প্রতারিত হলেই কি আত্মহত্যা করতে হবে?

ফারজানা আকসা জহুরা:

একটি মেয়ে প্রতারিত হয়েছিল তার স্বামীর দ্বারা। আমাকে যখন তখন ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে বলতো, আপু আমার খুব খারাপ লাগছে, তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি? আমি বুঝতাম তার ভিতরে ক্ষরণ, তাই দিনের পর দিন; মাথা ব্যথা, ঘরের হাজার কাজের মধ্যেও ধৈর্য ধরে তার কথা শুনতাম। অনেকটা আবেগহীন হয়েই শুনতাম। হায়রে কষ্ট! কী কষ্টের গান গাইতো সে!

ভালোবেসে বিশ্বাস করে প্রতারিত হওয়ায় ঘটনা নতুন কিছু না। জীবনে বহুবার আমাদের বহু কারণে প্রতারিত হতে হয়। আমাদের বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া হয়। তবুত্ত আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি। ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি।

হ্যাঁ, মেয়েটা বোকা ছিল। আমি তাকে বহুবার বলেছি, তুমি যেটা করেছো সেটা একটা বোকামি! মস্তো বড় ভুল! বিদেশী পাত্র দেখে এতো দ্রুত কেউ বিয়ে করে? আর তোমার মা বাবা কেমন? তারা চিন্তা ভাবনা করলেন না? তোমাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে এলেন? তাও সব খরচ নিজেরা বহন করে? কী দরকার ছিল ওমন বিয়ের? দুই একমাস পাত্রের সাথে একত্রে থাকার পরে, হঠাৎ জানলে সব ভুল! তোমাদের বিয়ের কোনো আইনের ভিত্তি নেই! তুমি বিচার পাবে না! স্বীকৃতি পাবে না! সামান্য দেনমোহরের পাঁচ লক্ষ টাকা, তাও পাবে না! এটা তো কোনো বিয়ে ছিল না! ছিল প্রতারণা! তবুও তুমি বিবাহিতা! হায়রে প্রেম!

জানেন, প্রচণ্ড রাগ হতো মেয়েটির উপরে। তাই সুযোগ পেলেই বকাবকি করতাম। আচ্ছা, কোনো মেয়ে কি তার সর্বোচ্চ পড়াশোনা শেষ করে, এমন বোকামি করতে পারে? আর তার বাবা মা?

কিন্তু মেয়েটি আমার বকাবকি শুনতো। ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতো। নিজের ভুল বোঝার চেষ্টা করতো। নিজের ভুল সংশোধন করা খারাপ কিছু না, কিন্তু সেই ভুলের দায়ভার অন্যের কাঁধে চাপিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা! হাস্যকর! বড় ধরনের বোকামি।

এতো বড় প্রতারণার শিকার হয়েও মেয়েটি আজ বেঁচে আছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে! চাকরি করে। নিজের টাকায় নিজে খায়, হাসে, প্রাণভরে ঘুরে বেড়ায়, সে বাঁচতে চায়। কিন্তু তার বিয়ে নামের সেই চুক্তি? যার কোনো আইনের ভিত্তি নেই, অথচ তা তার জীবনে অভিশাপ হয়ে বারবার ফেরৎ আসে। কারণ সে মেয়ে! এই সমাজে মেয়েদের সতী থাকতে হয়! স্বামীর টাইটেল থাকতে হয়! আরো কতো কী!

আর ঐ যে পুরুষ? যে তাকে বিয়ে করে যৌন সম্পর্ক করে, পরে তা অস্বীকার করে, আবার নতুন মেয়ে বিয়ে করে যৌন জীবন যাপন করে! তার খাতা কলমে বিয়ে দরকার পড়ে না! সে কিন্তু ভালো ছেলে! ভদ্র ছেলে! সে তার নতুন বউ বা বান্ধবীর ছবি নিয়মিত ফেসবুকে আপলোড দেয়!

আর ঐ লোকগুলি, যাদের কাছে মেয়েটি সাহায্য চেয়েছিল? তারা তো যে যেভাবে পারে সুযোগ নিতে চেয়েছিল! কোথায় যেত মেয়েটা? ঐ যে ঐ লোকটা, যার বউ আছে, একটা মেয়ে আছে, যে তাকে রাতে রাতে ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে বলতো, তার শয্যাসঙ্গী হলে স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে আনবে! তিনি এখন হজ করে হাজি হয়েছেন! ফেসবুকে বাণী প্রচার করেন!

আর এতো এতো খারাপ মানুষের ভিড়ে যে মেয়েটি হারিয়ে যাচ্ছিল, সে কিন্তু তার ভুল বোঝার চেষ্টা করেছে, নিজে সাবধান হয়েছে। নিজেকে সংশোধন করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

এই মেয়েটিও বহুবার আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করেছে, কিন্তু আত্মহত্যা করেনি। সবাই আত্মহত্যা করে না। অনেকেই নিজের ভুল স্বীকার করে, নিজেদের সংশোধন করে এগিয়ে যায়। নিজেকে ভালোবাসে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.