
হাসান মাহমুদ: বারো হাজার মাইল দূরের কানাডা থেকে আমি একাগ্র, অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছি গ্রামগুলোর দিকে, যেন স্পর্শ করতে পারছি কিভাবে জাতির ধমণী থেকে একটু একটু করে সরে যাচ্ছে বিষ। ইতিহাসের ওপার থেকে সুগভীর তৃপ্তির হাসিতে গ্রাম বাংলার ওই অখ্যাত মহানায়কদের দিকে চেয়ে আছেন আমাদের ঐশী সম্পদ ইসলাম প্রচারক সুফীরা -(বহুবচনে) হজরত শাহ জালাল, শাহ পরাণ, শাহ মখদুম, বায়েজীদ বোস্তামী, নেকমর্দান, কাত্তাল পীর, হাজী দানেশমন্দ ….. কতই না দোয়া করছেন তাঁরা!!
ইতিহাস বারবার সতর্ক করছে আমাদের, জানিনা আমরা কবে তা থেকে শিক্ষা নেব। জামাত তো নিষিদ্ধ হয়েছিল তিন তিনটে দেশে একবার নয়, পাঁচ পাঁচ বার। কি লাভ হয়েছে তাতে? ১৯৫৮ সালের ০৮ই অক্টোবরে ক্যু করেই আইউব খান সব দল সহ জামাতকে এবং ১৯৬৪ সালের ০১লা জানুয়ারী জামাতকে নিষিদ্ধ করেছিলেন । সেই পাকিস্তান সাংবিধানিকভাবেই আজ জামাতি (শারিয়া) রাষ্ট্র। কি বলছে মিসর? ওখানকার জামাত ইখওয়ানুল মুসলেমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড) ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে দু দুবার শুধু নিষিদ্ধই হয়নি বরং ওদের নেতাদের জেলে ভরে অনেককে ফাঁসী পর্য্যন্ত দেয়া হয়েছিল। সেই আজ মিসর ওদের কব্জায়, প্রেসিডেন্ট মুরসির সাম্প্রতিক অন্যায় উৎখাত পর্যন্ত আমাদের প্রথম সংবিধানেও (পৃথিবীতে একমাত্র?) ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, টিকেছে সেটা?
তিন তিনটে মুসলিম-প্রধান দেশে একই পদ্ধতিতে একই ধরনের রাজনৈতিক দলের সাথে যা ঘটেছে পাঁচ বার, যাছাড়া অন্য কিছুই ঘটেনি সেটা আবার ঘটবার সম্ভাবনাই বেশী এই তো ইতিহাসের শিক্ষা! অনেক দেরী হয়ে গেছে। জামাতকে চিনতে, তার অপদর্শন, তার কৌশলের প্রকৃতি ও মাত্রা বুঝতে পারেনি জাতির, সুশীল সমাজের, ও সরকারগুলোর একাংশ। জামাত বাংলাদেশে একমাত্র রাজনৈতিক দল যার আছে ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বিদেশী কয়েকটি সরকারের আনুষ্ঠানিক সমর্থন ও বিভিন্ন দেশে অনেক “ফেইথ-কাজিন” সংগঠন।
জামাত গড়ে তুলেছে শক্তিশালী দক্ষ সাইবার-ফোর্স যারা প্রচণ্ড মিথ্যা বলতে পারে, নানা রকমের মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে ইন্টারনেটে দিয়ে হৈ হৈ ঢক্কা-নিনাদে বাজার গরম করতে পারে, অন্যের কম্পিউটারে ঢুকে পড়তে পারে, জনগনের ইসলামী আবেগের পূর্ণ সুযোগ নিতে পারে, ও যে কোনো উপায়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বদ্ধপরিকর। এইসব তরুণেরা জানে না তারা জামাতের ইসলাম-বিরোধী আপাত: মনোহর অপদর্শনের শিকার মাত্র। ওই অপদর্শনে যে বিশ্বাস করে সে-ই ভার্চুয়াল জামাতি, সংগঠন হিসেবে সে জামাতের বিরোধীই হোক না কেন।
গত চল্লিশ বছর ধরে জামাত প্রতিটি সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় জাতির শিরা-উপশিরায় ঢেলেছে এই মারাত্মক বিষ। একাত্তরে রাষ্ট্রযন্ত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ছিল যে জাতি তার বড় একটা অংশে নেমেছে মারাত্মক ধ্বস, অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বাহিনীতে বয়ে চলেছে জামাতি-অপদর্শন, লাখ খানেক মাদ্রাসা ও বিভিন্ন “ইসলামী” শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দমকল বাহিনীর হোস পাইপের মত সমাজে ক্রমাগত নেমে আসছে লক্ষ লক্ষ জামাতি। সে হিসেবে আমাদের প্রায় প্রতিটি “ইসলামী” সংগঠন, প্রতিটি মাদ্রাসা, বহু প্রতিষ্ঠানের একাংশ ও অসংখ্য নাগরিক আজ ভার্চুয়াল জামাতি-তে পরিণত হয়েছে যারা শরিয়া-ভিত্তিক রাষ্ট্র চায়। এখন জামাত সম্পুর্ণ উচ্ছেদ হয়ে গেলেও (সম্ভাবনা নেই)এই বিষে জাতি জর্জরিত হবে বহুকাল। তাহলে? কোনই কি পথ নেই এ বিষধর অজগরের প্যাঁচ থেকে বেরিয়ে আসার? আছে। শুরুটা করতে দেরী হয়েছে বলে সময় লাগবে, কিন্তু সম্ভব। রূপকথার কল্পকাহিনী নয়, একান্ত বাস্তব। তাকান মুসলিম প্রধান কসভো’র দিকে, তাতারস্থানের দিকে । প্রচুর চেষ্টা করেছে সৌদি, আমাদের জামাতের মতই মিষ্টি মিষ্টি কথায় ঢালতে চেয়েছে অজস্র টাকা কিন্তু আখেরে একটা হিমালয় পর্বতে ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত ফিরে গেছে। সে পর্বত হল জনগণ। ওখানকার প্রধান ইমামেরা জনগনকে মওদুদী-ইসলামের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করেছেন, জনগনই এখন ওই কালনাগিনীর বিরুদ্ধে হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এমন যদি ওখানে হতে পারে, হয়েছে বাংলাদেশেও। “জামাত-মুক্ত বাংলাদেশ”- কোটি কোটি লোকের স্বপ্ন এখন আর স্বপ্ন নয়, এখন ওটা বাস্তব। কিছু সমমনা বন্ধুর প্রানপণ চেষ্টায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে গত এক বছরে দেশের গহন গহীন তৃণমূলে এখন ৩টে গ্রাম সম্পুর্ণ ও আরো ৫টি গ্রাম প্রায় সম্পুর্ণ জামাত-মুক্ত করা হয়েছে। চোখ রাখুন। কিছুদিন পরেই সাংবাদিকেরা ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছেন ওখানে, ফিরে এসে সবাইকে জানাবেন কি পদ্ধতিতে এ মিশন ইম্পসিবল সম্ভব হল। পদ্ধতিটা সম্পুর্ন উন্মুক্ত ও অহিংস, নেই টাকার চালাচালি, নেতৃত্ত্বের চুলোচুলি, অস্ত্রের গুণ্ডামী বা গোপন ষড়যন্ত্রের ফিসফাস। কথা বলার ভিডিও দেখা যাবে তাঁদের যাঁরা তাঁদের প্রিয় মায়াময় গ্রামে জামাতি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছেন রক্তচক্ষু, এ আন্দোলনের নেতৃত্ব ও জনতা।
বারো হাজার মাইল দূরের কানাডা থেকে আমি একাগ্র, অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছি গ্রামগুলোর দিকে, যেন স্পর্শ করতে পারছি কিভাবে জাতির ধমণী থেকে একটু একটু করে সরে যাচ্ছে বিষ। ইতিহাসের ওপার থেকে সুগভীর তৃপ্তির হাসিতে গ্রাম বাংলার ওই অখ্যাত মহানায়কদের দিকে চেয়ে আছেন আমাদের ঐশী সম্পদ ইসলাম প্রচারক সুফীরা -(বহুবচনে “হজরত”) শাহ জালাল, শাহ পরাণ, শাহ মখদুম, বায়েজীদ বোস্তামী, নেকমর্দান, কাত্তাল পীর, হাজী দানেশমন্দ …….. কতই না দোয়া করছেন তাঁরা !!