আমি একজন মা বলছি

শ্রেয়সী শিখা মনি:

আজ আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সারা সপ্তাহের জমানো কাজ আমার করার কথা আজ। কিছুই করতে পারছি না, বিবেকের দংশন অনুভব করছি।
কেন? কারণ বাংলাদেশের ছোট্ট সোনামনিরা যে অসম্ভব কাজ সম্ভব করেছে তা আসলে আমাদের বড়দের অনেক আগেই করা উচিত ছিল। কেন পারিনি করতে? না আমরা ইচ্ছে করে করিনি ? কারণ আমাদের বড়দের বিবেক চলে তাঁর নিজস্ব স্বার্থের পথ ধরে।

ফেইসবুক, অনলাইন, টেলিভিশন চ্যানেল, পেইজ, মেসেঞ্জারে সন্তানদের রক্তাক্ত চেহারা, ছবি, বিভিন্ন ধরনের পক্ষে, বিপক্ষে মন্তব্য, গুজব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নায‍্য আন্দোলন নিয়ে জলঘোলা করে, সব রাজনৈতিক দলের তাতে রাজনৈতিক চেহারা দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার যে চেষ্টা তা আমাকে অসহ্য যন্ত্রণা দিচ্ছে।

আমার মা’ সত্ত্বা আমাকে সুস্থির থাকতে দিচ্ছে না, ঘুমাতে দিচ্ছে না। অস্থির বেদনায় রক্তাক্ত আমার বিবেক, আমার মা’ স্বত্ত্বা।
আমার সন্তানরা, হা এদের আমি আমার সন্তান বলছি। শুধু আমার না, সব মায়েদের বীর সন্তান এরা।

হে আমার সোনা মনি সন্তানরা _
তোমরা অসম্ভবকে করেছো সম্ভব।
বুঝিয়ে দিয়েছো কি ভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় বিবেক জাগ্রত থাকলে।
দেখিয়ে দিয়েছো চাইলেই নিয়ম মেনে, আইন মেনে চলা যায়। আইনের অনুগত থাকা যায়।
তোমরা অনেক বড়ো কাজ করেছো। অনেক কষ্ট সহ্য করেই রাজপথে তোমরা।
কিন্তু তোমাদের কাজ , তোমাদের কষ্ট, তোমাদের আন্দোলন নিয়ে এখন খাওয়া খাওয়ি শুরু হয়েছে। নিঃস্বার্থ আন্দোলনে , স্বার্থের বিষ নিঃশ্বাস টের পাওয়া যাচ্ছে। নোংরা রঙের প্রলেপ পরছে।
একজন মা তা মানতে পারে না। আমিও পারছিনা। আমি আর আমার কোনো সন্তানকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি বা খেলা করতে দিতে রাজি না।

তোমরা অনেক করেছো। তোমাদের কাজ আপাতত এই পর্যন্ত। এখন তোমরা যার যার ঘরে ,যার যার মায়ের খালি অশান্ত বুকে ফিরে এসো। আমরা মায়েরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তোমাদের নিরাপদে ফিরে পেতে।
আবার তোমরা রাজপথে নিশ্চয় নামবে যদি দাবী পূরণ না হয়। আমরা মায়েরা থাকবো তোমাদের পাশে সবসময়।

এখন থামো তোমরা
এখন সময় থামার, ফিরে যাবার, মায়ের কোলে
কারণ আমরা, মায়েরা-আর কারো কোল খালি হতে দিতে পারি না।।
ফেরো তোমরা , রক্ত ছেঁড়া নাড়ী রা.. তোমাদের ভালবাসি।

আমরা মায়েরা অপেক্ষায় আছি।

একজন মা ( শ্রেয়সী শিখা মনি)

শেয়ার করুন: