নিপীড়নের শিকার এক মাদ্রাসা ছাত্রের গল্প

আলফা আরজু:

ঘটনাটা লিখছি তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে। কারণ, এই ঘটনা যার সাথে ঘটেছে। সেই প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষের – এই মি টু শেয়ার করার মত ব্যাক্তিত্ব গড়ে উঠেনি। তিনি মাদ্রাসায় পড়ে কোরআনে হাফেজ হয়েছেন – পরিবারের বয়োজৌষ্ঠদের ইচ্ছেয়।

তার পুরো “শিশুবেলা ও যৌবনের” সবচেয়ে মধুর সময় পার করতে হয়েছে – পরিবারের ১২ সদস্য নিয়ে আখেরাতে বেহেশত নির্ধারণের পিছনে।

তাই, তিনি কোনোদিন শৈশবের সেইসব তিক্তকর ঘটনা – পরিবারের কারোর সাথে শেয়ার করতে পারেননি। একদিকে, পরিবারের অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনোভাব, অন্যদিকে মওলানা সাবের রক্তচোখ ও অমানবিক শারীরিক নির্যাতন, সাথে “এইসব কাওকে বললে, তুই কিন্তু বেহেশত যেতে পারবি না”, ধরনের কথা।

আর বেশি কিছু লাগেনি – সেই ৭/৮ বছরের একটা ছেলেকে থামিয়ে দেয়ার জন্য। পরিবারের কেও ছিলো না যে সে এই কথা গুলো শেয়ার করতে পারে। “মওলানা তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয় ও এমন সব কাজ করে – যা সে পছন্দ করে না।”

আবার, যেহেতু আবাসিক মাদ্রাসা ছিলো – পরিবারে ফিরে গেলে – এটা সেটা ও বেহেশতের লোভ দেখিয়ে সেই “দোযখ রুপি মাদ্রাসায় পরিবার থেকে জোর করে রেখে গেছে – বাবা অথবা ভাইয়েরা। সেই ছোট ছেলে – নিজের মধ্যে কুকড়াতে কুকড়াতে – মওলানার সকল “যৌনাচার” মেনে নিয়েছে।

সেই শিশুর কোনো স্থিতিশীল ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেনি আর। সেই শিশুটা এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ – কিন্তু, তার……….!!

আমি খুব চাই, এই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষটা – তার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঢাকা শহরের বড় এক মাদ্রাসার হুজুরের সেই ব্যাভিচার ও যৌন হয়রানি নিয়ে লিখুক। এখনো আমাদের অনেক বাবা-মা আছেন – যারা অন্ধভাবে “বিভিন্ন মাদ্রাসা/মক্তব্বে/চার্চে/টেম্পলে অথবা আখেরে মেওয়া খাবার লোভে” – কত শিশুর জীবন নরক বানিয়ে তুলছেন।

আহা, সেই সব শিশুর জন্য-

[আমার পরিচিতদের অনেকের কমন মানুষ হওয়াতে – জীবনের বিভিন্ন দায়িত্বে ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অসততা ও “অস্থির ব্যক্তিত্বের” কথা শুনি। তিনি প্যারেন্টস হিসেবে ভয়ঙ্কর – কোনোদিন সন্তানদের “নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত” জীবন নিশ্চিতে – ভূমিকা নেননি, পার্টনারের সাথে প্রতারণা করেছেন, প্রেমিকের সাথে প্রতারণা করেছেন, কর্মক্ষেত্রে অস্থির, বন্ধুত্বে অস্থিরতা। আজকে একজনকে ফেরেশতা মানেন, তো কালকে সেই বন্ধুকে পায়ে মাড়িয়ে যান। তার জীবন কিছুটা কাছ দেখে দেখে মনে হয়েছে – তার সেই শিশু বয়সের – সবাইকে খুশী কিংবা বেহেস্তের মেওয়া উপহার দিতে যেয়ে তিনি – নিজের কোন স্থিতিশীল জীবন or Strong ব্যাক্তিত্ব গড়তে পারেননি।

পরিবারের মানুষগুলো কেন এমন হয়??? একটা শিশুকে মানুষ হিসেবে নয় – “এরে/তারে” খুশী করানোর একেকটা মেশিন বানিয়ে তোলেন। দয়া করে, আপনার কাছের বা দূরের আজকের শিশুকে “সুস্থ একজন” মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। শিশু মনে “আখেরাতের” ভয় দিয়ে – এরে/তারে খুশী করার মেশিন নয়। এতে করে, এই ধরনের চরিত্রের কাছের মানুষগুলো খুব সাফার করে।]

পাদটীকাঃ এই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষটা এক সময় আমাদের বন্ধু ছিলেন। তখনই এই ঘটনা শুনেছিলাম। সেই মানুষটার জন্য সমবেদনা এবং, “প্রমাণ ভাইয়া-আপা ও মিটু নিয়ে সন্দেহ বাজ”দের ধিক্কার ও ঘৃণা।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.