‘চাটুকার বা বেয়াইন পদের জন্যি ক্ষীণ আশা জন্মেছিল গো আপা’

গোধূলী খান:

কষ্টে আছি, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। কষ্টে, কষ্টে প্রাণ ভোমরা উড়ে যাবার মতো অবস্থা। কষ্ট কি একটা? না প্রিয় আপা, একটা না অনেকগুলি, আঙ্গুল দিয়ে গুণে কুলাবে না। ক্যালকুলেটরও লাগতে পারে। থাক এতো কষ্টের কথা নাইবা বললাম। আপনি ব্যস্ত মানুষ, আমাদের মতো এলেবেলেদের কথা শোনার টাইম নাই জানি। আপনি দেশের গার্ডিয়ান, তো সবার কথা শোনা যদিও আপনার দায়িত্ব, তারপরও সব দায়িত্ব যে আপনি পালনে বাধ্য, তা না। শুনলে মানে পরলে আর কি হৃদয়ে আরাম পেতাম।

আপনি সরকারি চাকরিজীবীদের অনেক সুবিধা দিচ্ছেন, তারা কেমন কাজ করে তা জেনেও যখন দামি গাড়ি, মোবাইল, ফোন বিল, গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ, বাড়ি ভাড়া। এতো এতো সুবিধা বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তাই মনে একটু একটু কষ্ট হচ্ছিল কেন কখনও সরকারি চাকরির চিন্তা করিনি। কিন্তু বিশেষ করে, ‘সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৫’ নামে অভিহিত আইন যার প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, “ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ পত্র আদালতের অনুমোদনের পূর্বে কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিকে গ্রেফতার করতে হলে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।”

এই খবর সংবাদ মাধ্যমে পড়ার পর মনে হলো, আমার যখন সরকারি চাকরির পাওয়ার বয়স ছিল তখন কেন দিলেন না, তখন দেননি সমস্যা নেই, কিন্তু এখন চাকরির বয়স সীমা ৪০ করে দেন। ট্রাই করি মন্ত্রী চাচা-মামা নেতাভাই, বড়ভাই ধরে। ঘুষটুষ দিয়ে একটা না একটা সাইজ করে ফেলবো, প্লিজ বয়স বাড়ান।
আর যদি একেবারে নাই হয়, বিদেশে বসে চাকরি-বাকরি করে টাকা উপার্জন করলে পাঠাই দেশের ব্যাংকে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও তো অবদান রাখছি, সেই কারণে প্রবাসী লীগ বানিয়ে একটা সেক্রেটারির পদ দেন, বাকিটা করে খাবো, কোন সমস্যা নেই। যদি বলেন প্রবাসী দালাল লীগও গঠন করে ফেলতে পারি। আপনার কাছাকাছি হতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার কাছাকাছি একবার হতে পারলে, ধরাকে সরা করে ফেলবো। আপা সৎ, ভালো পরোপকারী, দেশপ্রেমিক নিঃস্বার্থ এইগুলা চলে না। দেখেন না, যত বদনাম ততো পপুলার, যত বড় অন্যায়কারী তত ক্ষমতাধর।

আপা, আপনি তো আমাদের সবার আপা, দেখেন বাপের টাকায় পড়াশোনা করে, নিজের যোগ্যতায় পাওয়া ইন্ট্যারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে চাকরি করেও আমরা বিজনেস ক্লাসে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারি না। কষ্টের পয়সাতে ইকোনমি ক্লাসে কষ্টে-সৃষ্টে বিদেশে যাই, নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে থাকা খাওয়া লাগে, বাচ্চা ও পরিবারের জন্য গিফটের জন্য পকেটের পয়সা খরচ করতে হয়। ইয়ে আপা, দলের একটা পদ টদ থাকলে, ফ্রি টিকিটে পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমণ ছাড়াও দলের আরও ছোট পদের লোকজন পুরা পরিবারের গিফট কিনে দিত। গিফটের এক্সট্রা লাগেজগুলি নিতে বাড়তি পয়সাও দিয়ে দিত। আপা মজাই মজা।

আপা, অভয় দিলে তেল মারা শিখে নেবো, তোষামোদি শিখে নেবো সব সেলিব্রিটি তেলবাজদের কাছ থেকে। তেলের বদলে চাইলে ঘি চপচপে তোষামোদী করবো আপা। আপনার চারপাশের তোষামোদীদের দেখে আন্দাজ করে ফেলেছি। তাই দরকার হয়, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতায় এমএ করা বাদ দিয়ে, তেল দেয়ার উপর এমএ ও পিএইচডি করে ফেলবো। আপা, প্লিজ একটা পদ দেন আগামী ইলেকশনের পর নতুন সরকার গঠনকালে। আপা পুরানোরা তো অনেক অনেক অনেক উপার্জন করেছে, সুইস ব্যাংকে নতুন কারো একাউন্ট খোলার সুযোগ তো আমাদেরও পাওয়া উচিত।

ভোটের সময় নিজের পয়সা খরচ করে দেশে যাই নৌকায় ভোট দিতে, ভোট প্রার্থী যতোই অযোগ্য হোক, শুধু বঙ্গবন্ধু ও আপনার কারণে আওয়ামী লীগে ভোট দিয়ে থাকি। আপা, লোকে বলাবলি করছে এবছর নাকি আমাদের কষ্ট করে ভোট দেয়া লাগবে না, সব সিস্টেম করে ফেলে হয়েছে, কারো নাকি ক্ষমতা নেই ভোটে সরকারকে হারানো। চিন্তায় পড়ে গেলাম টিকিট বুকিং দেবো কিনা, আগে আগে টিকিট কিনলে কম পড়ে আপা।

আপা এক সভায় বক্তব্য রাখার সময় আপনি বললেন, আওয়ামী লীগ ভোটের জন্য রাজনীতি করে না। আপা মানেটা বুঝিনি, আমি তো জানতাম, রাজনীতিবিদরা ভোটের জন্য রাজনীতি করে, ভোট না দিলে আপনারা নির্বাচিত হবেন কী করে, সারা বছরের ভালো কাজের বিনিময়ে জনগণ আপনাদের ভোট দিবে। আপনাদের ভালো কাজের ফল আমাদের ভোট। যে ভালো কাজ করবে সেই ভোট পাবে। তার মানে কি আমাদের ভোট আর আওয়ামী লীগের লাগবে না? আপা, খুব কষ্টে আছি এ চিন্তা নিয়ে, ডিসেম্বরে দেশে যাওয়ার টিকিট কাটবো কি কাটবো না?

আপা, সরকারি চাকরি না দেন, পদ দেন আর পদ না দিলে স্থায়ী চাটুকারের চাকরি দেন। এইগুলা সম্ভব না হলে কিছু একটা দেন। আপা আরেকটা উপায় আছে, সাপ মরবে লাঠিও ভাংবে না, আপা বেয়াইন বানায় নেন, আপনার নাতি-নাতনি তো আছে। ওদের একজনের সাথে আমাদের সন্তানের একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। তাইলে আপা আর কিছুই লাগে না। বেয়াই বেয়াইন হইলে তো সাতখুন মাপ। এইটা ঠিক আমাদের স্ট্যাটাস মানে টাকা পয়সা ধন-সম্পত্তি কম, কিন্তু বেয়াইন হইলে আপা ছয় মাসের মধ্যে সব ঠিক করে ফেলতে পারবো।
দেশে এখনও অনেক হিন্দু সম্পত্তি আছে, দখল নেব। সরকারি জমি আর প্লট বরাদ্দ চলছে, তা নিজে নেবো ও বিরোধী দলে বন্ধুকেও দেবো যাতে, এক্সিডেন্টলি (আল্লাহ না করুক) আপনি ক্ষমতায় না এলে বিরোধী দলের বন্ধু আমাকে দেখে রাখে। আপনার দুই একটা ব্যাংক লুট করে নেবো। শেয়ার বাজারে কারসাজি করবো। মধ্যস্থতা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ফেলবো, বিভিন্ন নিয়োগের জন্য প্রার্থীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ নেবো, চাকরি বদলিতে টু পাইস কামিয়ে নেবো।

আপনার সফর সঙ্গী নির্বাচন করেও অনেক টাকা কামাবো। চিন্তা করবেন না। যোগ্য ফ্যামিলি হয়েই যাবো। আপা, আমাদের একমাত্র আসল যোগ্যতা আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, আমরা সবাই উচ্চশিক্ষিত, দেশ-বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, পারিবারিকভাবে আমরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, সার্টিফিকেট জালটাল করা লাগেনি, আর আমাদের বংশ উচ্চবংশ, বাপ-মা দুই দিক থেকেই। চিকিৎসক পিতার উচ্চশিক্ষিত সন্তান। আপা এতে কিন্তু আপনাদের ইমেজও আরো বাড়বে তা হলো, আমজনতার পরিবারের সন্তানের সাথে রাজপরিবারের সন্তানের বিবাহ। বিরাট হৈ চৈ হবে, সারা পৃথিবীতে সাড়া পড়বে, প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের বিয়ের মতো।

আপা আপনি তো কাউকে ফেরান না। দেন আপা একটা কিছু, প্লিজ দেন। চাকরি, পদ, চাটুকার কিছু না দেন, শুধু বেয়াইন পদ দেন। আর কিছু চাই না আপা, শুধু বেয়াইন পদ চাই।

শেয়ার করুন: