সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন এবং প্রেম

শিল্পী জলি:

ছোটবেলায় টিভিতে রহিম-রূপবানের উপখ্যান দেখতে বেশ লাগতো। বার দিনের ছেলের সাথে বার বছরের মেয়ের বিয়ে। অতঃপর বনবাস এবং স্বামীকে মাতৃস্নেহে লালন-পালনের পালা।

ছেলেটি দিন দিন বড় হয়, জানে না সে কারও বর। একটু বড় হতেই তাজেল নামের একটি মেয়ে তার প্রেমে পড়ে যায়। সম্ভবত মনে মনেই, ঘটনা না জেনে। সেই দেখে রূপবান গাইতে থাকে, শোনো তাজেল গো ওওও মন না জেনে প্রেমে মইরো/মইজো না। তবুও পরিস্কার করে বলে না, সে কে? ওদিকে তাজেলের প্রেম গভীর হতে থাকে।

আমাদের দেশীয় অধিকাংশ মেয়ের প্রেমই হয়তো এমন। বিশেষ করে প্রথম প্রেমটি। অনেকটা কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা, মনে মনে…..না জেনে, না বুঝে। প্রেমের নামে এই যে মনে মনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়, ওদিকে প্রেমে তার গুড়ে বালি। হয়তো প্রেমই হয়নি কখনও, শুধু মনে মনে কলা খেয়েছে মাত্র।

এতোদিন ভাবতাম, শুধু আমাদেরই হয়তো এমন দশা হয়। কিন্তু দেখলাম আমেরিকাতেও মেয়েরা কখনও কখনও প্রেমের ঘোরে বেআক্কেল হয়ে যায়।

আমাদের দেশে যেমন বিয়ে ছাড়া ভার্জিনিটি হারালে মেয়েদের হায় হায় দশা হয়, আমেরিকাতে ঠিক তার উল্টা। ১৮ বছরের পরও যদি ভার্জিনিটি সাথে থাকে, তাহলে তাদের অনেকেই অস্বস্তিবোধ করে, হতাশায় ভোগে–লোকে কী ভাববে!

এমনই একটি অতি সুন্দরী মেয়ে ১৮ বছর শেষে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবে। মনে মনে একজনকে পছন্দ করেও বসে আছে সে, কখনও বলা হয়নি। একেবারে জাঁকজমক করে আয়োজন করা হয় ছেলেটিকে বিষয়টি জানাবার।
মেয়েটি সবার সামনে বলে, ‘আমি তোমাকে এতোই পছন্দ করি, তোমাকে এতো বেশি ভালো লাগে আমার যে আমার ভার্জিনিটি তোমার কাছেই হারাতে চাই।’ তোমার কী মত?

ছেলেটি একটু সময় চুপ করে থাকে। মেয়েটি আশা করতে থাকে, এখনই সে বলবে, হ্যাঁ, আমারও ঐ একই দশা….। চোখ গড়িয়ে তার পানি ঝরতে থাকে। তখন ধীরে ধীরে ছেলেটি বলে, আমাকে এই অনার দেবার জন্যে তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু আমি মনে হয় ছেলেদের প্রতি আগ্রহী, কোনো মেয়ের প্রতি নই।

মেয়েটির তখন সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে, মাথায় কিছু ঢুকছে না, মাথা ঘুরছে–এতো দিনের প্রেম!
কী ভেবেছে আর কী হলো?
তখনই আরেকটি ছেলে চলে আসে অনুষ্ঠানে। আর দুই ছেলে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে। মেয়েটি ভেবে পায় না কী করবে সে, হাসবে না কাঁদবে?

যার প্রতি এত দিনের এত ভালোবাসা পুষে রেখেছিল জানেই না সে আসলে কে? তার সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশন কী? তার জীবনে তার অবস্হান কোথায়?

অবস্হার চাপে এতো বড় ছ্যাঁকার কান্নাও থেমে যায় তার। উল্টো দুই ভুরুর মাঝে বলিরেখা নিয়ে তাকিয়ে থাকে চুম্বনরত তাদের দিকে।

কখনও কখনও কারও কারও প্রতি নিজের অজান্তেই মানুষের মন জড়িয়ে যায় মানুষটিকে না জেনেই। এর মানে সেও যে প্রেমে জড়াবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং এতে ঝুঁকিই থাকে বেশি। কেননা অনেকেই আছে যারা এমন পরিস্হিতিতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিয়ে তথ্য লুকিয়ে এই সুযোগটির অপব্যবহার করে।

ভালোবাসা গভীর হলেও সর্বদা যাচাই-বাছাইয়ের দাবি রাখে। কেননা ভালোবাসাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, একেবারে টোটাল ক্ষতি !

শেয়ার করুন: