শিল্পী জলি:
আজই বোনকে জিজ্ঞেস করলাম, তোরা কি জানতিস সেলিম আলদীনের চারিত্রিক গুণাবলীর কাহিনী? বলে, কে না জানতো? সবাই-ইতো জানতো তার কীর্তিকলাপ!
সে পড়তো পদার্থবিদ্যা বিভাগে। একেবারে আরেক দিকের ডিপার্টমেন্ট। আর আমি ছিলাম অর্থনীতির। আমিও নাট্যতত্ত্ব থেকে উল্টা দিকের, দূরের বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। তথাপি, পুরো ক্যাম্পাসেই তার চরিত্রের কাহিনী ভাসতো যেনো মেয়েরা সতর্ক থাকতে পারে এসব লুচ্চা শিক্ষকদের কবল থেকে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্হা আর কী!
আমি আমার শিক্ষাজীবনেই আল দীন সাহেবের আলুর দোষের খবর শুনেছি। তবে ভুক্তভোগী মুশফিকা লাইজু শিমুলের নাম নয়, শুনেছিলাম আরেক উজ্জ্বল, জুনিয়র শিক্ষার্থীর কাহিনী। অবস্হার মারপ্যাঁচ এমন ছিল যে হয় তাকে রাজী হতে হবে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে, নয় শিক্ষার্থী জীবনের ইতি ঘটে যাবে।
অত সুন্দরী, নানাগুণের অধিকারী, শিল্পসাহিত্যে পারদর্শী মেয়েটি শুধু তার কবল থেকে বাঁচতে এক ইয়ারমেটকে অনুরোধ করে রাতারাতি বিয়ে করে নেয়, কোন রকম প্র্রেমপ্রীতি ছাড়াই। যদি সেদিনের ঐ চাপ না থাকতো তাহলে হয়তো সেই মেয়েটিরও জীবনের পরিকল্পনা অন্য রকম হতো। সে যেহেতু এগিয়ে এসে তার নাম বলছে না, তাই আমিও তার নাম প্রকাশের অধিকার রাখি না। কেননা যৌন হেনস্থার বিষয় কে কীভাবে হ্যান্ডেল করবে, সেটা তার নিজস্ব অধিকার। তাছাড়া প্রত্যেকেরই প্রতিরোধ এবং হিলিং প্রসেস আলাদা। তাই তার দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার যে কোনো মেয়ে যখন নিজ ইচ্ছেয় আসবে তার কষ্টকে শেয়ার করতে, সেটাই হবে তার জন্যে সঠিক সময়। এটার জন্যে কোন টাইম ফ্রেমও বেঁধে দেয়া যায় না। কেননা বিষয়গুলো মোকাবেলা করার ক্ষমতা এবং পদ্ধতি সবার এক রকম নয়।
আমাদের সময়ে সেলিম আল দীন আর ভূগোলের এক শিক্ষক লুচ্চা চরিত্রের খেতাবে দূষিত ছিল। আমরা তাদেরকে দু’পয়সারও সন্মান করতাম না। ভূগোলের ঐ শিক্ষকটি তার স্ত্রী’র বান্ধবীকে ‘বান্ধবী আসতে বলেছে’ বলে বাসায় যেতে বলে। ওদিকে স্ত্রী তখন বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। ব্যস্ খালি বাসা, তুমি আর আমি এক কামরায়, ‘এবার যাবে কই’ অবস্হা! মেয়েটি চিৎকার-চেঁচামেচি -কান্নাকাটি বাঁধিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে ছুুটে। সেই থেকে ঐ লোকের নাম হয়ে যায়, হান্টার। আর তার আসল নামই ঢাকা পড়ে যায় এই খেতাবের চাপে।
গতকাল শিমুলের লেখার কমেন্টস সেকশনে কামালের কমেন্টস থেকে জানলাম ঐ শিক্ষককে ‘হান্টার’ বলে দৌঁড় দেয়ায় আমাদের এক সহপাঠী ডেভিডকে নাকি ধরে ফেলেছিল সে দৌঁড়ে। অতঃপর উল্টা ডেভিডকেই বহিঃস্কার করবে। আমাদের সহপাঠী ডেভিডসহ কামাল এবং আরও কেউ কেউ নাকি একটি পার্টিতে যোগ দেয়ার শর্তে রক্ষা পায় সেবার। চঞ্চল নামে এক ছেলেও সেলিম আল দীনের কাজে বিরক্তি মনোভাব প্রকাশ করায় কম ভোগাান্তির শিকার হয়নি। আজ সে বেঁচে থাকলে হয়তো শিমুলের পাশে দাঁড়াতো এসে।
যৌন হেনস্থার শিকার ভিক্টিমদের পাশে সহযোগিতার হাত না বাড়াতে পারলেও সমাজের লোকের ধর্ষককে রক্ষা করতে মিথ্যাচারিতা ভুক্তভোগীর ভোগান্তি বাড়ায়, আরও বিপদে ফেলে তাকে, যেটা অমানবিক। দেখলাম, অভিনেত্রী শিমুল ইউসুফও সেলিম আল দীনের পক্ষে লিখতে গিয়ে জাবি’র মুশফিকা লাইজু শিমুলকে তুুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং কটাক্ষ করেছেন। আবার এও বলেছেন সে কেন বিচার নিয়ে তার কাছে গেল না! তিনিই নাকি এর বিচার করে দিয়ে তাকে দিয়ে মাপ চাইয়ে দিতেন। শিমুল ইউসুফের মতো আরও অনেকেই তার গুণের নানাবিধ গান গেয়ে জোর দাবি উথ্থাপন করেছেন যে, আল দীনকে ঘিরে মুশফিকার এই অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, এতো গুণীলোক সে হতেই পারে না একজন নির্যাতক বা ধর্ষক। যেনো গুণবান হলে কেউ কোনদিন নির্যাতক বা ধর্ষক হয় না পৃথিবীতে!
সেলিম আল দীন যেসব শিক্ষার্থী মেয়েদেরকে হেনস্থা করেছে, তারা যদি একে একে এসে বলে দেয় সব গুপ্তকথা, তাহলে হয়তো মৃত সেলিম আল দীনের সকল কর্মের আগে ধর্ষকেচ্ছু সেলিম আল দীন হিসেবে পরিচিতি ঘটবে।
ধর্ষকের বিচার হয় ধর্ষণের রুলস দিয়ে, কারও সাহিত্যকর্ম বা দক্ষতার পরিমাপ করে নয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে হয়তোবা ব্যক্তির লৈঙ্গিক সামর্থেরও বিচার করা যেতে পারে ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে কিনা বুঝতে, যদি ইন্টারকোর্সের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তাকে, ওদিকে হয়তো ব্যক্তির ইরেকশনই মুশকিলে বাঁধা। এমন হলেও গতিপথ ভিন্ন ধরে ওরাল সেক্স, এবং এদিক-ওদিকের রুলস দ্বারা বিচার কার্য চালিয়ে নেবার উপায় থাকে।
যাই হোক, শুভবুদ্ধির মানুষ ব্যক্তির গুণ বিচার, সাহিত্য কর্মের বিচার, এবং ধর্ষণের বিচারের ধারাগুলো যে ভিন্ন ভিন্ন সেটা অনুভব করতে পারে প্রজ্ঞা, মন্যুষত্ব, জীবনবোধ, এবং উপলব্ধি দ্বারা। নইলে হয়তো অপেক্ষা করতে হয় আপনজন কারোর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার খবর পর্যন্ত। সাহিত্য এবং সাহিত্যিক দু’টো আলাদা বিষয়!