মাকসুদা আক্তার প্রিয়তী:
মেরিটাল #ধর্ষণ বা পার্টনারের কাছে #ধর্ষণকে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই। এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা বা অনুভূতি কোনো নারীর পক্ষে আর কিছুই হতে পারে না। চোখ-কান বন্ধ করে নিজের শরীরকে কাউকে দেয়ার মতো অসহ্য যন্ত্রণা একমাত্র সে-ই উপলব্ধি করতে পারে, যে ঐ অসহনীয় অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে বা আজ অব্দি যাচ্ছে।
আমি যদি আমার জীবনের ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, প্রেমহীন বা ভালোবাসাবিহীন তো মানুষ হয় না। একজনকে ভালোবেসেছিলাম, এক/দুইমাসের মাত্র সম্পর্ক ছিল, কিন্তু গভীর, যেহেতু জানাশোনাটা ছিল অনেক আগের থেকেই। বিয়ে হয়ে যাবে কনফার্ম। খুব ইন্টিমেইটিং সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তার দৌড় ছিল আমাকে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার। এখন ছেলে মানুষ চাইতেই পারে, কিন্তু সে যখন চাইছে আমি তখন রেডি না। ঐ একমাসের মধ্যেই সে শেষমেষ কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলছে, ‘তুই কী ধরনের গার্লফ্রেন্ড যে আমার শারীরিক চাহিদা তুই মেটাতে পারিস না’। সেই মুহূর্তে আমি মেলাতে পারছিলাম না যে এতো শিক্ষিত, ভদ্র, ভালো ফ্যামিলির ছেলের মুখে এই কথা, এই ভাষা যে সে তাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না? সাথে সাথে আমার প্রতিক্রিয়া কী হবে তা সামলাতে সামলাতে মাথায় বীজ বপন হয়ে গিয়েছে, আর যাই হোক, এই ছেলে বা এই সম্পর্ক আমার জন্য নয়।
আমি তো নিজেকে বাঁচিয়ে এনেছি শেষমেষ। যার জন্য, সেসহ যারা জানতো এই সম্পর্কের ব্যাপারে, আমাকে ওরা খারাপ মেয়ে বলা শুরু করে। কিন্তু আমি তো আমার আত্মসম্মান তাদের কাছে ভালো করতে গিয়ে বিক্রি করতে পারবো না। আমি জানি আমার কতোখানি ধারণক্ষমতা, কতোখানি আমি ছাড় দিতে পারবো, কতখানি আমি সহ্য করতে পারবো।
আমার বাঁচার অবলম্বন তো ঐটুকুই, আমার আত্মসম্মান এবং আত্মমর্যাদা।
এখন আসি মূল বিষয়ে, নারীদের শারীরিক কাঠামোর জন্যে হয়তো তাদের প্রতিদিন বা ঘন ঘন শারীরিক সম্পর্ক করতে ইচ্ছা না-ই জাগতে পারে, সেই ক্ষেত্রে পুরুষদের বেলায় সম্পূর্ণ উলটো এবং ভিন্ন, অর্থাৎ সেইভাবেই তাদের দৈহিক গঠন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার স্বামী বা পার্টনার আপনার সাথে দৈহিক মিলন করতে চাচ্ছে, কিন্তু আপনি চাইছেন না, সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই তার আপনার ইচ্ছাকে সম্মান করা উচিত। এভাবে হয়তো এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, এক মাস বা কয়েক মাস চলে গেলো, কিন্তু এরপরও যদি আপনার ইচ্ছা না জাগে তখন আপনার স্বামী বা পার্টনার কী করবে? তার যেই বায়োলজিক্যাল চাহিদা আছে সেই গুরুত্বটা কে দিবে? আপনি কি এলাউ করবেন, আপনার স্বামীকে কোন যৌনকর্মীর কাছে যেতে, বা কোন পরকীয়া প্রেমের মধ্যে দিয়ে তার জৈবিক চাহিদা মেটাতে? নাকি আপনি চাইবেন যেহেতু আপনার ইচ্ছা করছে না, সেহেতু তারও ইচ্ছা করা বারণ, আর তারপরেও ইচ্ছা করলে সে মাস্টারব্যাড করুক। যেহেতু সে আপনাকে বিয়ে করেছে, তাই তিনি এইটি করতেই বাধ্য। জোর করলে তো ধর্ষণ। না না, আমার কথায় কেউ ভুল বুঝবেন না, আমি কোন ভুল/অন্যায় কিছু প্রমোট করছি না বা চাইছি না, আমি শুধু লজিক্যালি এর উত্তর বা সমাধান চাই আপনাদের কাছে?
এখন কথা হচ্ছে উপরের কথাগুলোর বাইরেও ভয়ংকর কিছু নোংরা মানুষ আছে, যাদের সঠিক শিক্ষার অভাব, যারা এক সপ্তাহ তো দূরে থাক, দিনের যেকোনো সময়ে ইচ্ছা করলে তার স্ত্রী তার জন্য কাপড় খুলে বিছানায় যেতে বাধ্য, অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি বিয়েই করেছে তার যখন-তখন শারীরিক চাহিদা মিটানোর জন্য। এইটি তার মগজে পেরেক গাঁথা, তার স্ত্রীর আর কোন ইচ্ছে- মতামত, সম্মান, চাহিদা থাকতেই পারে না। আর নারীরা সামাজিক কারণে তা মুখ বুঁজে সহ্য করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আর্থিকভাবেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঐ নারীরা স্বাবলম্বী নয়। সরকার আর্থিকভাবে বা কর্মসংস্থান দিয়ে ঐ নারীদের স্বাবলম্বী করে দিক এবং সামাজিকভাবে সেই নারীদের বাঁকা চোখে না দেখে গ্রহণ করুন আপনারা, তখন আর ঐ নারীরা তার স্বামীর কাছে ধর্ষিত হবে না। কারণ আত্মমর্যাদা সম্পূর্ণ নারী ঐ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেই।
কিন্তু তারপরেও যদি কোন নারী সন্তানের বা অন্য কিছুর দোহাই দিয়ে সেই পুরুষের সাথে পড়ে থাকে, সেটাকে কি তখনও আপনারা ধর্ষণ বলবেন?
(সামাজিকভাবে পরিবেশ তখনই হবে যখন সমাজের সর্ব্বস্তরে একটা সিস্টেম এর মধ্যে সমাজের প্রতিটা মানুষকে সোশ্যাল ভ্যালু অর্থাৎ ভালো-মন্দ সব কিছুর পার্থক্য বোঝানোর/শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।)
সর্বোপরি জোর করে শারীরিক সম্পর্ক কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, সম্পূর্ণ অনৈতিক, অবিচার, যাকে আমরা ধর্ষণ বলি। বিষয়টি আপনাদের কাছে। পুরুষ আপনি কি একজন ধর্ষক হবেন? তাহলে পরবর্তীতে আপনার মেয়েও এইভাবে ধর্ষিত হবে। আর নারী আপনি কি নাকি ধর্ষিত হতে থাকবেন নাকি সাহসী হয়ে নিজের পথে চলবেন?
বিঃ দ্রঃ আমি এই সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণ বা আনকনসেনসুয়াল সেক্সকে #মি টু আন্দোলনের সাথে যোগ করার পক্ষে নই।
এই দুইটি যুদ্ধ নারীর হলেও দুই রকমের মোটো।
এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে #মি টু তো কোনো পুরুষের বেলায়ও হতে পারে এবং হয়েছেও।
**আমি ছোট মানুষ, আমার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও কম, যদি আমার লেখায় কোন ভুল বা অযৌক্তিক কিছু থেকে থাকে, দয়া করে ধরিয়ে দিবেন বা শুধরিয়ে দিবেন, অবশ্যই যুক্তির সাথে।