উইমেন চ্যাপ্টার:
বাংলাদেশে যে #মিটু আন্দোলন এখন সত্যি সত্যিই আছড়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। একের পর এক মেয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। হাজার বছরের সামাজিক ট্যাবু ভেঙে বেরিয়ে আসছে মেয়েরা, সাহস পাচ্ছে বলতে, ‘হ্যাঁ, আমাকে ওই লোক যৌন হয়রানি করেছিল’। এটা অবশ্যই একটা পজিটিভ সাইন নারী অধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা আক্তার প্রিয়তীর হাত ধরে যে আন্দোলনের সূচনা, তাতে আগুনে ঘি ঢালে শুচিস্মিতা সীমন্তির অভিযোগ। মিডিয়ার একজন সুপরিচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সীমন্তির লিখিত অভিযোগটি তদন্তে যাওয়ার পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন হয়রানি নিয়ে নিজের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন আসমাউল হোসনা নামে অপর এক নারী। অভিযোগ তুলেছেন যাত্রী নামে একটি মিডিয়ার কর্ণধার ও টিভি উপস্থাপক জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে।
গত ৭ নভেম্বর লেখা ঐ পোস্টটিতে আসমাউল হোসনা জানান, আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে ২০১৩ সালে বাবার বয়সী এক ব্যক্তির কাছ থেকে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
তার পোস্টটি প্রথমে ইংরেজিতে লেখা হলেও পরবর্তিতে সবার অনুরোধে তিনি তা বাংলায় লিখেন। নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
এটি ২০১৩ সালের ঘটনা। আমি তখন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। ফেইসবুকে একটি ব্যক্তির সাথে আমার সাধারণ কথা বার্তা চলছিলো যার সাথে এর আগে দুই বার আমার দেখা হয়েছে, এক বার বিওয়াইএলসির একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এবং আরেকবার যাত্রি ইন্সটিটিউট এ। একদিন বিকেলে আমরা শিল্পকলায় আড্ডা দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম। ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরি থেকে পড়া শেষ করে আমি ব্যাক্তিটির সাথে দেখা করতে গেলাম।
আমরা কফির অর্ডার দিলাম আর কফি পান করতে বই পড়ার অভ্যাস, আর এটা সেটা নিয়ে ভাল আড্ডা দিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি বাসায় ফেরার জন্য আড্ডা থেকে উঠলাম। শিল্পকলার ক্যান্টিন থেকে মৎস্য ভবনের গেইটের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হাঁটার পথে লোকটি আমাকে বলল, “আমি তো তোমার বাবার বয়সী; এর পরেও আমরা ভালো বন্ধু হতে পারি। কি বল?” এটি বলতে বলতে সে আমার বাম কাঁধে হাত রাখলো। আমি চুপ ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম এটি হয়তো বন্ধুত্বমূলক আচরণ। তারপর উনি আমাকে বললেন শিল্পকলার আরেকটা প্রান্তে যে দিকে দুদকের অফিসের সাইড সে দিকে একটু হাঁটতে, তারপরে যেতে। (আমি জানতাম না তখন ঐ রাস্তাটি সন্ধ্যার পরে ফাঁকা ও অন্ধকার থাকতো্তো।) আমি বলাম ঠিক আছে, আমি ১০ মিনিট হেঁটে তারপর বাসায় যাবো।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় লোকটি একটি গাছের নিচে থামলো যেখানে বেশি অন্ধকার ছিলো। রাস্তাটি সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিলো। আমি তখনো আঁচ করতে পারছিলাম না আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। লোকটি তার ব্যাগ থেকে লিপ জেল বের করে দিলো। আমাকে ও দিতে বললো। আমি বললাম, না আমি অন্য মানুষের ব্যবহৃত লিপ জেল দেই না। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটি আমাকে জোর করে ধরে চুমু খেলো আর আমার শরীরে বাজেভাবে হাত দেওয়া শুরু করলো। আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম। তাড়াতাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। রাস্তা পার হয়ে একটি রিক্সায় উঠে পড়লাম।
এই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে ভয়ঙ্কর আঘাত পেলাম। সারারাত কান্না করলাম এবং ঘুমাতে পারলাম না। আমি বাসা থেকে বের হতে ভয় পেতাম, নতুন মানুষের সাথে দেখা করা তো আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। এই আতঙ্ক আর ভয় থেকে বের হতে আমার কয়েক বছর লেগেছে। সত্যি বলতে কি, এখনো এই আতঙ্ক আমার মধ্যে কাজ করে।
এখন আমি ভাবি আমি যদি আমার জীবনের ঐ সময়ে একটু সাহসী হতাম এবং এই যৌন নিপীড়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারতাম!
আমি বিশ্বাস করি, আমি এখন একজন সাহসী মানুষ, তাই আমি আমার মানসিক আঘাত ও অন্যায় নিয়ে এই ঘটনাটি লিখতে পারছি। আমি এখন আরো বেশি সাহসী কারণ আমার দুইটি ভাগ্নী আছে, তাদের জন্য, সহযোদ্ধা নারীদের জন্য, সকল মানবজাতির জন্য একটি যৌন নিপীড়নমূলক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।
সেই অমানুষটির নাম জামিল আহমেদ যে একজন সংবাদ পাঠক, অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও যাত্রি ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। আমি এই যৌন নিপীড়কের শাস্তি চাই।