সাধারণ মানুষ হিন্দু-মুসলমান বোঝে না

সহুল আহমেদ মুন্না:

শৈশব কেটেছে গ্রামে। সৌভাগ্য যে গ্রামীণ সহজ-সরল মানুষদের সাথে, তাদের কোলে-পিঠে চড়ে বড় হয়েছি। হিন্দু-মুসলমান বিষয়গুলো বোঝার ক্ষমতাও তখন আসেনি।

একজন পীর ছিল গ্রামে, হিন্দু-মুসলমান সবাইকে দেখতাম তার কাছে আসতে। পরে যখন শহরে আসি, মানে সিলেট শহরে আসি, তখন অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম, প্রচুর আয়োজনের মাধ্যমে যেমন ওরস-মিলাদ-মাহফিল করা হচ্ছে, তেমনি বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে পূজাও পালন করা হচ্ছে। শবে বরাতের রাতে যেমন ভিড়ের কারণে শহরে বের হওয়া যেত না, পূজার রাতেও ভিড়ের কারণে বের হওয়া যেতো না। পূজা মণ্ডপগুলো বাহারী রঙয়ে সাজানো হতো, রাতে ঘুরে ঘুরে সেগুলো দেখা হতো নিয়মিত, এখনও দেখি।

মানুষের সাথে মিশে বুঝছি, সাধারণ মানুষগুলো ধার্মিক ঠিকই, কিন্তু সাম্প্রদায়িক না। তাই দেখা যায় বাউল গান গ্রামের মানুষদের মুখে মুখে ফিরে। অবাক হই যখন দেখি, এই মানুষরাই হঠাৎ করে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠে। তবে তলিয়ে দেখলে পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে মূলত নেতারা (ধর্মীয় ও রাজনৈতিক) তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে ধার্মিক মানুষগুলোর ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ পরিস্থিতি তৈরি করে নেয়।

একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, উপমহাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে ‘সাম্প্রদায়িকতা’। এখানে ‘মূলধারার’ রাজনীতিটা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরেই; এটাও সর্বজন স্বীকৃত যে, এই রাজনীতির সূচনা ব্রিটিশরা কোন ‘মহান’ উদ্দেশ্য নিয়ে করেনি এবং তারই ফলস্বরূপ দেখা যায়, এখানে ক্ষমতার রাজনীতি আর সাম্প্রদায়িকতা হাতে হাত ধরে চলেছে। নাহলে যে ভূখণ্ডে অনেক বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি থাকছে, তারা হঠাৎ করে কীভাবে মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে এতোটা সাম্প্রাদায়িক হয়ে গেলো যে, একেবারে খুনোখুনি করে ছাড়লো!

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অনেক নেতাই অসাম্প্রদায়িক, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষও ছিলেন, কিন্তু যখনই প্রশ্ন এসেছে ক্ষমতার চূড়ায় আসন গ্রহণের, তখনই তারা জনগণের কাছে গিয়েছেন ‘সাম্প্রদায়িকতা’কে পুঁজি করে। তাই বলে যে সাধারণ জনগণ ‘সাম্প্রদায়িক’, সেটা বলছি না। সাধারণ মানুষ আসলে বাঁচতে চায়, মুক্তি চায়। নেতারা যদি বলেন ‘নারায়ে তাকবির’ বললে মুক্তি আসবে, তারা সেটাই করবে। নেতারা যদি বলেন, ‘হরে রাম’ বললে মুক্তি আসবে, তারা সেটাও করবে।

হিন্দু না মুসলমান – এ নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় সাধারণ মানুষের নাই। তারা জীবন ধারণেই ব্যস্ত! একজন কৃষকের সারাদিন-রাত কাটে কিভাবে ধান ফলানো যায় ওই চিন্তায়। শোষণে শোষণে ক্লান্ত শ্রমিকের চিন্তাও তার দিনান্তের রুটি-রোজগারকে ঘিরে। হিন্দু-মুসলমান এসব সমস্যার জন্ম দেন আমাদের নেতারা, তাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে! এটাই নির্মম সত্য কথা!

লেখক: ছহুল আহমেদ মুন্না

(Published as part of Social Media Campaign #BeHumaneFirst to promote Secularism in Bangladesh)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.