ঊর্মি ইয়াসিন:
দুবছর আগের একটা ঘটনা। আমার মায়ের সাথে কথা বলছিলাম, জানতে পারলাম আমার এক আত্মীয়ার কন্যাকে ভিকারুন্নেসা স্কুলে ভর্তি করাবার এপ্লিকেশন ফর্ম আনার জন্য জন্য তার মা শেষ রাতে গিয়ে লাইন দিয়েছেন স্কুলের গেইটের বাইরে। আঁতকে উঠেছিলাম। একি অবস্থা? শুধু তাই নয়, দুই ক্লাস নিচে নামিয়ে বয়স কমিয়ে এই দৌড় প্রতিযোগিতায় নামার জন্য তৈরি হচ্ছেন সপরিবারে।
কয়েকদিন আগের ভিকারুন্নেসা স্কুলে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে ফেসবুক ভাইরাল হয়েছে। অরিত্রীর নকল ধরা পরে যাওয়া এবং যাওয়া এবং টিসি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার আত্মহত্যা কোনো আনন্দের ঘটনা নয়। আবেগী জাতি হিসেবে আমরা এক এবং অদ্বিতীয়। সুতরাং আত্মহত্যার কারণ হিসেবে শিক্ষকদেরই মুণ্ডুপাত হচ্ছে। কিছু কিছু স্ট্যাটাসে দেখলাম, অনেকেই ক্ষমাপ্রার্থী অরিত্রীর কাছে।
কেন?
এই দায় কি একমাত্র শিক্ষকদের ওপর? অভিভাবকের ওপর কি কিছু বর্তায় না? আজকাল “গোল্ডেন জিপিএ” বলে এক অভিনব অদ্ভুত প্রক্রিয়ার রীতি চালু হয়েছে। শুনলেই মনে হয়, এক একটি ছেলেমেয়ে কয়টা করে সোনার ডিম্ প্রসব করলো তার হিসেব। এ কারণে ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যার সংখ্যা কিন্তু কম না। কারণ এই গোল্ডেন জিপিএ স্ট্যাটাস আসলে অভিভাবকদের স্ট্যাটাস। না হলে পাশের বাড়ির অমুকের মায়ের কাছে, কিংবা তমুকের কাছে তাদের নিজেদেরই মানহানি ঘটে।
শহরের নামীদামী স্কুলে পড়ানো, গোল্ডেন জিপিএ, ইত্যাদি সমীকরণে ছেলেমেয়েরা অভিভাবকের মানসম্মানের প্রতিযোগিতায় জিম্মি এবং প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে শিশু কিশোরদের মন। একটা সাত বছরের শিশুর স্কুল ব্যাগের ওজন দেখলে চোখ কপালে ওঠে। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগটা রেখেই আবার কোচিং এর জন্য ছোটো। বাড়িতে পড়ালেখার নিয়ম প্রায় লুপ্ত।
নকল কেন করতে হয়? পড়ালেখা নিয়মিত করলে নকলের দরকার পড়ে না। যে করে, সে পড়ালেখা না করে পুরো বছর তানাবানা করেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত। নকল করা অনৈতিক, অন্যায়…. পিরিয়ড।
অনেকে বলছেন, মোবাইল ফোন স্কুলে কেন অনুমোদন করলো, ফোন না আনলে তো এই ঘটনা হতো না? বাহ্, ফোন অনুমোদন না করলে তো অভিভাবকরাই তো পথে নামবেন। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বুলি কপচাবেন। সুতরাং, এসব থামান।
স্কুল কর্তৃপক্ষ নকল ধরে যা করার তাই করেছেন। টিসি দিয়েছেন। নো টলারেন্স। অভিভাবকরা লাখ টাকা ডোনেশন দিয়ে ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকেন, কিন্তু স্কুলের নিয়ম না মানলে তখন গলাবাজি কেন?
শিক্ষক/স্কুল এদের দিকে আঙ্গুল না তুলে নিজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশুর শৈশব, একটি রূপকথার মতো কৈশোর? নাকি সোনার ডিমের মত গোল্ডেন জিপিএ? যার মূল্য একটা জীবনও হতে পারে।
এটাও মনে রাখবেন, আজকে স্কুল কতৃপক্ষকে দায়ী করা মানে নকলকে পরোক্ষভাবে জায়েজ করে নেয়া, স্কুল থেকে অনুশাসন তুলে নেয়া এবং আরো ঘোরতর কিছু অনৈতিক বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয়া।