#MeToo: মানবাধিকার কর্মী আপাদের বলছি …

আলফা আরজু:

প্রিয় খুশী কবির, সুলতানা কামাল ও নাসিমুন আরা হক মিনু আপা,

আপনাদের প্রতি আমাদের আজীবনের শ্রদ্ধা, আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে এখন আমি খুব বিপাকে আছি। আপনাদেরকে অন্ধভাবে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-আস্থা’র খেসারত আমাদেরকে এতো নগ্নভাবে দিতে হবে বুঝতে পারিনি।

ছোটবেলা থেকেই জানতাম আপনারা কেউ মানবাধিকার কর্মী, কেউ দুর্দান্ত সাংবাদিক, কেউ নারী অধিকার/উন্নয়নকর্মী ইত্যাদি দারুণ দারুণ সব ব্যাপার আপনাদের নামের পাশে। এবং জেনেছি – আপনাদের হাত ধরেই আমরা অনেক দূর যাবো। কোথাও কোথাও আপনারা আমাদের ঠিকই নিয়ে গেছেন। সেইসব যে শুধু – গোলটেবিল, বিদেশী ফান্ডের জন্য কর্মযজ্ঞ – তা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেলো মনে হয় (!!!)।

এখনো একটু একটু বুকে আশা জাগে, প্রতিদিন ঘুম ভেঙে – সবার আগে পত্রিকার পাতায় নজর বুলিয়ে যাই, ফেসবুকের নোটিফিকেশন্স গুলো দেখি, ইমেইল চেক করি- কোথাও যদি একটু আশার আলো থাকে।

#মিটু অভিযুক্ত সাংবাদিক প্রণব সাহা

ওহ…হ্যাঁ, আপনাদের ডায়েরির পাতায় কোথাও কি সেই schedule আছে – যে আপনারা – একজন টেলিভিশন সাংবাদিক কর্তৃক শিশু যৌন নির্যাতনের ব্যাপারে আমাদেরকে ‘আলু/মুলা অথবা আলো দেখিয়েছিলেন” সেই সাংবাদিক প্রণব সাহা’র কর্মস্থল ডিবিসি পরিদর্শন করে।

তারপর কি আপনারা আর কোনো ‘ফলোআপ’ করেছিলেন?

নাকি আপনাদের দৈনন্দিন কর্ম তালিকায় এতো এতো গোলটেবিল, চোখা টেবিল, ত্রিকোনিও টেবিল টক্ এর ফাঁকে – সেই ছোট্ট শিশুটি হারিয়ে গেছে?

সেই শিশুর বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আপনাদের মনকে নাড়া দেয় না! কারণ আপনারা সবাই খুব সুরক্ষিত জীবনযাপন করেছেন। আপনাদের কারোর কোনো যৌন নিপীড়ণের অভিজ্ঞতা নেই!

তাই আপনাদের এই উপলব্ধি হয়নি। একজন টিনএজ বাচ্চা অথবা যেই কোনো বয়সে অযাচিত যৌন স্পর্শগুলো ঠিক কেমন লাগে! সেই স্পর্শগুলো কীভাবে একেকজনের জীবন বিপর্যস্ত করে দেয়! কীভাবে একজন মানুষের/নারীর জীবনের সকাল-বিকালগুলো পাল্টে দেয়!

আপারা, জী….আপনাদেরকেই বলছি, কয়দিন আগেও যখন একজন নারী সাংবাদিককে এক বিকারগ্রস্থ সম্পাদক ও প্রকাশক “চরিত্রহীন” বলেছিলেন- আপনারা ১০১ জন নারী এক/দুই রাতের মধ্যে একত্রিত হতে পেরেছিলেন। স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন – প্রতিবাদ করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

সেইসব যৌথ আন্দোলনের ফল স্বরূপ এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে – “একজন নারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলার” বিচার নিশ্চিত হয়েছিলো। সেই লোককে কারাগারে পর্যন্ত যেতে হয়েছে শুধু এক মুখের কথার পরিপ্রেক্ষিতে।

গত এক মাস ধরে দেশের বেশ কয়েকজন নারী তাদের জীবনের বিভীষিকাময় অধ্যায় জনসমুখে এনেছেন। সেই অধ্যায়গুলো ওই ‘চরিত্রহীন’ শব্দের কাছে হেরে গেল? আপনারা যারা নারী অধিকার-মানবাধিকার-সাংবাদিক অধিকার আদায়ের মুরুব্বীর দায়িত্বে আছেন, আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছেন, আপনারা যাতে তাঁদেরকে একটু সহযোগিতা করেন।

বছরের পর বছর টেনে বেড়ানো ‘যৌন নিপীড়ন’ এর বিচারের আশা তো অনেক দূরের ব্যাপার, আপনারা কেউ পাশে আছি, এই কথাগুলো বলতে পারছেন না।

সাংবাদিক প্রণব সাহার ব্যাপারে আপনারা বিচারের উদ্যোগ নিবেন বলেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যাপারে আপনাদের এখনো কোনো ‘উচ্চবাচ্য’ করতে দেখলাম না।

কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের দ্বারা যৌন নিপীড়ণের শিকার কেউ কারোর কাছে বিচার চাইতে পারছেন না।

আসলে বিচারের আশায় কেউ #মি টু লেখেনও না।

কিন্তু যখন কোনো প্রতিষ্ঠান নিজে উদ্যোগ নিয়ে বলে – “যৌন হয়রানির ব্যাপারে শূন্য টলারেন্স দেখাবেন” – তখন একজন নিপীড়িতের বুকে আশা জাগে। একটা দৃষ্টান্তের অপেক্ষা করে। একটা নতুন প্রভাতের আশায়। শুধু একজন যৌন নিপীড়কের বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে – লুকিয়ে থাকা অন্য নিপীড়করা যেনো শিক্ষা নেয় ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন আচরণ করে।

পাদটীকা: “যৌন নির্যাতন” কোনোদিন কি “চরিত্রহীন” শব্দের মতো শক্ত হবে?

যাতে, বড় বড় সাংবাদিক পীরেরা/নারী অধিকার কর্মী/মানবাধিকার কর্মীরা/উন্নয়ন কর্মীরা/নারীবাদী/মানবতাবাদীরা/সুশীলরা/রাজনীতিবিদরা বলবে – পাশে আছি।

#MeToo in Bangladesh….

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.