহ বলেন, টুপি তৈরি করে এ এলাকার অসংখ্য নারী তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। মেঘনা বহুমুখি উন্নয়ন সংস্থা দুস্থ ও হতদরিদ্র নারীদের এ সুযোগ করে দিয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল বলেন, চরাঞ্চলের দুস্থ ও হতদরিদ্র নারীরা অসাধারণ ডিজাইনের টুপি তৈরি করছেন। সেই টুপি দেশের বাইরে যাচ্ছে। নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

(লেখাটি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে নেয়া)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.