#মিটু: অভিযুক্তরা কিন্তু আগের মতোই থাকবে

সাদিয়া শবনম হেমা:

আমি এখন একটা সেমি এডাল্ট লিখা লিখবো। বিভিন্ন কারণে আমার রাগে গা জ্বলতেছে তাই এখানে কিছু অভদ্র শব্দ ব্যবহৃত হবে। এই ইন্ট্রো দিয়ে দিলাম, কারণ এর জন্য আমার বাসার মানুষজন আমাকে শান্টিং দিবে। শেষ বয়সে এসে ওয়ার্ড চয়েজিং এর জন্য শান্টিং খাওয়া অপমানজনক, কিন্তু কিছু করার নাই। সাবধানবাণী দেখার পরেও এটা যে পড়বে সে পরে এইটা নিয়ে কোন আলোচনা করতে পারবে না! 😎

বাংলাদেশে #মিটু মুভমেন্ট একচুয়ালি কোন কাজের না। বাংগালীর ধাতটাই হচ্ছে যে কোনো বিষয় নিয়ে দুই দিন খুব করে ফাল পেড়ে তিন নাম্বার দিন থেকে উপ্তা খেয়ে পড়ে থাকবে, আর ছয় নাম্বার দিনে এসে নতুন আরেকটা বিষয় নিয়ে ফালাফালি শুরু করবে; আগের ইস্যু একেবারে জিলেট ব্লেড দিয়ে পরিস্কার শেভড।

মাঝের থেকে মিটু বলে ফেলে মহিলাকূল দ্বিতীয়, তৃতীয় ও বহুবারের মতো হ্যারাসমেন্ট, হাসাহাসি, করুণা ও গালাগালির সাবজেক্ট হয়ে জীবন পার করবেন।

আর যাদের নামে মিটু রচিত হবে, সেই সকল মহামানবেরা দিব্যি তাদের কার্যক্রম চালায়ে যেতে থাকবে। কারণ তারা সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলবে। কারণ তাদের ‘সোশ্যাল স্ট্যাটাস’ ও টাকা পয়সার দাম আছে, মানে তাদেরও ব্যপক দাম। উপ্রে দিয়ে অনেকেই ছি: ছি: করলেও তলায় তলায় তাদের গিয়ে বলবে ভাই এট্টু ধৈর্য ধরেন কয়দিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। পুলিশ ভাইরা তো মার্ডার কেসের আসামীই ধরে না তাইতে আবার মেয়েছেলের গায়ে হাত দেওয়ার মত এত সিলি বিষয়ে মন দেওয়ার মত টাইম তাদের নাই। এসব লোকের আবার বিরাট সংখ্যক ফলোয়ারও আছে, মহিলারাও। তো হুদাই লিখালিখি করে কোন ইয়েটা হবে বা হচ্ছে?

তার চাইতে মাইর দিতে শিখা ভাল। গায়ে যেই হাতটা দিবে ঐ হাতটা জায়গাতেই ভেঙ্গে দিয়ে আসার শিক্ষা নেওয়া ভাল। মাইরের উপর কোন ওষুধ নাই। এইটার ফলাফলও সুদূরপ্রসারী। যে একবার হয়রানী করতে গিয়ে নিজে পিটান খেয়ে হয়রান হবে, সে ভবিষ্যতে সামনে দিয়ে মিয়া খলিফাকে সব খুলে ঘুরতে দেখলেও হাত পা মুখ চোখ আর অন্যান্য জিনিস সামলায়ে রাখার চেষ্টা করবে।

এখন গার্জিয়ানরা কি কন্যাদের নাচ গান, ছবি আঁকা, রান্না-বেকিং এর পাশাপাশি মার্শাল আর্ট শিখাতে আগ্রহী? না, কারণ, এতে মেয়েদের বেটা বেটা লাগবে, নারীর কমনীয়তা সহনশীলতা ইত্যাদিকার সুকুমারবৃত্তি ধ্বংস হবে। বিয়ে হবে না। বাচ্চা হবে না। তাদের ছোট থেকে শিখাবেন কোন টাচটা এপ্রোপ্রিয়েট কোনটা না? কীভাবে মানুষ চিনবে? কিছু ঘটলে তা কার সাথে মন খুলে শেয়ার করে প্রতিকার পাবে? না, কারণ, আমাদের অনেক লজ্জা! ঘুষ খাইতে, মানুষ ঠকাইতে, কূটকাচালী করতে লজ্জা নাই, কিন্তু ক্লাসে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের পার্সোনাল হাইজিন চ্যাপ্টার পড়াতে লজ্জা, পিরিয়ড হওয়ার আগেই সে সম্পর্কে মেয়েকে বুঝ দিয়ে দিতে লজ্জা, কেউ এসে যৌন হয়রানি করে গেলে সেইটা জানাতে লজ্জা!

তবে কি গার্জিয়ানরা তাদের বদ ছেলেদের সভ্যতা ভদ্রতা অন্যকে সম্মান দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ছোট থেকেই তালিম দিবেন? কেউ রেপড হলে, হয়রানির শিকার হলে, সেই মেয়ের চরিত্র বিশ্লেষণে মন না দিয়ে, অথবা মেয়ের সাধারণ জীবনযাপনকে বাধা না দিয়ে, ছেলেটাকেই শাস্তি দেওয়ার, কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করবেন?
না, কারণ, বেটা ছেলেদের তো একটু আধটু দোষ থাকবেই, তারা তো এমনই- বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে, বাচ্চা হইলে ঠিক হয়ে যাবে, বয়স হইলে ঠিক হয়ে যাবে…কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, ওয়ানস এ হারামজাদা, অলওয়েজ এ হারামজাদা। এরা কবরে গিয়েও ঠিক হয় না, পাশের কবরে কোন মহিলার লাশ থাকলে তারেও দিন রাত উত্যক্ত করে, কবরের চিপা খাওয়ার টাইমও মাস্টারবেট করতে থাকে। এদের আসলে দুইটা জিনিস দরকার ছিল ঠিক হওয়ার জন্য- এক, ভাল সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়ে কাউন্সেলিং আর দুই, ৭ নাম্বারি বেত দিয়ে আগাগোড়া ধুমায়ে মাইর।

যে দেশের প্যারেন্টিং, আইন কানুন, বিচার ব্যবস্থার কোনটারই কোন মা-বাপ নাই, সেখানে এতো কিছু বলে কী হবে জানি না। যে মেয়েরা লিখছে, তাদের লেখার কমেন্টে, সংশ্লিষ্ট অন্য লেখায় যেভাবে তাদের ব্যবচ্ছেদ করা চলছে, এমনকি অন্য নারীরাও তাতে বাদ নাই, ঐ লিখিয়ে মেয়ে কি এতে সাইকোলজিক্যালি এন্ড সোশ্যালি অ্যাফেক্টেড হবে না? সেইবেলা কে তার দায়িত্ব নিবে???

যে বিষয়ের জন্য আজ আজাইরা এই রচনা লিখতে বসলাম,তার সারাংশ হলো;
কেউ একজন মহাপুরুষ আমারে হাস্যরসের ছলে জানাইলেন, ‘মেয়েরা তো সেই মাল!”
আমিও কেলাইতে কেলাইতে কইলাম, ” ভাল তো! মাল মানে হইলো জিনিস, জিনিস মানে তার এক পয়সা হইলেও দাম আছে, ইউজ আছে। আর আপনের মতো ছেলে আর তার ফুল ফেমিলি হইলো ব আকার….। বস্তা ভইরা বেচতে গেলেও ফুটা পয়সার দাম নাই। পুরাই ওয়েস্টেজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড! এখন কী আর করা, কিছু করার নাই না চাইলেও আপ্নারা জীবনে থাকবেনই, কিন্তু বাড়তে দেওয়া যাবে না। এবার ভাগেন।”
এরপর তারে ব্লক মারছি।

কিছুটা টেনশনেও আছি। কবে না জানি আমার নামেও পোলাপান #মিটু লিখা শুরু করে!!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.