#MeToo: যৌন নিপীড়ক আনোয়ার খানের মনোনয়ন বাতিল করা হোক

সুপ্রীতি ধর:

নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন ‘যৌন নিপীড়ক’ শিল্পপতি আনোয়ার হোসেন খান। হয়তো তিনি টাকা এবং পেশীশক্তির জোরে নির্বাচনে জয়ীও হয়ে যাবেন। চারদিকে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, লুটেরাদের কাতারে শামিল হবে একজন চিহ্নিত যৌন নিপীড়কও।

কিন্তু একজন নারী হয়ে এটা মেনে নিতে পারছি না। তার মনোনয়ন বাতিলের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী নারী নির্যাতনবিরোধী আমাদের এই দীর্ঘ আন্দোলনে শামিল থাকবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অনেক সময় লেগেছে মেয়েদের মুখ খুলতে। এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমাদের আন্দোলন অনেক বছর পিছিয়ে যাবে।

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের কর্ণধার তিনি। তার বিরুদ্ধে এমবিবিএস প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী বর্তমানে কানাডা প্রবাসী সাবিহা নাজনীন #মিটু আন্দোলনের সূত্র ধরে গত ২১ নভেম্বর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন। (নিচে সেই অভিযোগটির লিংক দেয়া হলো।)

অভিযোগটি প্রকাশের পর থেকে আনোয়ার খানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হয়েছে, যেখানে বেশ দৃঢ়তার সাথেই সাবিহা নাজনীন নামের আগে ‘অপরিচিত’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে এমন নামে কোনো শিক্ষার্থী তাদের কোনোকালেই ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে। এবং প্রকাশিত অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসাথে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অবহিত করেছে বলে প্রতিবাদ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আনোয়ার খান

এখানেই ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্তদের দল। সাবিহার বাবাকে বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাবিহার ভাষ্যমতে, আনোয়ার খান নিজেও তার বাবাকে ফোন করে এ খবরের ভিত্তিহীনতার কথা বলেছে এবং যথারীতি এমন কথা বলেছে যা রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। সাবিহার লেখাটির নিচে অনেকে এমন মতও প্রকাশ করেছে যে, এই পোর্টাল সম্পূর্ণভাবে বিএনপি এবং জামাতপন্থী, তারা আনোয়ার খানের মতোন এমন উদার এবং সৎ একজন মানুষকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই হেয় করার মিশন নিয়ে নেমেছে।

এই ঘটনায় এবং সমসাময়িক আরও অনেকগুলো অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই #মিটু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে এই আন্দোলন চরিত্র হারাতে শুরু করেছে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছে। যার তীব্র প্রতিবাদ আমরা করেছি এবং এখনও করেই যাচ্ছি।

উইমেন চ্যাপ্টারে যেহেতু সাবিহার লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল এবং মিটু আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী অনলাইন পোর্টাল হিসেবে আমরা একটু সময় নিয়েছি এ নিয়ে দ্বিতীয় লেখা প্রকাশের আগে। আমরা অপেক্ষা করেছি এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে করা প্রতিবাদের উত্তর হিসেবে প্রমাণ সংগ্রহের। যদিও এটা অনেকটাই কঠিন ছিল। কারণ আট বছর আগের ঘটনা এটি। সাবিহা তখন পড়া ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায় এবং তারই পরের বছর তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সে কানাডায় পাড়ি জমায়। কাজেই নিজেকে শিক্ষার্থী প্রমাণ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার নাও থাকতে পারে এটাই ধরে নিয়েছিলাম। যদিও সাবিহার লেখার সত্যতা নিয়ে এতোটুকু সন্দেহও মনে আসেনি। কারণ আমরা জানি নারীকে কতোটা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মুখ খোলার মতোন অসাধ্য সাধন করতে হয়, এবং তা যদি হয় যৌন নিপীড়নের ঘটনা।

আমরা যারা নারী ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার থাকি, নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি সাধ্যমতোন, যারা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত #মিটু আন্দোলনের অন্যতম শরীক, আমরা এখনও মনে করি না যে, একজন মেয়ে যখন তার সাথে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের কথা বলে, নিপীড়কের নামটি সবার সামনে উচ্চারণ করে, তখন আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে। কারণ নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর থেকে এই মুখ খোলার প্রক্রিয়াটির সবটুকু সময় একজন মেয়ে যে বেদনা আর কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করে, তা অন্য কোনো বেদনা-যন্ত্রণা থেকে গৌণ তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা ভয়াবহ এক ক্ষত। সারাজীবন একটি মেয়ে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে, যে ঘটনা তার জীবনের মোড় পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিয়েছে, তা কোনভাবেই অবহেলার বিষয় হতে পারে না। আর সে কারণেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি এবং আমরা সাবিহার সাথেই আছি। ভবিষ্যতেও থাকবো।

আর গতকাল তার আইডি কার্ডের স্ক্যানকপি হাতে পেয়েছি। নিচে তা দেয়া হলো। সুতরাং আর কী প্রমাণ চাইবে যৌন নিপীড়কের দল? এরপরও বলবে যে, সাবিহা তাদের শিক্ষার্থী ছিল না?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন যেমনটা বলেছেন, “অসীম সাহসে ভর দিয়ে ঈর্ষণীয়ভাবে নারীরা অনেক আগের ঘটনারই জবানবন্দি দিচ্ছেন, এতে আছে যৌন হয়রানির মতো ভয়ংকর অপরাধকে চিহ্নিত করার তাগাদা। হ্যাশট্যাগ মি টু যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীর সাহসী হওয়ার আন্দোলন, পৌরুষদীপ্ততার ঝাপটাকে ঝাঁকিয়ে দেওয়ার আন্দোলন। আমিসহ এ দেশের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া প্রত্যেক নারীর মুখ খোলার সময় এসেছে নিশ্চিতভাবেই”।

সামনে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করবো, অসৎ, দুর্নীতিবাজ প্রার্থীদের পাশাপাশি নারী নির্যাতক, যৌন নিপীড়ক কোনো ব্যক্তি যেন প্রার্থী না হতে পারে, যেন আনোয়ার খানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেইসাথে সাবিহার পরিবারকে সবরকম হুমকি থেকে রেহাই দেওয়া হোক। সেই দিকটাও নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

সাবিহার লেখাটির লিংক:

#MeToo এবং একজন মনোনয়নপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান

সাবিহার আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি:

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.