লিপি মাহজাবীন আহমেদ:
প্রকৃতি: মা কোথায়, বাবা?
বাবা: মা শুটিংয়ে গেছে।
প্রকৃতি: কবে আসবে?
বাবা: তোমাকেতো বলেছি মা দুদিন পরে চলে আসবে।
প্রকৃতি: পাঁচদিন আগে বলেছো মা দুদিন পরে আসবে, এখনো কি দুইদিন হয়নি?
বাবা: কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে।
প্রকৃতি: কিছু বলো বাবা, মা কেন এখনো আসছে না?
বাবা: মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।

জিয়া কতক্ষণ আর তার ছয় বছরের মেয়েকে মিথ্যে আশ্বাস দিবে। সে নিজেও যে জানে না কবে বা কখন নওশাবা ফিরবে বা সে কেমন আছে! কিছুই যে জিয়া জানে না বা জানতে পারছেও না। চারদিন রিমান্ড শেষে কোর্টে নেবার পর ভেবেছিলো হয়তো নওশাবা আজ বাসায় ফিরবে। তার মেয়েকে বলেছিলো, আজ তার মা ফিরবে, সে যাচ্ছে তার মাকে আনতে! কিন্তু সে আশা আর পূর্ণ হলো না, কোর্ট আবার দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিলো।
আমি নওশাবার স্বামী জিয়া আর তাদের কন্যার কথা অনুমান করছি। আমি জানি না একজন বাবা কিভাবে তার কন্যাকে তার মায়ের বিষয়ে আসল ঘটনাটি বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু আমি যখন তাদেরকে নিয়ে ভাবি, তখন শুধু এই বাস্তব বিষয়গুলি মনে হয়। আর তা নিয়ে আমার ভিতর এই কাল্পনিক কাহিনীটি লেখার প্রেরণা আসে।
নাওশাবাকে আমি একবারই দেখেছি। দিনক্ষনটা ঠিক মনে নেই তবে ৪ বছর হবে হয়তো। আমি তখন বাংলাদেশে বান্ধবীর সাথে একটি নাটক দেখতে গেছি। জিয়া আগেই বলেছিলো সেও যাবে, কারণ নওশাবা সেই নাটকে অভিনয় করবে। নাটক শেষে সেইবারই আমি নাওশাবাকে প্রথম দেখি। খুব সুন্দর সরল ছোটোখাটো একটি মেয়ে নওশাবা যে সেদিন তার মা বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, কারণ সেদিন উনারাও মায়ের নাটক দেখতে ওখানে এসেছিলেন।
নওশাবা তার বন্ধুর কাছ থেকে শুনে আতংকিত হয়ে ফেইসবুক লাইফে কিছু মিথ্যে তথ্যবহুল বক্তব্য দিয়েছে কিন্তু যখন সে এই বক্তব্য দিয়েছে তখন সে জানতোনা যে সেটা মিথ্যে আর সেই মিথ্যে বক্তব্যসহ ভিডিওটা ক্ষনিকের মধ্যে ১০ হাজার বার শেয়ার হয়ে ভাইরাস হয়েছে। আমরা অনেকেই সেই ভিডিওটা দেখেছি। নওশাবা যখন বুঝতে পেরেছে যে একটি মিথ্যে তথ্য সে না জেনেই প্রচার করে ফেলেছে তখন সে সাথে সাথে আরো একটি ভিডিও পোস্ট করে সেখানে বলেছে যে তার পূর্ববর্তী তথ্য ছিল ভুল, যা সে একজন বন্ধুর কাছ থেকে শুনে আতংকিত হয়ে ভিডিও লাইফ করে। তাতে হয়তো দেশে একটি আতঙ্ক তৈরী হয়েছে কিন্তু সেটা ছিল তার অনিচ্ছাকৃত ভুল যা সে শিকার করেছে।

আমি যতটুকু নওশাবার স্বামী জিয়াকে জানি ও নওশাবা সমন্ধে শুনেছি তাতে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না যে এই মেয়ে কোন ষড়যন্ত্রকারী হতে পারে। না আমি আবেগপ্রবণ হয়ে এই কথা বলছিনা! যে মেয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে এক হয়ে স্লোগান দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, যে মেয়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ছোট ছোট বাচ্চাদের তাদের বেঁচে থাকার জন্যে কাজ করে, যে মেয়ে বান্দরবানের একটা অাদিবাসী মেয়ের স্কুলের পড়াশোনার খরচ বহন করে, যে মেয়ে তার মেয়ের জন্মদিন পালন করে ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাচ্চাদের ক্যান্সার হসপিটালের বাচ্চাদের সাথে, দেশের অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে যে মেয়ের এতো ভাবনা, সেই মেয়ে কেন আন্দোলনকারী ছোট ছেলে মেয়েদেরকে বিপদে ফেলতে যাবে?

নওশাবা অবশ্যই দেশদ্রোহী নয়, সে একজন সচেতন দেশপ্রেমিক নারী। যেখানে সরকার আজও পুলিশদের সাথে থাকা হেলমেটধারী লুঙ্গীধারী, যারা ছাত্র ও সাংবাদিকদের ওপর মারধর করলো তাদের বিচার তো দূরে থাক, গ্রেফতার পর্যন্ত হলো না, যেখানে বাসের তলায় পিষ্ট দুটি বাচ্চার মৃত্যুতে দাঁত কেলিয়ে হেসেও একজন বেহায়া মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব বহাল থাকে, সেখানে একটি দেশপ্রেমিক অভিনেত্রীকে বার বার রিমান্ডে নিয়ে মানসিক বা শারীরিক অত্যাচার করে কী এমন মহা ষড়যন্ত্র তার কাছ থেকে উদঘাটন করে আনবে যাতে করে বাংলাদেশ উদ্ধার হয়ে যাবে!
যে কোনো সংগ্রাম আন্দোলনে বহু মানুষ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে, দাঙ্গা হাঙ্গামা করে, কিন্তু তথাকথিত ভিলেন বানানো হয় গুটিকয়েকজন মানুষকে। মনে হচ্ছে নওশাবাকে এখন সেই ভিলেন বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। একটি অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ষড়যন্ত্রের নাম দেওয়া হচ্ছে।