তসলিমা- মাসুদা বাহাস, আমরা কী শিখলাম?

দিলশানা পারুল:

তসলিমা নাসরিন এবং মাসুদা ভাট্টির ফেসবুক বাহাস পড়লাম। মনোযোগ দিয়েই পড়লাম এবং শেষ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলতে বাধ্য হলাম। যদিও আমি আদার বেপারী, জাহাজের ব্যবসায়ীদের নিয়ে কথা বলার এলেম আমার নাই। তারপরও দুইটা কথা না বলে পারছি না।

প্রথমত দুইজনের লিখাই ব্যক্তিগত বাহাসের বাইরে আমার কাছে আর কিছু লাগেনি। আমাদের দেশের নারীবাদীই বলেন, আর যার কথাই বলেন, ব্যক্তির উপরে এরা কেন উঠতে পারে না, এইটা একটা বিরাট কষ্টের জায়গা। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এতো বড় বড় (?) মানুষগুলোকে যত তাড়ায়, ভাবায়, সামগ্রিক নারীর বিষয়গুলো যদি এদের ততখানিই ভাবাতো, তবে আজেক ইট ভাংতে আসা মায়ের বাচ্চাটার মাথা ইট পড়ে থেঁতলে যেতে হয় না।

তসলিমার লিখা থেকে জানার পর আরেকটা ব্যাপার আসলেই অবাক হই, এরা সবাই উন্নত বিশ্বে পলিটিক্যাল এসাইলাম নেয়ার জন্য অস্থির হয় কেন? এরা যারপরনাই উচ্চ শিক্ষিত, এইটুকু কি জানে না পলিটিক্যাল এসাইলামের বাইরেও বিদেশ যাওয়া যায়? নিজের যোগ্যতা দিয়েই যাওয়া যায়? অন্যের দয়া লাগে না, বা মিথ্যা কথা বলা লাগে না।

যাই হোক এবার প্রসংগে আসি। প্রথম বিষয় হলো, চরিত্রের সংজ্ঞা। দেখেন চরিত্র শব্দটার সাথে লিঙ্গের কোনো সম্পর্ক নাই। সে নারীই হোক আর পুরুষই হোক। পশ্চিমা বিশ্বে শারীরিকভাবে কেউ কারো প্রতি আকর্ষিত হলে এবং তারা সিংগেল থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের জৈবিক চাহিদাটা মিটিয়ে নেয়। এতে নারী বা পুরুষ কেউই চরিত্রহীনও হয় না, বেশ্যাও (!) হয় না। যে সমাজ যত পিছানো, নারীকে পিছিয়ে রাখার জন্য চরিত্র শব্দটাকে তারা তত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

এখন ঢাকা শহরে টকশোতে অংশগ্রহণকারী নারী বা পুরুষ সকলকেই ধরেই নেয়া হয় যে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নারী এবং পুরুষের অংশ। এরা চিন্তা করতে পারে এবং বিষয়ভিত্তিক বলতে পারে বলেই তো এরা পাবলিকলি এ্যাপিয়ার করছে, না? এখন টকশোতে একজন ব্যারিস্টার অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একজন সংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলেছেন। এইটাকে আসলে নারী হিসেবে ভাবার সুয়োগ আছে কি? যিনি সংবাদিক, তার বরং এইটা ভাবা উচিত তার প্রফেশনাল চরিত্রের সাথে আসলে কোথায় কম্প্রোমাইজ হয়ে গেলো যে তাকে চরিত্রহীন বলা হচ্ছে!

মাসুদা ভাট্টি টিভিতে কি একজন নারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন? না সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন? সাংবাদিকতার নারী পুরুষ বিভাজন হয় বলে তো জানি না! কিন্তু সাংবাদিকতার সরকারপন্থী এবং বিরোধীপন্থী বিভাজন হয় সেইটা বরাবরই দেখে এসেছি। ফেবুতে এতো ইতিহাস লিখলে আসলে লোকে পড়ে না, বিরক্ত হয়। নইলে আসলে আরও অনেক কিছু বলার ছিলো।

শুধু বলবো, নারীবাদ কোকাকোলার মতো কোনো প্রডাক্ট না যে এইটারে সব জায়গায় বেচতে শুরু করে দেবেন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.