সীমন্তির অভিযোগ অবশ্যই ‘আমলে’ আনতে হবে

শেখ তাসলিমা মুন:

#MeTooBangladesh
প্রণব সাহা নামক শিশু এবিউজার বলেছেন, একটি মিথ্যে অভিযোগ আমলে নিতে হবে কেন? ঠিকই তো, মেয়েদের অভিযোগগুলো কেন অভিযোগ হিসেবে আমলে নিতে হবে? তারা কি বললো না বললো তা কেই বা এ যাবত ‘আমলে’ নিয়েছে?

তবে প্রণব সাহা একটি জায়গায় ভুল করেছেন। সময় বদলেছে। সময় যে কোনদিন বদলাবে সেটা আপনি তখন যেমন বুঝতে পারেননি, এখন সময় বদলানোর পরও বুঝতে পারছেন না যে সময় বদলেছে। সীমন্তি মিথ্যে বলবে সে বিষয়ে প্রণব বাবু আপনার যুক্তিখানা বড় কাঁচা হয়ে গেছে, ‘হয়তো মা কিছু বলেছে’।

শেখ তাসলিমা মুন

সীমন্তির এখন ২৭ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক। তার মায়ের সাথে প্রণব সাহার সম্পর্ক চুকে গেছে তাও বহুবছর হয়ে গেছে। সীমন্তি এখন তার মায়ের কথায় উঠবে আর বসবে সেটি কেউ বিশ্বাস করবে না। সম্পর্কজনিত কারণে এখন ‘প্রতিশোধ’ নিতে চাইবে, সেটিও বড় ফাৎরা যুক্তি। ২৭ বছরের একটি স্ক্লার মেয়ে যে বিদেশে সফলতার সাথে তার একাডেমিক জীবন নিজের স্কলারশিপে পরিচালিত করছে সেই ইন্টারমিডিয়েটের পর থেকে, যে বাংলাদেশে বাস করে না বহুদিন, বাংলাদেশের বিষয়ে সম্পৃক্তও নয়, সে তার মায়ের সাথে যোগসাজশে এতো বছর পর একজন প্রণব সাহাকে শুধু ‘ক্ষতি’ করার জন্য এ গল্প ফাঁদবে না, এটা বোঝার ক্ষমতা যে কারও আছে।

মেয়েটি যে বয়সে তার বেদনা ও অপমানের সেই বিস্মৃতি ওপেন করেছে, ঠিক এই বয়সেই একটি মেয়ে তা ওপেন করার সাহস অর্জন করতে পারে। তার আগে না। কেউ কেউ সারা জীবনেও পারে না। সীমন্তি পেরেছে। মনে রাখতে হবে, প্রণব সাহা ছিল তার মায়ের সম্পর্ক। সে যদি মায়ের সম্পর্কের প্রতি বিরূপ থাকতো এবং সে কারণে কোনো গল্প মানুষ এ বয়সে এসে তার মায়ের সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার এতো বছর পরে করে না। সে বরং তার মায়ের সম্পর্ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য নিজেই সমস্ত বিষয়টা বহন করে গেছে। মাকে পর্যন্ত জানায়নি। এ বেদনার ভাষা কী অনুমান করতে আমার বুক ভেঙে যায়।

সীমন্তির অভিযোগ অবশ্যই ‘আমলে’ আনতে হবে। জনাব প্রণব সাহা, আপনার লেইম যুক্তি গ্রহণ করতে আমরা রাজী নই। আপনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবেই।

বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি!

কলিগ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না। সীমন্তি এখন ২৭ বছর বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের প্রতি যে মেয়েটি কিনা তার স্টেপ ডটার ছিল। সে একইসাথে মায়ের সাথে সম্পর্ক মেইনটেইন করেছে এবং মায়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে এবিউজ করছে একই ঘরের ছাদের নিচে। ভেবে দেখেছেন বিষয়টি কতোটা গুরুতর? আজ এটি এড়িয়ে গেলে কাল আপনার মেয়ে রক্ষা পাবে না। এ দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। নির্মোহ হতে হবে ব্যক্তি সম্পর্ক বিষয়ে। কোনটা রাইট এবং কোনটা রং সেটি আলাদা করে আপনার ভূমিকা বিষয়ে অবস্থান নিতে হবে।

একটি কথা মনে রাখতে হবে, প্রেম-ভালবাসা, সংসার, প্রফেশন সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের সন্তানেরা, আমাদের শিশুরা। তাদের নিরাপত্তা আমাদের হাতে, কারণ শিশুকালটাই তারা থাকে আমাদের উপর ডিপেন্ডেন্ট। আমরাই তাদের প্রটেক্টর। আমাদের এ জবে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি। তাদের নিরাপত্তা যতোটা পারি আমাদের দিতে হবে। আমরা সেখানে ব্যর্থ হলে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সে ব্যর্থতার দায় আমাদের বহন করতে হবে। শিশুরা আমাদের বিশ্বাস করবে না কোনদিন। তারা আমাদের প্রতি বিশ্বাস হারাবে। শিশুরা যখন প্রাপ্তবয়স্কদের উপর আস্থা হারায়, আমাদের সে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের কোনো মূল্য নেই!

এগিয়ে আসুন! ভূমিকা রাখুন!
#SolidarityShucheesmitaSimonti

#MeTooBangladesh

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.