তসলিমা পক্ষের জন্মদিন আয়োজন

উইমেন চ্যাপ্টার:

২৫ আগস্ট ছিল অন্যতম নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন। তসলিমা পক্ষ প্রতিবারের মতো এবারও প্রিয় লেখকের জন্মদিনটি উদযাপন করেছে। এবারের জন্মদিন অনুষ্ঠানটি হয়েছিল ঢাকার পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের সিংহভাগই ছিল বয়সে তরুণ। তারা জানিয়েছেন কীভাবে তসলিমা নাসরিনের লেখা তাদেরকে মুক্তচিন্তার পথে এনেছে, কীভাবে তারা নারী অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয়েছেন, তসলিমার লেখা কীভাবে তাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। সেইসাথে বলেছেন নিজেদের জীবনের গল্প, যেখানে লেখক তসলিমার লেখা প্রভাব ফেলেছে।

ক্ষোভ জানিয়েছেন মৌলবাদ তোষণকারী সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যারা তসলিমার বই নিষিদ্ধ করেছে, তাঁর নাগরিক অধিকার খর্ব করে তাঁকে নির্বাসিত জীবনযাপনে বাধ্য করেছে, প্রতিবাদ জানিয়েছেন তসলিমার বইকে দুষ্প্রাপ্য করে তাঁকে পাঠকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী শতাব্দী ভব, সাংবাদিক শাকিল অরণ্য, অনলাইন একটিভিস্ট আসাদ নূর, দিদার মাহমুদ, বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত শেখ মিজান, কলকাতা থেকে বিয়াস বসুসহ আরও অনেকেই। সকলের আন্তরিক উপস্থিতি জন্মদিন আয়োজনকে সফল করে তুলে। ঈদের ছুটিতে ঢাকায় না থাকায় অনেকেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এবারের অনুষ্ঠানে বড় একটি চমক ছিল তসলিমার ছবি ও কোটেশানসহ একটি টিশার্ট, যাতে লেখা ছিল “তোমার কর্তৃত্ব তুমি নাও নারী”। লাইনটি নেয়া হয়েছে তসলিমা নাসরিনের আশির দশকে লেখা বই ‘নির্বাচিত কলাম’ এর একটি জনপ্রিয় কলাম থেকে। টি-শার্ট পরে প্রিয় লেখককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই টিশার্ট চেয়ে উদ্যোক্তাকে ইনবক্স করেছেন।

এদিকে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দু:খপ্রকাশ করে জানানো হয়েছে, টি-শার্ট স্বল্পতার কারণে সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সকলের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় তসলিমা পক্ষ চেষ্টা করবে প্রতিবছরই নতুন কোটেশন দিয়ে নতুন টিশার্ট বানাতে।

এই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইত্তিলা ইতু জানিয়েছেন,  দিশারী নামে তসলিমা নাসরিনের একজন ভক্তের কথা ছিল জন্মদিনে আসবেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তার পক্ষে অনুষ্ঠানে আসা সম্ভব হয়নি। তিনি খুব চাইছিলেন এই দিনে টিশার্টটি পরবেন, প্রিয় লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাবেন। তাই হাসপাতাল থেকেই তিনি একজন লোক পাঠিয়ে একটি টিশার্ট নিয়ে যান এবং একটি কেক পাঠান। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী প্রোগ্রাম শেষে তাঁর পাঠানো কেকটি পথশিশু ও খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। টিশার্ট পেয়ে তিনি একটি ছবি পাঠিয়েছেন যেখানে তিনি টিশার্টটি পরেছেন, একটি হাত স্যালাইন দেয়া অবস্থায়।

ইতু বলেন, এই ঘটনাটি তাকে বেশ নাড়া দিয়েছে, এরকম একটা ছবি তার চোখে জল এনে দিয়েছে। এতো বাধাবিপত্তি, এতো নিষেধাজ্ঞা সব প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাঠকরা আজও তসলিমাকে ভালোবাসছেন, তসলিমার বই আজও তাদের সচেতন করে, অনুপ্রাণিত করে, সাহস জোগায়- আয়োজনের সফলতা এটিই প্রমাণ করে।

ইতু আরও বলেন, তসলিমা নাসরিনের নির্বাসন কেবল একজন মানুষ তসলিমার নির্বাসন নয়, এটি মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি ও মানবাধিকারের নির্বাসন। তাই আমরা এভাবেই আমাদের প্রিয় লেখককে ভালোবেসে যাবো, প্রতিবাদ করে যাবো সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, গর্বের সাথে উচ্চারণ করবো তসলিমা নাসরিন নামটি। কারণ এই নামটিই আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি জোগায়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.