আমি চাই #MeToo থেমে না যাক

সালমা লুনা:

কেউ মিটু হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিজের সাথে ঘটা যৌন নিপীড়নের কাহিনী প্রকাশ করলে তাকে সমর্থন দিতে হলে আমারও একটা মি টু থাকতে হবে- এটা জরুরী না।
আমাকেও একইরকম নিগ্রহের একটি কাহিনী বলতে হবে তা না হলে আমি কাউকে সাহস দিতে পারবো না তার নিগৃহীত হবার কাহিনীটি প্রকাশ করতে এটিও ঠিক নয়।
আবার কারো এইরকম একটি কাহিনী থাকলে সেটি তাকে প্রকাশ করতেই হবে তা না হলে তার নীতিগত অধিকারই থাকে না অন্যকে ঘটনা প্রকাশ করতে বলার, সেটাও আবশ্যক না।
সবাই সবকিছু পারবেই বা তাকে পারতেই হবে এমন তো নয়।

এখন সবচেয়ে জরুরি যা পারতে হবে করতে হবে তা হলো মি টু র মতো ঘটনা প্রকাশকারী মানুষটির পাশে থাকা। তাকে বিশ্বাস করা। যতদিন পরেই তিনি তার সাথে ঘটা যৌন নিগ্রহের ঘটনাটি প্রকাশ করুন না কেন তা নিয়ে অহেতুক কোন কুতর্ক না করা অথবা কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করা, এটাই এই মুহূর্তে অতি জরুরি।

কদিন ধরে দেখছি মিটু নিয়ে ফান পোস্ট বা ট্রল চালু হয়েছে। কী করে পারছে মানুষগুলো কে জানে! যার যা ইচ্ছা করুক। মিটুর ফোকাস যেন সরে না যায়।
আমাদেরকে বুঝতে হবে এটা একটা যুদ্ধ। অন্ধকার থেকে নারীর আলোয় আসার যুদ্ধ। ভবিষ্যতের নরনারী উভয়ের জন্য নিরাপদ দেশ, একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরির যুদ্ধ। আমাদের অতিপ্রিয় আপনজনদের জন্য একটি মসৃন চলার পথ তৈরির প্রাকপ্রস্তুতি এটি।

প্রিয়তী-সীমন্তি, হোসনা শিশির কিংবা মুক্তারা এই পথ তৈরি করতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের কর্তব্য এখন তাদের পাশে থাকা। তাদের সাপোর্ট দিয়ে এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করা যাতে তারা যাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে সেই রফিকুল, প্রণব, জামিল, বিজু এবং মাহিদুলরা যেন কোনধরনের অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে অন্যায়ভাবে তাদের কোণঠাসা করতে না পারে।

তারা আইনের আশ্রয় নিন অথবা নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে কৌশলী হোন যাই হোক না কেন শুধু খেয়াল রাখা দরকার যেন এই নারীরা পাবলিক শেইমিং এর শিকার না হয়। তারা যেন এই নপুংসক সমাজের রোষানলে না পড়ে। এবং ভবিষ্যতের আরো অনেক নারী যারাই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান, তাদের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। তারা যেন নিপীড়কের মুখোশ খুলে দিতে পারেন সেই পথটি তৈরির জন্যই সকলের সতর্ক থাকা উচিত।

যারা যৌন নিপীড়নকারী তাদেরই একলা থাকার কথা। ভিকটিম কেন একলা হয়ে যাবে? কেন আমাদের মধ্যে এই ভয় যে নিপীড়নকারীর পাশেই বন্ধু থাকবে, ক্ষমতাবানরা থাকবে ? এমনকী রাষ্ট্রও তাদের পাশেই দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে?
এ কী মনুষ্যত্বের পরাজয় নয়! এ তো অশুভ শক্তির জয়।
আজকে শুধু জনাকয়েকের নাম এসেছে যৌন নিপীড়কের তালিকায়।
এই মিছিল কি এখানেই শেষ? নিশ্চয়ই নয়। এই মিছিল বেশ লম্বা।
এইসব নিপীড়কের মিছিলই যদি লম্বা হয় তবে ভিকটিম বা নিগৃহীত মানুষের মিছিল কতটা লম্বা হতে পারে অনুমান করলে শিউরে উঠতে হয়। কারণ এইসব নিপীড়ক তো শুধু এই কজনকে পীড়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি। এদের আগে পিছে আরো অনেক নারীই আছেন নিশ্চয়ই। তারা হয়তো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন। নিরাপত্তা পেলে তারাও মি টু বলে একযোগে চেঁচিয়ে উঠবেন এদের বিরুদ্ধে।

যত যাই হোক যে যতই নিপীড়কের পক্ষ নিক সকলেই সত্যিকারভাবেই চাই কারো আদরের কন্যাটি বোনটি যেন কখনো কোন যৌনলোলুপ শিকারীর কবলে না পড়ে। কোন শিশু কোন নারীপুরুষ যেন যৌন নিপীড়নের মতো একটি বিভীষিকাময় ঘটনার সম্মুখীন কখনোই না হয়। সেজন্যই মি টু কে ভয় নয় স্বাগত জানানো উচিত। এবং সেই সাথে ভিকটিমের পাশে দাঁড়ানোটাও জরুরি।

আমি আছি তাদের পাশে। ভবিষ্যতে আমার কন্যাটি যেন নির্ভয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারে। আমার বোনটিকে যেন কোন যৌনবিকারগ্রস্ত পুরুষের কবল থেকে নিস্তার পেতে চাকরি ছাড়তে না হয়। যেন আমার চেনা অচেনা কাউকেই কখনো আর মিটু লিখতে না হয় সেজন্যেই আমি চাই মি টু এক্ষুনি এখানেই থেমে না যাক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.