আমাদের সেক্সুয়াল হিপোক্র্যাসি

শেখ তাসলিমা মুন:

পরিবারে একটি ছেলে, একটি মেয়ে। মেয়েটি ১৪, ছেলেটি ১৬। এ সময়ে শরীরে হরেক রকম পরিবর্তন হয়। হরমোন পরিবর্তনে তাদের শরীরের নাম্বার অফ চেঞ্জেস ঘটে, যা কেবল শরীর নয় মনের উপর সীমাহীন প্রভাব ফেলে।
মেয়েদের ঋতু এবং স্তনের প্রকাশ ঘটে। ছেলেটির যৌন আকাঙ্ক্ষার উন্মেষ তাকে বিব্রত করে রাখে সারাক্ষণ। এ দুটি ছেলেমেয়ের কোনটিই তাদের শরীরের এ পরিবর্তন বিষয়ে কোন তথ্য পায় না। নিজের শরীর যখন তার কাছে হয়ে ওঠে অপরিচিত, শত্রু মনে হয় নিজের শরীরকে। সময়ের সাথে তাকে যুঝতে যুঝতে নিজের শরীরের সাথে সহঅবস্থান করতে হয়। সে সহঅবস্থান সবার জন্য সুশৃঙ্খল হয় না।

একটি মেয়ের এ সময়ে হরেক বিধি নিষেধ আসে। সেক্সুয়াল আচরণ কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে সে বিষয়ে কোনো র‍্যাশনাল এবং তথ্যভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে তাদের প্রতি অবদমন আরোপ করা হয়। একজন কিশোরীকে রেডি করা হয় বয়স্ক একজন পুরুষের জন্য। আর ছেলেটির জীবন হয় ছাড়া এঁড়ে বাছুর।

শেখ তাসলিমা মুন

কীভাবে এ নতুন আচরণ বিষয়ে জানা যায়, নিবারণ করা যায়? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তারা শিকার হয় প্রতিবেশী কোন সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেটেড বয়স্ক নারীর। এরপর শিকারে মত্ত হয় তারা সমাজের সবখানে। হাতড়ে বেড়ায় সারাজীবন। একটি পূর্ণাঙ্গ সেক্সুয়াল অভিজ্ঞতা তাদের খুব কম হয়। একটি সম্পূর্ণ সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স কী, অনেকে সারা জীবনেও জানে না।

বেশীর ভাগ ছেলে অতিরিক্ত মাস্টারবেশনে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেক্সুয়াল ক্ষমতা হারিয়ে যায়। আর্লি ইজাকুলেশন, ইমপোটেন্স সমস্যা যখন, তখন তারা বিয়ে করার বয়সে পৌঁছে। সেই বয়সে তারা যখন বিয়ে করে তখন সেক্সুয়াল জীবনে স্বামী এবং স্ত্রী দুজন দু ধারার দু বয়সের, দু আকাঙ্ক্ষার, দু ক্ষমতার। মিট করে না তাদের সে আকাঙ্ক্ষা। তারা জীবন যাপন করে দুটি আলাদা জীবন।

প্রতিটি সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স স্ত্রীর জন্য অতৃপ্তির, কিন্তু তারা মুখ ফুটে কিছু বলবে না। আর্লি ইজাকুলেশন, হাফপোটেন্স নিয়ে পুরুষটি ভোগে হীনমন্যতায়। নারীটি চুপ করে বঞ্চনার জীবনে কিশোরকালে যেমন বঞ্চিত থাকে, বিবাহিত জীবনেও তার ভাবনা হয়, ‘ও আচ্ছা, সেক্সুয়াল জীবন তাহলে এই?’ সে বঞ্চনায় অভ্যস্ত হয়ে ঘর সংসার ঘটিবাটি কেনা, সেমাই জর্দা রান্নায় মন দেয়।

কিন্তু সেক্সুয়াল সম্পর্ক মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাদের সেটি পেছন ছাড়ে না। শুরু হয় বচসা। স্বামীর সন্দেহ। নিজের অক্ষমতার শিকার করা হয় মেয়েটিকে। সংসার হয় নরক। মেয়েটি সে জীবনে যখন মুখ চেপে থাকার অভ্যেসে সংগ্রামে লিপ্ত ‘তিনি’ তখন তার অক্ষমতা ঢাকতে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন দুনিয়া। অফিসের কলিগ বা অধস্তনের দিকে গোপনে তাকিয়ে তিনি ভাবেন, ‘নাতো সেক্সুয়াল ডিজায়ার আমার ঠিক আছে।’ ‘আমি তো একে দেখে এট্রাক্টেড হচ্ছি।’ জিনিসটা তো ঠিকই নড়াচড়া করে উঠছে!

‘তাহলে?’ ‘যত দোষ ঘরের নারীর।’ ‘তার আসলে কিছু নেই আমাকে এট্রাক্ট করার।’ তিনি তখন বাইরে হাতড়ানো শুরু করে দিয়েছেন। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ছোট বড় চেনা অচেনা টেলিফোন সেক্স ব্রোথেল। সব তখন তেনার চাই-ই।

অথচ সিনারিওটা যদি এমন হতো, একটি ছেলে এবং একটি মেয়েকে অবদমিত সেক্সুয়াল জীবনে বাধ্য না করে তাদের সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়ারের সহজ স্বাভাবিক ডিজায়ারের উন্মেষকালে সমবয়সী পার্টনারে তারা সহজ এবং সবাভাবিকভাবে সেক্সুয়াল জীবনের স্বাদ পেতো। তারা নর্মাল সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়ারের অধিকারী হয়ে নিজেরা একটি অরগানাইজড দায়িত্বশীল সেক্সুয়াল সম্পর্কের অধিকারী হতো।

প্রতিটি বয়সের প্রতিটি স্টেজে ম্যাচিওরড মানুষ হয়ে গড়ে উঠতো। তারা জানতো বুঝতx পরখ করতো এবং কোন সেক্সুয়াল ডিজাইনটি তার, সেটি বুঝে সেভাবে তারা একটি স্বাস্থ্যকর সেক্সুয়াল জীবন যাপন করতো। তারা নিজেরা সুখী এবং তৃপ্ত সেক্সুয়াল জীবনের অধিকারী হয়ে একটি সুস্থ জীবন যাপন করতো। তাতে করে চারপাশটা সেক্সুয়াল অপরাধ এবং বৈকল্য বিকৃতিতে ভরে উঠতো না। এক একটি মনস্টারে সমাজ পরিবার প্রতিষ্ঠান কর্মক্ষেত্র ভরে যেতো না।

যে সমাজ জীবনের শুরুতেই মিথ্যে শেখায়, হিপোক্রাসির প্রশিক্ষণ দেয়, ভণ্ডামি শেখায়, সেখানে আপনি কী দেখবেন? যা দেখছেন তাই দেখবেন! আপনি কাকে কী বলবেন? যে বাবার ১৩ বছরের মেয়ে যৌন সন্ত্রাসের শিকার, খোঁজ নিয়ে দেখেন তিনি সেই বাবা নিজে কী করেন! কত কিশোরীর উপর তিনি থাবা দিচ্ছেন প্রতিদিন। সেই কিশোরীর কন্যার মাকে নিয়ত বিট্রে করছেন। ঘরের কাজের মেয়েটির ঘরে রাত দুপুরে কে টোকা দেয়?

তিনি, সেই বাবা কিভাবে গলা উঁচু করবেন? সে শক্তি কি তার আছে?

#MeTooBangladesh

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.