MeToo: এবার অভিযোগ পাঠক সমাবেশের কর্ণধারের বিরুদ্ধে

তাসনুভা আনান:

#MeTooBangladesh

চাকুরী নাই, বেকার জীবন, পথে পথে ঘুরছিলাম বেশ দীর্ঘ দিন। এক বড় ভাই জানালো পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের কর্ণধার শহিদুল ইসলাম বিজু ভাই একজন উদ্যমী নারী খুঁজছেন তার কাজে সহযোগিতা করার জন্য। বাহ! ভালো তো, আমারও জব দরকার।

পরদিন সকালে তার অফিস গেলাম দেখা করার জন্য, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসলেন। ওনার রুমে নিয়ে গেলেন। পরিচয় কথা শুরু করলেন। আমার জন্য খাবার আনালেন। প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে উনি আমাকে গুলশান ব্রাঞ্চ এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। সেখানে যাওয়ার জন্য বললেন। গেলাম। আমাকে বললেন ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেট করতে, কীভাবে সেল বাড়ানো যায়, কিন্তু সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা ছিলেন তাদের বলা হলো, আমি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে গবেষণা করবো, ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না, আমায় বললেন এক আর এখানে এসে দেখি আর এক। ওনাকে বেতন এর কথা জিজ্ঞেস করলাম। অফিসে ডাকলেন। গেলাম।

শহিদুল ইসলাম বিজু

সেদিন শাড়ি পরেছিলাম, রুমে ঢুকলাম উনি আমাকে বসতে বললেন পাশে সোফায়, কিন্তু পাশে চেয়ার খালি ছিলো। আমার প্রশংসা শুরু করলেন। আমার চোখ সুন্দর, দেখতে সুন্দরী, আমাকে ওনার ভীষণ ভালো লাগে। এরকম আরও নানা ধরনের কথাবার্তা। উঠে বেরিয়ে যাবো তার উপায় নাই, দরজা উনি অটো লক করে দিয়েছেন।

তখন কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। হাত-পা শীতল হয়ে আসছিল। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওনার সাথে স্বাভাবিক কথা বলার চেষ্টা করছিলাম। বেতন এর কথা জিজ্ঞেস করলাম, উনি বললেন ১০০০০ টাকা, আর বাকি ৫০০০ টাকা পারসোনাল ভাবে দিবেন। কথাটা শুনে মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো।

বিজু ভাই এবার আমার পারসোনাল প্রশ্ন করলেন, কেমন ছেলে পছন্দ?? বললাম আপনার মতো মধ্য বয়স্ক নিশ্চয়ই নয়। সে আমার হাত ধরে ফেলেন। আমার আঁকাবাকা আঙুল ১০ টা নাকি ১০ টা পেনিস এর সমান। আমি যেন আর কারও কাছে না যাই, বললাম, ভাষা ঠিক করে কথা বলতে, তার নাকি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা, উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে জোর করে লিপ কিস করলেন। ছেড়ে দিতে বললাম, ছেড়ে দিলেন, কিন্তু দরজা খুললেন না। এবার তার জিপার খুলে পেনিস বের করে বললেন, ওনার সাইজ আমার পছন্দ হয় কিনা, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে তিনি ঘটিয়ে ফেললেন এসব ঘটনা, এবার আর পারলাম না এতোক্ষনে সে সব বাঁধ ভেঙে ফেলেছেন। বললাম দরজা না খুললে আমি চেঁচাবো। আপনি যদি আমায় রেপ করেন, তাহলে এমনভাবে করেন যেনো আমি মরে যাই, আর যদি সেটা না হয় তাহলে আমায় সসম্মানে যেতে দেন।

ইচ্ছা করছিলো লোকটাকে কুত্তার মতো পিটাই। কিন্তু যার পরিচয়ে সেখানে গেলাম, শুধুমাত্র তার সম্মানের কথা ভেবে চুপ করে হজম করলাম। উনি দেখলাম একটু ভয় পেলেন। তারপর দরজা খুলে দিলেন বের হয়ে আসলাম।

যেসব #সেলিব্রেটি রা ভাবছেন আমি নিজে আলোচনায় থাকার জন্য বা সেলিব্রেটি হবার জন্য লিখেছি তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি, শিশির জন্মের পর থেকেই তারকা, আমায় দেখার জন্য আশেপাশের সাত গ্রাম থেকে লোকজন এসেছিলো। এরপর স্কুল কলেজ থিয়েটার নাচের স্কুল, এমনকি আমার প্রেম সবখানেই আমায় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা সবসময়, সব খানে সদা বিরাজমান, সুতরাং নতুন করে তারকা হবার কিছু নেই।।

এবার সুশীল সমাজের লোকদের বলছি। উপরে ঘটনাটা এক চুল পরিমাণ মিথ্যা না। কাছের মানুষগুলো বলেছেন লেখার জন্য আর লেখাটার প্রয়োজনীয়তা বলি শুনুন,
শুরু থেকেই আপনাদের সাথে চলার জন্য আপনাদের মেইনস্ট্রিমের মানুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করবো বলেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমার কোনো ট্র্যাডিশনাল জীবনের অভিজ্ঞতা নেই। এরকম হাজারও বিজুদের ছোবলে হারিয়ে গেছে অনেক Transwoman..

বিচার আপনাদের কাছে চাইলে কোনোদিন পাওয়া যাবে না, আপনারা বিচার করতেও পারবেন না। যে সমাজ একজন তনু হত্যার বিচার করতে পারে না, সেই সুশীল সমাজ কী করে একজন transwoman এর সম্মান দেবে?

শিশিরের নামের পাশে একটা সাইনবোর্ড ঝুলে আছে,
#বেশ্যা, তাই হয়তো কথাগুলো লিখলাম। পুজা অন্বেষারা ভদ্র ঘরের সন্তান ছিলো, তাই একজন সুইসাইড করেছে, আর একজন নয় মাস ধরে নিখোঁজ।
সভ্য, সুশীল সমাজের কাছে একটাই প্রশ্ন,,
আর কত দিন চলবে এরকম????

#MeTooBangladesh

#MeToo

#SolidaritywithTasnuva

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.