উইমেন চ্যাপ্টার:
আজ ২৫ আগস্ট, বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, লেখক তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন। উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন। তাঁর এই প্রতিবাদ, সমাজে চলমান নারীর প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর এই জোরালো ভূমিকা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে।
তসলিমা নাসরিন আজ শুধুই কোনো ব্যক্তি নন, তিনি একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রতিনিয়ত মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস জোগায়।
তসলিমা নাসরিন আজ আর কোনো একক নাম নয়, আজ হাজার হাজার তসলিমা নাসরিন খোদ বাংলাদেশেই। এতোদিন যে নাম উচ্চারণ করতেও ভয় পেতো সমাজের তথাকথিত নাম-যশ কামানো ব্যক্তিবর্গ, খোদ লেখকেরা, সেই নামই আজ হাজারও কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটা সময়ে উনি একা লড়াই করে গেছেন পরিবারের অনাচারের বিরুদ্ধে, সমাজের লৌকিকতার বিরুদ্ধে, ধর্মের কূপমণ্ডকতার বিরুদ্ধে। আজ সেই লড়াই ছড়িয়ে গেছে সবখানে।
নতুন প্রজন্মের মুখে তাই শুনি তসলিমার জয়ধ্বনি। ওরা তাঁর কথা উদ্ধৃত করে টি শার্ট বানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে জন্মদিন পালন করছে, গড়ে তুলেছে ‘তসলিমা পক্ষ’। এসবই নতুন দিনের আগমনি বার্তা। ফেসবুকে আজ অনেকেই তসলিমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কয়েকটি তুলে ধরা হলো নিচে:
মনোরমা বিশ্বাস লিখেছেন.
“পুরুষতন্ত্র জোঁকের মত, জোঁককে শায়েস্তা করতে এর মুখে লবন দিতে হয়। আজ তসলিমার জন্মদিনে এটাই আমার কামনা শত শত তসলিমার জন্ম হোক, বেশি বেশি লবন পড়ুক জোঁকের মুখে।”
কুঙ্গ থাঙ লিখেছেন, “তসলিমা নাসরিন ছিলেন আমাদের কৈশোরের দ্রোণাচার্য৷ আমাদের মধ্যে যারা তাঁকে নিয়মিত নিন্দা করে, গালিগালাজ করে তাদের চিন্তা ও মননের ভিতটা তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন৷ আমাদের চিরপরিচিত ফুল পাখি লতা পাতা গরু ছাগল হাঁস মুরগী প্রেমের জ্বালা, বিরহব্যথা, দুঃখবেদনা হা-হুতাশের বাইরে যে বিশাল এক ভাবনার জগৎ আছে, চিন্তার ক্ষেত্র আছে তার সন্ধান তসলিমাই দিয়েছিলেন৷ এই কথা যে স্বীকার করে না সে নিজের জন্মকেই অস্বীকার করে৷”
নাঈমাহ তানজিম লিখেছেন,
“তসলিমা নাসরিন, উনি জন্মেছিলেন সময় থেকে ১০০ বছর এগিয়ে থাকা মনন ও মস্তিষ্ক নিয়ে, কিন্তু জন্মেছিলেন ৪০০ বছর পিছিয়ে থাকা একটা দেশে। তাই এই মূর্খদের দেশে ‘তসলিমা নাসরিন’ এখনো একটা গালি। আশা করি আগামী ৫০০ বছর পর এই দেশ আপনার মর্ম বুঝবে, এবং নিজের কন্যাসন্তানকে বলবে, “তসলিমার মতন হও”।
কিন্তু তখন কি অনেক দেরি হয়ে যাবে না?
শুভ জন্মদিন, তসলিমা নাসরিন!”
রাহাত মুস্তাফিজ লিখেছেন,
“”তসলিমা নাসরিন” এই নামটি একটা প্রতিবাদ। পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এই নাম। তাঁর যুদ্ধের স্টাইলটা অনেকের পছন্দ নয়। কারণ তিনি সরাসরি আঘাত করেন। তাঁর আঘাতে ধ্বসে গেছে, গৌণ হয়ে পড়েছে মুখোশধারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্কৃতির লাট-বাহাদুরেরা।
তসলিমা দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন। এইটা লজ্জার। এই লজ্জা রাষ্ট্রের। এই লজ্জা সংবিধানের। এই লজ্জা সরকারের। এই লজ্জা আমাদের। তাঁকে দেশে ফিরতে দেওয়া হোক। তাঁর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক।
শুভ জন্মদিন দিদি। অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা।”
সুপ্রীতি ধর তার টাইমলাইনে লিখেছেন, “শুভ জন্মদিন আমার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মেয়ে। ব্রহ্মপুত্রের প্রতি আপনার যে টান, যে আকর্ষণ, তার বিন্দুমাত্র কম নেই আমারও। এই জায়গাটাতেও আমি আপনাকে অনুভব করি।
এতোগুলো বছর আগে সেদিন আপনার প্রতিবাদ, আপনার ঘুরে দাঁড়ানো আমাদের অনেকগুলো বছর এগিয়ে দিয়েছে নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রে। কিছু কিছু বিষয় আছে, সরাসরিই আঘাতটা করতে হয়, ওরকম লুতুপুতু আন্দোলন দিয়ে হয় না, এটা আপনিই শিখিয়েছেন।
যদিও নারী সংগঠনগুলো সেদিন আপনাকে ওওন করেনি, নারী লেখকরা, যারা রাখ-ঢাক করে, সমাজ, রাজনীতি সব ঠিক রেখে জীবন চালায়, তারাও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ‘অতোটা খোলামেলা লেখার বা এমন জোরালো প্রতিবাদের কী প্রয়োজন ছিল’ হালে পানি পায়নি, আর পায়নি বলেই আজ আমরা অনেকেই শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারছি। অনেকের নম: নম: ভাবের কাছে আপনি এবং আপনার উত্তরসুরি আমরা যারা আছি, সকলেই ‘বিতর্কিত’, সকলেই ‘গৃহহীন’, সকলেই ‘উচ্ছৃঙ্খল’।
তাতে কীইবা আসে যায়!
আপনার বলা কথাগুলোই এখন আরও স্পষ্ট হয়ে হাজারও কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, শুনতে পান নিশ্চয়ই! এখানেই আপনার জয়।
ভালো থাকুন আপা, সদানন্দে থাকুন।”
তন্ময় কুমার হীরা বলেছেন, “প্রিয় Taslima Nasreen,
বাংলা এখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অশিক্ষাচ্ছন্ন ও ধর্মাচ্ছন্ন। হেন বাংলায় তুমি প্রত্যাশিত নও। অন্ধকার কখনও আলোকে সইতে পারে না। অন্ধকার ও অালোর এ জন্মগত বিরোধ। তুমি সেই বিরোধের শিকার। তুমি অসহায়। তোমার দোষ তুমি অন্ধকারের বিপরীত। তুমি অালোক। কিন্তু এ দোষটি তোমার সোনালী দোষ। তোমার এই দোষ সভ্যতার সঙ্গী। সভ্যতার সূতিকাগার। সভ্যতার মানদণ্ড। সভ্যতার সৌন্দর্য। সভ্যতার উপাদান। দোষটাকে ধরে রেখো। একদিন অন্ধকার অন্ধকার বাংলায় অালো অাসবেই। হয়তে ফিজিকাললি সেদিন তুমি থাকবে না। কিন্তু তুমি থাকবে। তুমি থাকবে অনন্তকাল– বাংলায় ও পৃথিবীতে। তুমি অমর। শুভ জন্মদিন, তসলিমা।”
ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া নামের একজন তসলিমা টি শার্ট পরে রাস্তায় দাঁড়ানো ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “ঢাকার অলিগলি…
যেখানে যুগল হাঁটা নিষিদ্ধ… মুখোরিতো আন্দোলন নিষিদ্ধ…রক্তকবরী নিষিদ্ধ…ফেস্টুন…বড় চুলো ছেলে আর দস্যি মেয়ে নিষিদ্ধ…গাছ নিষিদ্ধ…পাখি নিষিদ্ধ…বৃষ্টিতে ভেজা শরীর নিষিদ্ধ…চুমু নিষিদ্ধ…চিৎকার করে গাওয়া নিষিদ্ধ…একজন তসলিমা নাসরিন নিষিদ্ধ…!
মেয়েদের বুক ও নিষিদ্ধ…! নিষিদ্ধ বুকে নিষিদ্ধ তসলিমা নিয়ে নিষিদ্ধ রাস্তায় হাঁটছি…
কাটাকুটি করে শুদ্ধ!
শুভ জন্মদিন। তসলিমা নাসরিন।”