অদ্ভুত উটের পিঠে আমাদের সন্তানেরা

ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী:

আমি একজন সাধারণ অভিভাবক। আমার দুই সন্তানের কেউই ক্লাসে প্রথম হয় না। তা নিয়ে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। স্কুলের পড়ার বাইরে ওরা প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসে। খেয়ালখুশি মতো ছবি আঁকতে ভালোবাসে। বড় কন্যা লিখে আনন্দ পায়। ছোটজন সময় পেলেই নিবিষ্টচিত্তে মিনিয়েচার শিল্পকর্ম তৈরি করে। তার গানে মুগ্ধ হয়ে আমার মা তাঁর অনেক সাধের, প্রিয় হারমোনিয়ামটা তাকে দিয়ে গেছে।
কোনো প্রতিযোগিতার চাপ ওদের নেই। যতটুকু চর্চা করে, মনের আনন্দে করে।

ছায়ানটে পাঁচ বছর নাচ শেখার পরে স্কুলের পড়ালেখার চাপে ওদের আর নিয়ে যেতে পারিনি। কেননা পড়ার ইশকুল এবং নাচের ইশকুল উভয় প্রতিষ্ঠানেই সীমাহীন কড়াকড়ি। উনিশ থেকে বিশ হলে ছাড় নেই। বাচ্চারা যে শিখতে গেছে, সেদিকে খেয়াল করার কারো সময় নেই। নম্বর আর পাশ-ফেল নিয়ে নাজেহাল বাচ্চাগুলো। অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহার করাটাও অনেকের কাছে আধুনিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মনে আছে, রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার দিন বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। সারাদেশ শোকে স্তব্ধ। সেদিনই নাচের ইশকুলে বেতনের স্লিপ জমা দেবার শেষ তারিখ। ব্যাংকে টাকা জমা দিলেও স্লিপটি অফিসে জমা দেয়া বাকি ছিল আমার। কর্তৃপক্ষকে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে সময় চাইলে, ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে রুক্ষভাষী ভদ্রলোক জানান, একদিনের বেশি সময় দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এতোদিন কোথায় ছিলেন? ”

রূঢ় শোনালেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মোড়ল – মাতব্বর বা পীর-আউলিয়া গোছের কিছু মনে করে নিজেদেরকে।
বাড়ির ধারেকাছে কোনো ভালো নাচ বা গানের ইশকুল নেই যে ওরা ভর্তি হতে পারে। যান্ত্রিক এই শহরে কিছু নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া পাড়া- মহল্লায় শিশু-কিশোরদের জন্য যথাযথ সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, পাঠাগার নেই – এ ব্যর্থতা আমাদেরই।

ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী

শিক্ষা ব্যবস্থায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষার নামে কী যে এক বাড়তি বোঝা ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বোঝানো যায় না। পড়া গিলতে গিয়ে খাবার গেলার সময় পায় না বাচ্চাগুলো।
মাঝে-মধ্যে আমিই বিরক্ত হয়ে বলি, বাদ দে তো!আর পড়তে হবে না। কোচিং-বাণিজ্য নিয়ে শিক্ষক সম্প্রদায়কে একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই। ক্লাশে প্রথম হওয়া ছাত্রীদের মায়েদের অনেকেই মৌমাছির মতো শিক্ষকদের পেছনে ঘুরে বেড়ায়।

সচরাচর না হলেও স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কখনো কথা হলে পড়ালেখার বাইরে আমি ওদের আচরণ সম্পর্কে শুনতে আগ্রহী হই। এখন পর্যন্ত ইতিবাচক মন্তব্যই পেয়েছি। শিক্ষকের আন্তরিকতা, উদারতা, স্নেহশীল আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। তেমনি এর বিপরীত কিছু দেখলে আশাভঙ্গ হয় স্বাভাবিকভাবেই।

শিক্ষক-অভিভাবক সভাতে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করি। সেখানে শুধু পাশ-ফেল আর কম নম্বর বেশি নম্বর নিয়ে আলাপ-আলোচনা ঘুরপাক খায়। বড়জোর স্কুলের অস্বাস্থ্যকর ওয়াশরুমের সমাধান চেয়ে আমরা মায়েরা কেউ কেউ কথা বলে থাকি। একবার আমি বললাম যে, আমাদের বাচ্চারা কৈশোরে পা দিচ্ছে। মানসিক-শারীরিক পরিবর্তনে ওরা একাকীত্বে ভুগতে পারে। এমন অনেক কথা থাকতে পারে যা হয়তো মা- বাবাকে বলতে ভয় পাচ্ছে, শিক্ষককে বলতে সংকোচ বোধ করছে। তাই ওদের সাথে আমাদের আরো বন্ধুত্ব হওয়া উচিৎ। স্কুলে কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এমন কোনো সেল গঠন করা যায় কিনা যেখানে ওরা ওদের মনের কথাগুলো বলতে পারে, সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে পারে, ওরা ঘরে-বাইরে কোথাও হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার কিনা বলতে পারে – মোট কথা ওদেরকে যেন আমরা শুনতে পাই তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা।
কথাগুলো বলার সময় বুঝতে পারি, অভিভাবক মহল অস্বস্তিতে ভোগে, গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে কথা বলায় নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আমাকে দেখে। নিজেকে অনেকটা ভিনগ্রহ থেকে আসা এলিয়েন মনে হয় আমার। সেসময় দিবা শাখার যিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন, “বাচ্চাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা, আমরা শিক্ষকরা তাদেরকে শুনে থাকি” ইত্যাদি দায়সারা গোছের উত্তর দিয়ে তড়িঘড়ি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান।

আমার কন্যাদ্বয় মানবিক বিভাগে পড়তে আগ্রহী। তাদের বাবা এবং আমার এতে পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু স্কুলের মূল শাখায় মানবিক বিভাগ চালু থাকলেও এই শাখায় মানবিক বিভাগে পড়া যাবে না। কয়েকবার এ নিয়ে কথা বলে আবারও নিজেকে এলিয়েন মনে হবার অভিজ্ঞতা হলো। দুই- চারজন ছাত্রীর জন্য তারা মানবিক বিভাগ খুলবে না। একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে এই সিদ্ধান্তের সাথে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রত্যেক ছাত্রের ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ হওয়া কী কাম্য নয়?
আমরা হয়তো ভাবছি, দু’চারজন ছাত্রী অরিত্রী হলে শিক্ষকদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু নির্মম সত্যটা হলো, অনেক অভিভাবককে স্কুলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কানাঘুষো করতে শুনলাম, “অরিত্রী কেন মোবাইল নিয়ে এসেছিলো, এমন মেয়ের জন্য সবার ভোগান্তি!”

অন্যের সন্তান দোষ করলে আমরা বাবা-মায়েরা সাধু হয়ে বিচার করতে বসে যাই যেন আমার ঘরের টিনএজার বাচ্চাটির কখনোই কোনো অসংগতিপূর্ণ আচরণ আমাদের চোখে পড়েনি!
যারাই অন্যের বাচ্চার সমালোচনায় মুখর, তারাই আবার স্কুলের ক্লাসপার্টিতে কোমলমতি মেয়েগুলোকে পার্লার থেকে চুল ফুলিয়ে, বয়সের সাথে যায় না এমন কিম্ভুতকিমাকার মেকআপ করিয়ে আনাটাকে বাড়াবাড়ি মনে করেন না। ক্লাসপার্টিতে কে কার চাইতে দামি আইফোন -গ্যালাক্সি- ট্যাব আনবে সেই প্রতিযোগিতা যখন চলে, তাতে কুলোর বাতাস দেয়া অভিভাবকের সংখ্যা কিন্তু কম না।

অন্যদিকে পরীক্ষা দিয়ে বের হলে দেখি প্রশ্নপত্র নিয়ে রাস্তার মাঝেই বেশিরভাগ অভিভাবক ছাত্রীদের জেরার মতো প্রশ্ন করে। ২ নম্বর ছেড়ে এসে মেয়েরা ভয়ে কান্নাকাটি করে, মা বাড়িতে ঢুকতে দেবে না –
কেমন যেন অসহায় বোধ করি।

ক্লাসপার্টিতে বাংলা গানের কোনো চল নেই।
হাই ভলিউমে চলে “বেত্তমিজ দিল” বা “লুঙ্গি ড্যান্স” এর সাথে নাচাগানা। এই অসংগতি ধরে ওদের বুঝিয়ে বলার কেউ নেই।
আমাদের মতো সাধারণ অভিভাবকের সাধারণ সন্তানেরা সেখানে ডাঙায় তোলা মাছ ছাড়া আর কী!

বছর দুয়েক আগে আমার কন্যারা জানায়, তারা বর্ষবরণের দলীয় নৃত্য আর গানে নাম দিতে চায়, নাচ – গান শেখে না এমন অনেক বাচ্চাই অংশ নেয়, ওরা অন্তত হাত-পায়ের কিছু মুদ্রা তো পারবে। আয়োজন ও তত্ত্বাবধানে ওদের প্রিয় চারু ও কারুকলার শিক্ষক আছেন বলে ওরা খুবই উৎসাহী।

এখানে বিশেষভাবে বলতে চাই যে, ভিকারুননিসা স্কুলের এই শাখাটিতে সন্তান পড়াতে এসে আমি জেনেছি যে, যারাই ক্লাসে প্রথম হয়, তারাই নাচ-গান-ছবি আঁকা- বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, অনুষ্ঠানে অগ্রাধিকার পায়। একজন ছাত্রী ক্লাসে প্রথম হলেই সে সব কিছুতেই প্রথম – এ এক অদ্ভুত অলিখিত নিয়ম।

মেয়ে বাড়িতে মহড়া করার সময় খেয়াল করলাম যে, নাচের সাথে যে গানটি দেয়া হয়েছে তা পাঞ্জাবি ভাংড়া ধরনের, নামেমাত্র বাংলা গান। খুবই অবাক হলাম। আমি দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে ফোন করে অনুরোধ করি বিষয়টি ভেবে দেখতে। চারুকলার শিক্ষক হিসেবে তিনি চিন্তায়-মননে এগিয়ে থাকবেন, এই প্রত্যাশা নিয়েই কথা বলা। আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়লেন, কেন আমি স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বললাম!
এমন গান না দিলে বাচ্চারা হাততালি পায় না – এমন খোঁড়া যুক্তিও দেখালেন। অবশেষে আমি ধন্যবাদজ্ঞাপনপূর্বক সবিনয়ে তাঁকে জানালাম যে, এমন একটি গানের সাথে আমার কন্যাকে নাচে অংশ নিতে দেয়াটা যেহেতু আমার রুচিবোধ সায় দিচ্ছে না, সেহেতু তার নামটি বাদ দিতে চাইছি। তিনি আমাকে কড়া ভাষায় শাসাতে ভোলেন না – যা করছি তা মেয়ের জন্যে ভালো হবে না।

ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তিনি থামলেন না। পরদিন মেয়ে গিয়ে দেখে মহড়ার তালিকায় তার নাম বহাল। না গেলে শিক্ষকের অমর্যাদা হবে এই ভেবে সে হলরুমে মহড়ায় যায়। হলরুম ভর্তি বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রী এবং শিক্ষক উপস্থিত। আমার কন্যার সেই প্রিয় শিক্ষক তাকে ডাকেন, “এ্যাই মেয়ে, তুমি এখানে কেন?” এবং চরম অপমান করেন। মেয়ের কোনো অপরাধ ছিলো না, সে কোনো নিয়ম ভাঙেনি। চোখভর্তি পানি নিয়ে সে কোনোমতে নিজেকে সামলে বলে, “আপা, আমি কী তাহলে ক্লাসে ফিরে যাবো?”

আমার এই মেয়েটা সহজে কাঁদে না কখনো, বকা দিলে সহজে ভুলে যায়। কিন্তু সেদিন বাড়ি এসে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আমার মা আর আমি শাখা প্রধানের সাথে দেখা করি। চারু ও কারুকলার শিক্ষক নাকি তাঁকে আগেই বিষয়টি জানিয়েছেন, অর্থাৎ অপমান করেছেন বলেই তিনি আঁচ করেছিলেন যে, অভিযোগ আসতে পারে। আমরা অভিযোগ করিনি, শিক্ষকের সাথে অভিভাবকের মতের অমিল হলে বিনা অপরাধে ছাত্রীকে অপমান করলে যে ছাত্রীর মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সেটাই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।

একজন শিক্ষকের মিথ্যাচার সেদিন আমাকে যারপরনাই আহত করে। এরপর তিনি গান পরিবর্তন করে, আমার দুই কন্যাকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বলে আরেক প্রহসন করেন। অংশগ্রহণকারী সকল ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবককে অনুষ্ঠানের পোশাক, পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেও আমাদেরকে কৌশলে অবজ্ঞা করেন। তারপরেও ওরা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নীরবে অংশ নেয় – এবং আমরা পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেই, আমার দুই কন্যা স্কুলে পড়ালেখা করে বাড়ি আসবে, কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। আজ পর্যন্ত সেই শিক্ষক আমাকে দেখলে রাজ্যের গাম্ভীর্য দেখাতে চেষ্টা করেন – ততোবার আমি এই ভেবে বিব্রত হই,
তিনি চারু ও কারুকলার শিক্ষক, আমি ভেবেছিলাম চিন্তায়-মননে তিনি অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

আমি নিতান্ত সাধারণ এক অভিভাবক। অভিভাবক সভায় সবাই আমাকে দেখে অবাক হয়। আমার কন্যারা জিপিএ ৫ পেলেই কী! ক্লাসে তো প্রথম হয় না! পড়ালেখার কথা বাদ দিয়ে আমি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে,
“যেমন খুশি তেমন সাজো” নিয়ে কথা বলি কেন? আমি মনে করি, “যেমন খুশি তেমন সাজো”তে বিভিন্ন পেশা, জাতি, রূপকথার পাতা থেকে উঠে আসা কোনো কাল্পনিক চরিত্র অথবা নামীদামী ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরাটা এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। নান্দনিক এই প্রতিযোগিতায় নানা রঙের মানুষগুলোকে দেখে বিচিত্র আনন্দ লাভের মধ্য দিয়ে কিন্তু শিশুদের মাঝে এক ধরনের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধেরও জন্ম হয়। তাই কষ্ট পাই খুব সুন্দর সেজেও এর আগের বছর যখন বেদেনী আর বায়োস্কোপওয়ালা বাদ পড়ে। এই বিলুপ্তপ্রায় পেশাগুলো সম্বন্ধে আমাদের সন্তানদের জানা উচিৎ। যে ক্লাসে নভেরাকে প্রায় কেউ চেনে না, সেখানে নভেরা সাজার জন্য একটি মেয়ের সাধুবাদ পাওয়া উচিৎ, এবং তাকে দিয়েই নভেরাকে পরিচিত করার সুযোগটা নেয়া যেতো বলে আমি মনে করি। নভেরা আহমেদ, চার্লি চ্যাপলিন, পতাকাওয়ালা, আদিবাসী নারী সেজে আমার কন্যারা বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ে সে প্রশ্ন আমি করি না। বাদ পড়তেই পারে।
নভেরাকে না চেনা বাচ্চারা চ্যাপলিনকে না চিনলেও আমি অবাক হতাম না। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে যাদেরকে নেয়া হয়েছে সেই চরিত্রগুলো আমাকে অবাক করেছে, মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে। এর আগে দেখেছি, প্রেতাত্মা, কালো পোশাকে বন্দুকধারী মাস্তানকে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেবার নেয়া হয়েছে আইএস জঙ্গি!!! যারা কিনা আই এস এর পতাকা এনে জঙ্গি হামলার অভিনয় করে দেখিয়েছে!!! তখন আমাকে প্রশ্ন তুলতেই হয় –
বাংলাদেশের একজন পতাকা বিক্রেতা আপনাদের নজরে না পড়তে পারে, বাংলাদেশের প্রথম নারী ভাস্কর নভেরা আহমেদকে পরিচিত করতে আপনারা আগ্রহী না হতে পারেন, বায়োস্কোপওয়ালার মতো একটি অসাধারণ পেশাকে বাদ দিতেই পারেন, চার্লি চ্যাপলিনের মতো বিশ্বখ্যাত একজন ব্যক্তিত্ব সাজার উদ্যোগকে আপনারা উৎসাহিত নাই বা করলেন! তাই বলে মাস্তান, ভূত, প্রেতাত্মা এবং শেষমেশ আই এস জঙ্গিকে বাছাই করে আপনারা কী বিনোদন আর কী শিক্ষা, কোন ধরনের বার্তা দিতে চাইছেন আমাদের শিশুদেরকে? ভেবে দেখবেন একবার?

অরিত্রীর আত্মহত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। দিনশেষে নিজেদের প্রশ্ন করি,
সারাবছর কী ভূমিকা রাখছি আমরা শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনে বা সন্তানদের মানসিক উন্নয়নে?

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবার আগেই ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে “ক্ষ” দিয়ে দশটি শব্দ লেখা শেখাই। ওরাও রোবটের মতো এই শিক্ষাব্যবস্থায় খাপ খাওয়ানোর চেষ্টায় জর্জরিত হয়। অথচ সেই বাচ্চাগুলোকে বোঝার মতো, শোনার জন্য, ওদের বিকাশে কিছুই কী করার নেই আমাদের?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.