আমেনা বেগম ছোটন:
আজ সকালে একটি সুইসাইড নোটের ফেসবুক পোস্ট এবং সুইসাইডের খবর শুনলাম। শুরু থেকেই গা গুলাচ্ছে। আর সব মানুষের মতো মেয়ে হয়ে কেমনে এমন করলো টাইপ চিন্তা আমার মাথায় আসেনি। অপরাধী, যৌনতা, পরকীয়া, এগুলোর কোন ছেলেমেয়ে হয় না। মেয়েরা কোন অপরাধ করতেই পারে না এ জাতীয় উদ্ভট স্বজনপ্রীতি আমার নেই। অপরাধ করতে না পারার কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য নারীদের নেই, পুরুষের তুলনায় কম করে এই যা। এতেও যদি পক্ষপাত দেখেন, তাহলে বলবো, সংসার, সন্তান ইত্যাদি সামলে অপরাধ করার মতো যথেষ্ট সময় সুযোগ নেই বলে নারীর অপরাধের মাত্রা কম। এই সপ্তাহেই আরেকজন নারী স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাকে মেরে টুকরো করে ওয়ারড্রোবে ভরে রেখেছে, এটিও অপরাধ। অত্যাচারী স্বামীর কাছ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুনখারাবি হতে পারে না।
ঠিক কবে থেকে মানুষ পরকীয়া শুরু করেছে আমার তেমন ধারণা নেই। যা লিখতে বসেছি তার জন্য পরকীয়ার ইতিহাস অধ্যয়ন জরুরি না। তবে বেশ পুরনোই ব্যাপার টা, এই যেমন ধর্মগ্রন্থে নিয়ম আছে, যদি স্ত্রী তার লজ্জাস্থান হেফাজত না করে, তার শয্যা আলাদা করো, তালাক দাও,, ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করো, ইত্যাদি সব আইন কানুন ছিল। গ্রামাঞ্চলে এখনো মাঝেমধ্যে এ ধরনের শাস্তি প্রচলিত, যদিও সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরীব নির্যাতন ছাড়া কিছু নয়।
তো, এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটলে ফেসবুকে উইমেন চ্যাপ্টারকে গালাগাল করাটা যেন একটি প্রত্যাশিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বছর দুই বা তিনেক আগে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল পরকীয়া নয়, স্বকীয়া টাইপের। তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছিল, মানসিক মিল না হলে যেকোনো প্রেমই হতে পারে, পরোক্ষভাবে পরকীয়ার প্রতি অনেকটাই সাফাই গাওয়া হয়েছে, যদিও উইমেন চ্যাপ্টারের প্রতিটি পোস্টের নিচে লেখা থাকে ‘মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়’।
এরপর বহুকাল চলে গেছে, দেশ ও জাতি উইমেন চ্যাপ্টারের হাজার হাজার নৈতিক, উপকারি পোস্টের ভিড়ে এই পোস্টকেই মনে রেখেছেন, যেকোনো পরকীয়া সংক্রান্ত ঘটনায় মেন্টোসের বুদ্ধির বাত্তির মতো তাদের মনে জ্বলে উঠে সেই পোস্টটির কথা, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক ওই পোস্টটির কারণেই দেশে আচমকা মহামারী আকারে পরকীয়া লেগে গেছে, এর আগে দেশের মেয়েরা একেবারে সতী লক্ষ্মী ছিল!
আত্মহত্যাকারী ডা. আকাশের স্ত্রী কি সেই পরকীয়া নয় স্বকীয়া পোস্টটি পড়েই লাগাতার প্রেম শুরু করেছেন? প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী যে পরকীয়ার সাক্ষী মিটাতে নিজের সন্তানকে লেপমুড়ি দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিল, সেও কি উইমেন চ্যাপ্টারের সাবস্ক্রাইবার?
অপরাধী অপরাধীই। বাংলাদেশে যদিও সামাজিক বহুবিধ কারণে মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে, বিদেশে দেখা যায় বিনা কারণে ঘরের সভ্যভব্য ভদ্রলোক সবার অগোচরে সিরিয়াল কিলার হয়, বাচ্চাদের নির্যাতন করে শুধুমাত্র তার মানসিক বিকৃতির কারণে। দুনিয়ায় এমন কোনো শক্তিশালী নিউজ পোর্টাল নেই যার কথায় প্রভাবিত হয়ে লোকে অপরাধ করবে বা ভালো হয়ে যাবে। উইমেন চ্যাপ্টার অতখানি ক্ষমতাধর হলে শিক্ষায়, সামর্থে, শারীরিক, মানসিক সক্ষমতায় মেয়েদের উজ্জীবিত করতো। পরকীয়া নয়। আরেক লোকের বউয়ের পরিচয় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের মনস্কামনা পূরণ করার মতো ছোটলোকিকে গ্লোরিফাই করার কোন দরকার নারীবাদের দরকার নেই। এটি নারীবাদের উদ্দেশ্যও নয়।
ডাক্তার আকাশের মৃত্যু এখন একটি ইউডি কেস, এর তদন্ত হবে, অপরদিকেও যদি কোনো কথা থাকে, সেটিও বেরিয়ে আসবে।
স্বামীর অত্যাচারে আত্মহত্যা করাটা কোনো মেয়ের জন্য মুক্তির উপায় নয়, স্ত্রীর অবিশ্বস্ততায়ও নয়। তবু এটা মানুষের মন, যা করা দরকার সব সময় তা করা সম্ভবও হয় না। ডা. আকাশের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইলো।