রাহাত হোসাইন অনিক:
#MeToo
আমাদের সন্তানেরা বড় হয়ে মানসিকভাবে কতটুকু স্বাবলম্বী হবে তার অনেক অংশই তার সাথে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে থাকা আচরণ ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। নির্ভর করে তার চারপাশের পরিবেশের উপর। একটা শিশু ছোট্টবেলা থেকেই যদি মনের ভেতরে বিভিন্ন জড়তা ও জটিলতা নিয়ে বড় হতে থাকে, তবে সে বড় হয়ে কখনোই স্বাবলম্বী, সফল হতে পারবে না।
আজ যেই শিশুটির কথা বলবো, যার সাথে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনা বলবো, তা শুধুই তার একার নয়, বরং প্রত্যেকের বাসায় হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যখন সে খুবই ছোট, তখন থেকেই তার বাবা-মা আলাদা থাকে। তার নিজের আর তার বড় বোনের পড়ালেখা করানোর জন্য তার মা দিনরাত পরিশ্রম করে। তাঁর মা তখন দর্জির কাজ করতো।

তিনি যাদের কাছে থেকে কাজ আনতেন তাঁরা অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন। তাদের মধ্যে এক লোক ছিলেন যে কিনা ওই ছেলে এবং তার বোনকে প্রচুর ভালো জানতেন বা ভালোবাসতেন, ছেলেটি ওই লোকটিকে “বন্ধু ” বলে ডাকতো। এবং ওই লোকটি ছেলেটিকে প্রায় অর্ধেক বেলা নিজের কাছেই রাখতো এবং কোলে নিয়ে আদর করতো। একটা সময় পরে সেই আদরগুলো অস্বাভাবিকভাবে হতে শুরু করলো, বাচ্চা ছেলেটিকে দিয়ে সে শরীর ম্যাসাজ করাতো এবং কোনো সময় ছেলেটিকে আদর করার ছলে লোকটি তার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করাতো ছেলেটির শরীরে।
ছেলেটি বাচ্চা ছিল তাই কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।
ছেলেটি যখন আরো একটু বড় হলো, তার মায়ের সাথে প্রাণের শহর ঢাকাতে এলো। তখন সে ক্লাস টু তে পড়ে। একদিন তাঁদের বাড়িওয়ালার ছেলে (25) তাকে নিয়ে একটা মাঠে গেলো ( তখন সবে মাত্র মিরপুর 12 DOHS এর কাজ শুরু হয়েছে) সেখানে নিয়ে তাকে জোর করেই ধর্ষণ করা হলো। ছেলেটি কান্না করছিল খুব, তার ব্লিডিং হচ্ছিল। পাশেই টহল পুলিশ থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে আসেনি তাঁরা! ছেলেটিকে ভয় দেখানো হলো কাউকে বললে আরো “ব্যথা” দেওয়া হবে ।
ছেলেটি ভয়ে কাউকে কিছু বললো না। কয়েক বছর পরে পারিবারিক সমস্যার কারণে ছেলেটিকে তার গ্রামে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেখানেও তাকে এক বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের (ছেলেটির এক পরমাত্মীয় যার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কুনজরের শিকার হতে হয়। একবার নয় বরং বারবার।
ছেলেটি অনেক চেষ্টা করছে অন্যদের জানানোর, পারেনি!
কারণ কেউ হয়তো বিশ্বাসও করবে না যে একটা ছেলের সাথে এমনটা হতে পারে!! তখন থেকে এই বর্তমান পর্যন্ত ছেলেটির ভেতরে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে সে দিনের পর দিন। কোথাও না কোথাও তার নিজের প্রতি ঘৃণা কাজ করে।
আর আত্মবিশ্বাস দিনের পর দিন আরও কমে যাচ্ছে। ছেলেটা কে জানতে চান??!
আমি। আমি মো: রাহাত হোসেন অনিক। এই দেশে, এই পৃথিবীতে এমন হাজার হাজার অনিক আছে যারা এই অবিচারের শিকার। আচ্ছা বলুন তো, এর শেষ কোথায়?