আফরোজা চৈতী:
#MeToo নিয়া জোর আন্দোলন চলতেছে পৃথিবীব্যাপী। এটা শুধুই নারীর জন্য কোন প্লাটফর্ম নয়। বরং নারী-পুরুষ উভয়েই নির্বিশেষে সকলের। এর আগে “নারীবাদ” নিয়া বলছিলাম, আর এবার বলবো নারীবাদের জন্য #MeToo নিয়া। ভাবছিলাম লিখবো না, কিন্তু মনে হইলো এই আন্দোলন নারীবাদ আন্দোলনের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ সেইটা বলা দরকার।
প্রথমেই স্যালুট দিতে চাই সুপ্রীতিকন্যাসহ সকল কন্যাদের, যারা এই নারীবাদ আন্দোলনের একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম #MeToo এর সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। #MeToo কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশের হাতিয়ার না, বরং নারীবাদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা প্লাটফর্ম, একটা সুরক্ষিত স্থান, যেখানে নারী, পুরুষ সবাই নির্বিশেষে তার প্রতি ঘটে যাওয়া যৌননিপীড়নের কথা বলতে পারেন।
যৌন নির্যাতন এর শিকার শুধুই নারী হোন, তৃতীয় লিঙ্গ বা পুরুষ এদের উপর এইসব হইলেও সেইটা নির্যাতনের আওতায় পড়ে না এটা যারা ভাবছেন, যারা মগজে, মননে, মেধায়, লেখনীতে ভাইবাই নেন যৌননিপীড়নের স্বীকার শুধুই ষোল বছরের কিশোরীরাই হোন, কোন ষোল বছরের কিশোর বা তৃতীয়লিঙ্গ সম্প্রদায়ের কেউ হইতে পারেন না তাদের আমি বলবো তাদের এইসব নারীবাদী আন্দোলন থাইকা ইস্তফা দিয়া ঘরে ফেরত যাওয়া উচিত। তেনারা ঘরে বইসা কিট্টি পার্টি করেন, মুখরোচক খাবার খান, আর টিভি খুইলা ফ্যাশন টিভি দেখেন।
নারীবাদ আন্দোলন যেমন নারীপুরুষ সবার জন্য একটি সার্বজনীন ধারণা পুরুষতন্ত্রের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে, তেমনি #MeTooও সবার উপর ঘটে যাওয়া সকল ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সার্বজনিন প্লাটফর্ম। এইখানে শুধু নারীই তার কথা বলতে পারবেন তা নয়, বরং এখানে কথা বলতে পারেন পুরুষ, তৃতীয়লিঙ্গ সবাই। আর এই বলার জন্য যে সৎসাহসের পরিচয় তারা দিবেন সেটার জন্য তাদের আমি ভিকটিম বলতে চাই না, বরং যোদ্ধা বলতে চাই। তারা নারীবাদ এর স্বপক্ষে দাঁড়ানো যোদ্ধা যারা তাদের সত্য প্রকাশের অকুন্ঠ প্রতিবাদ দিয়ে এক অর্থে নারীবাদকেই এগিয়ে নিয়ে যান অনেকখানি। তাই যেসব তথাকথিত নারীবাদীগণ তাদের “ফুলের মতো পবিত্র”ভাই বেরাদরদের বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন, সীমন্তিকে ভিকটিম আখ্যা দিয়ে বা সুপ্রীতি ধর এর অতীত ব্যবচ্ছেদ নিয়ে, তাদের বলবো।
আফারা, ভাইয়েরা আপনারা নারীবাদের উল্টা রাস্তায় হাঁটতেছেন। যৌননিপীড়ক কারো ভাই, প্রেমিক, স্বামী হইলেও আদতে সে একজন যৌননিপীড়কই! আর একজন যৌননিপীড়কের পক্ষে একজন নারীবাদী হিসেবে আপনার বা আপনাদের কলম ধরাটা মানায় না। আপনাদের কলম কথা বলবে ন্যায় এর পক্ষে, সত্যের পক্ষে, আর সেখানে সত্য বলা এই সব যোদ্ধাদের বাবা-মা নিয়া যদি টানাটানি শুরু করে দেন তবে তো আপনারাও সেই নিপীড়কের কাতারেই পড়লেন। পার্থক্যটা কোথায়?
সুপ্রীতি ধর প্রণব মশাই এর প্রাক্তন ছিলেন কিনা, অথবা প্রণব মশাই এর বর্তমান কে কে আছেন, সেসব গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত একটি ষোল বছরের কিশোরী তার পিতৃতুল্য এক ব্যক্তি মারফত দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার সেই যন্ত্রণা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। গুরুত্বপূর্ণ তার সত্য বলার সৎসাহসটা!!