সুমিত রায়:
ভদ্রলোকের স্ত্রীর ইউরিন ইনফেকশান হয়েছে। ট্রিটমেণ্ট করাতে নিয়ে এসেছেন গাইনিকোলজিস্ট-এর কাছে!
আমাদের সমাজে এখনো এমন অনেক ভদ্রলোক আছেন যারা মেয়েদের কোনো রোগ হলেই সেটাকে স্ত্রীরোগ ভেবে থাকেন। মেয়েদের সব রোগকেই তারা অণ্ডকোষ দিয়ে বিচার করেন। মেয়েদের রোগ মানেই সেটা গোপন রোগ। এতোই গোপন যে সেটা চিকিৎসারও অযোগ্য।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়েদেরই চিকিৎসা হয় তখনই, যখন সে সন্তান-সম্ভবা হয়। তখন চিকিৎসার ধুম পড়ে যায়। মেয়েদের গুরুত্বও তখন বেড়ে যায় অনেক। তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। আর তাই তার শরীর নিয়ে সবাই হঠাৎ এতো চিন্তিত হয়ে পড়ে। যেন তার শরীর বলে এতোদিন কিছু ছিলই না।
ছেলেবেলা থেকে কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেনি যে তার পিরিয়ড ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা! পিরিয়ডের সময় কীভাবে হাইজিন মেনটেইন করতে হয়, কেউ তাকে বলে দেয়নি; এমনকি তার বাবা-মাও নয়। মেয়ের রক্তাল্পতা আছে কিনা, অপুষ্টিতে ভুগছে কিনা, কোনো হরমোনাল ইমব্যালেন্স আছে কিনা কখনো জানার চেষ্টা করেনি। করেনি, কারণ তারা লজ্জা পেয়েছেন। মেয়েদের সবকিছুতেই তাদের এতো লজ্জা।
অথচ সেই মেয়েটিই যখন সন্তান-সম্ভবা হয় তখন প্রতি মুহূর্তে তার শরীরের খোঁজ-খবর নেয় সবাই। কেমন আছো, কী খেয়েছো। কতো ওষুধ, কতো খাবার, কতো আচার, কতো আয়োজন, কতো অনুষ্ঠান, কতো উৎসব। তখন আর কারোর লজ্জা করে না। ছেলে-বুড়ো, বাচ্চা-মহিলা সবাই মেতে ওঠে।
আমাদের বাড়িতে ছোটোবেলায় গরু পোষা হতো। সারাবছর গরুর তেমন যত্ন হতো না, চিকিৎসা কিছুই হতো না। কিন্তু গরুটি গর্ভবতী হলেই তার যত্নাত্তি বহুগুণ বেড়ে যেতো। বাড়িতে হঠাৎ গরুর ডাক্তার এলেই আমরা বুঝে যেতাম যে এবার গরুর বাচ্চা হবে।
এতো কথা ঐ ভদ্রলোককে বলার সুযোগ ছিলোনা। তাই বললাম, “আপনার স্ত্রীকে গাইনিকোলজিস্ট না দেখিয়ে একজন ভালো নেফ্রোলজিস্ট দেখান।” ভদ্রলোক অমনি বলে উঠলেন, “আসলে মেয়েলি ব্যাপার তো, বুঝতেই তো পারছেন। এখানে দেখাই। তারপর ঠিক না হলে অন্য চিন্তা করা যাবে।”
আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। উঠে যেতে যেতে বলেই বসলাম, “আপনার ইউরিন ইনফেকশান হলে আপনি কি প্রথমে কোনো গাইনিকোলজিস্ট দেখাবেন?”
সুমিত রায়, পশ্চিমবঙ্গ, কল্যাণী