উইমেন চ্যাপ্টার:
এবছর শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরাকের মানবাধিকার কর্মী নাদিয়া মুরাদ এবং কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েগি। দুজনই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবদানের জন্যই এই পুরস্কার পেয়েছেন। শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি তাঁদের দুজনের নাম ঘোষণা করে। নোবেল কমিটি বলছে, যুদ্ধকালে ও সশস্ত্র সংগ্রামের সময় যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে অবদান রাখায় এই দুজনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় ছোট্ট গ্রাম কোচোতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া মুরাদ। ২০১৪ সালে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী (আইএস) গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে সবাইকে অস্ত্রের মুখে একটি স্কুলে দাঁড় করায়। এসময় আইএস গুলি করে পুরুষদের হত্যা করে, গুলিতে নাদিয়ার ছয় ভাইও অন্যান্যদের সাথে নিহত হয়। পুরুষদের হত্যা করার পর আইএস জঙ্গিরা নাদিয়া ও অন্য নারীদের একটি বাসে করে মসুল শহরে নিয়ে যায়। সেখানে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হন নাদিয়াও। আইএসের যৌনদাসী হিসেবে বেশ কিছুদিন থাকার পর পালিয়ে আসেন তিনি। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন যৌন-নির্যাতন বিরোধী মানবাধিকারের প্রতীক।
আইএসের কাছ থেকে পালিয়ে আসার পর নাদিয়া মুরাদ জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হোন। মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লুনির সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দী ইয়াজিদি নারী ও যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
নোবেল কমিটি বলেছে, নাদিয়া এত কষ্ট সহ্য করেও অন্যদের পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন।
ব্রিটিশ অনলাইন দ্য ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লন্ডনে এক সাক্ষাৎকারে নিজে তার বন্দী জীবনের লোমহর্ষক কাহিনী জানিয়েছেন নাদিয়া মুরাদ। তাঁর বয়স এখন ২৪ বছর। ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ শিরোনামে নাদিয়ার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।
এক সাক্ষাতকারে নাদিয়া জানান, তিনি একজন মেকআপ আর্টিস্ট হতে চান। নিজের একটা স্যালন খুলতে চান। নতুন করে জীবন শুরু করতে চান। তিনি আইএসের হাত থেকে বেঁচে পালিয়ে আসা তরুণী হিসেবে পরিচিতি পেতে চান না।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ মানবাধিকারবিষয়ক পুরস্কার শাখারভ পুরস্কার-২০১৬ পান ইয়াজিদি নারী নাদিয়া মুরাদ ও লামিয়া আজি বাশার। তাঁরা দুজনই আইএস এর যৌন দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া নারী। (সূত্র: প্রথম আলো)।
অন্যদিকে ডেনিস মুকওয়েগি একজন প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যার চিকিৎসক। আফ্রিকার কঙ্গোতে গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে নারী, কিশোরীদের ধর্ষণ, যৌন অত্যাচার চূড়ান্ত রূপ নেয়। তিনি ক্লিনিক খুলে এইসব ভিক্টিমদের চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এসময় তিনি খেয়াল করেন যে, ধর্ষণের শিকার হয়ে যেসব নারী আসছে, তাদের যোনির ক্ষত ভয়াবহ এবং নির্যাতনের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। গণধর্ষণের কারণে তাদের যোনি যে কেবল ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তা নয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের যোনিতে বোতল বা ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে বা অন্য কোনকিছু ঢুকিয়ে তা ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। ড. মুকওয়েগি তখন বিষয়টি অন্যদের নজরে আনেন।
কিন্তু তাঁকে হত্যার চেষ্টায় অস্ত্রধারীরা বাড়িতে আক্রমণ করলে তার দেহরক্ষী নিহত হোন, তিনি প্রাণে বেঁচে ইউরোপ চলে যান।
সারা পৃথিবী জুড়ে যে নারী নির্যাতন, যৌন নির্যাতন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই দুজনের শান্তি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে নোবেল কমিটি।