যৌনবিকৃতি দেশে দেশে একই রকম

অনন্য আজাদ:

কয়েক মাস আগে আমার সাথে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এক জার্মান ভদ্রলোক আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছেপোষণ করে থাকেন। আমি অস্বীকার করলেও তিনি কয়েকবার আমার শরীরে হাত বুলিয়ে থাকেন। ব্যাপারটি আমার কাছে খুবই নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল বলে মনে হয়।

তিনি আমাকে এমন কিছু কথা বলেন, যে কথাগুলো আমাদের দেশের পুরুষেরা প্রতিনিয়ত নারীদের উদ্দেশ্যে বলে থাকেন। সেই-সব বাক্যগুলো যখন আমার উদ্দেশ্যে বলা হয় তখন আমি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম হই, আমাদের দেশের নারীরা কতোটা জঘন্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানসিক-ভাবে লড়াই করে বেঁচে থাকেন। যৌনবিকৃত মানুষ শুধু যে অনুন্নত দেশে বা অশিক্ষিত সমাজে’ই বস্তায় বস্তায় পাওয়া যায় তেমন নয়, উন্নত ও আধুনিক সমাজেও এদের সংখ্যা প্রচুর।

তিনি আমাকে প্রথমে বলেন, আমার শরীরটি চমৎকার। তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জিজ্ঞেস করেন, জিম করি কি না? যখন বলি, সপ্তাহে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার সাইকেল চালাই, তখন তিনি আমার শরীরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলতে থাকেন-এশিয়ার পুরুষের পেট(ভুঁড়ি) নেই, অবিশ্বাস্য! এতো ফিট শরীর দেখে লোভ লাগছে। তোমার সোলডারটা দারুন ইত্যাদি।- বাক্যগুলি শুনে খুবই অপ্রস্তুত হয়ে যায়।

অনন্য আজাদ

ভদ্রলোকটি আমার উদ্দেশে বলেন, তার আমাকে খেতে ইচ্ছে করছে- বাক্যটি শুনে আমার সারা শরীর ঘিন্নাতে কেঁপে ওঠে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি যদি স্ট্রেট হয়েই থাকি তাহলে আমার কেন বর্তমানে কোন প্রেমিকা নেই? প্রতি উত্তরে যখন বলি, কয়েকমাস আগেই আমার প্রাক্তন ভারতীয় প্রেমিকা আমার টাকা পয়সা নিয়ে ভেগেছে। এই কারণে আপাতত প্রেম-ভালোবাসা থেকে দূরে। নিজেকে সময় দেওয়াই জরুরি বোধ করছি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু তোমার প্রেমিকা নেই, সেহেতু তুমি গে’।

তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি কয়টা মহাদেশ খেয়েছি? প্রশ্নটি শুনে আমি ঢোক গিলি। তিনি বলেন, তিনি আমেরিকা মহাদেশ খেয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ খেয়েছেন, ইউরোপ মহাদেশ খেয়েছেন, আফ্রিকা মহাদেশ খেয়েছেন। কিন্তু এশিয়া মহাদেশ এখনো জয় করতে পারেন নি। আমাকে খেলে তিনি এশিয়াও দখল করে নিতে পারবেন। ভদ্রলোকের প্রতিটি শব্দ, বাক্য, যুক্তি শুনে বুঝতে পারি তিনি একজন অসুস্থ, বিকৃত চিন্তাধারার মানুষ।

আমাদের দেশে যে-সকল শিশুরা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পড়েন ও থাকেন তাদের সাথে এই-ধরনের ঘটনা সবচে’ বেশি ঘটে থাকে। এমনকি পরিবারের অনেক সদস্যদের দ্বারাও তারা শারীরিক হেনস্তা, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু, বড় কর্তার ভয়ভীতির কারণে তা প্রকাশ করতে পারেন না। আবার, অনেক শিশুকে মৃত অবস্থাতেও উদ্ধার করার ঘটনা লক্ষণীয়। পরবর্তীতে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জার্মানিতেও ধর্মপ্রাণ অসুস্থ, বিকৃত ফাদার ও ব্রাদারের দ্বারা শিশুনির্যাতনের ঘটনা শোনা যায়।

এই একদিনের ঘটনার জন্য আমি তিনদিনে তিনবার বমি করি। তাহলে আমাদের দেশের নারীরা জীবনে কতোবার বমি করে বা কীভাবেই হজম করে নেয়?

শেয়ার করুন: