বাচ্চাদের মনে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন

নাসরিন শাপলা:

পাঁচদিন হয়ে গেলো, বাচ্চাগুলো এখনো পথে পথে নষ্টদের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করে চলেছে। দায় শোধরানোর মতো করে কিছু দাবি-দাওয়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেনে নিয়ে আশা করা হচ্ছে বাচ্চারা তাদের ক্লাসরুমে ফিরে যাবে। যেই বিষয়টি প্রশাসন বুঝতে অসমর্থ হচ্ছে, অথবা বুঝেও বুঝতে চাচ্ছে না, সেটি হলো, বাচ্চাগুলো এদেশের সিস্টেমের উপরে তাদের বিশ্বাস হারিয়েছে। বিশ্বাস যে কতোটা হারিয়েছে, সেটা তাদের পোস্টারের ভাষা পড়লেই বোঝা যায়।

একটি মেয়ের হাতে পোস্টারে লেখা দেখলাম,
‘ছাত্রছাত্রীদের লাশ চান? ১ পিস ২০ লাখ টাকা” কথাগুলো বুকের ভিতরে তীরের মতো এসে বিঁধলো। তবে দ্বিমত করতে পারলাম কই? প্রতিবাদ হলেই পরিস্থিতি বুঝে টাকার অংক ওঠানামা করে। আবার কেউ হয়তো গোনার খাতায়ই থাকে না। বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ আহত নিহত হয়, সবাইকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে দেশ অচিরেই দেওলিয়া হয়ে যাবে।

আসলে এখানে যেটা চলছে সেটা হলো রাজনৈতিক খেলা। কোমলমতি বাচ্চারা বনাম ঝানু রাজনীতিবিদ। বল এখনো বাচ্চাদের কোর্টে। তাতে রাজনীতিবিদগণ মোটেও উদ্বিগ্ন নন। তারা গোঁফে তা দিতে দিতে অপেক্ষা করছেন, কতোদিন আর এইসব বড়লোকের পোলাপান রাস্তায় থাকবে? পাঁচ দিন? দশ দিন? তারপর রাস্তা তো আবার সেই আমাদেরই। কতো দেখলাম এইসব ফালাফালি! আর দুইটা দিন গেলেই পাবলিকই এদের ব্যবস্থা করে ফেলবে। এর মধ্যেই তো অনেকে দেখছি প্রাইভেট কারের লাইসেন্স পরীক্ষা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন। কেউ বাচ্চারা পারমানেন্টলি মাস্তান হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখছেন, আবার কেউবা পরিবহন শ্রমিকের পরিবার না খেয়ে থাকার কষ্টে জরজর, সেই কথাও বলছেন।

ভুলে গেলে চলবে কেন, এই বাংলাদেশের মানুষই নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে। আর সেখানে আমরা মাত্র পাঁচ দিনের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে একটু এলোমেলো হলো বলে এতোগুলো অন্যায়কে মেনে নেবো?

আজ থেকে বুঝি পথে নামলো বাস কর্মচারিরাও। পুলিশ আর লাঠিয়ালরা তো আগে থেকেই ছিলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছে, কোন দুর্ঘটনার দায়িত্ব তিনি নেবেন না (যেন উনি এমনিতে অনেক দায়িত্ব নেন)। অঘটনের ষোলকলা প্রায় পূর্ণ হয়ে এলো বলে।

তার আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে একবার পায়ে হেঁটে রাস্তায় আসুন। যেখানে আপনার সুবিধা হয়, সেখানেই আসুন। আপনার জারি করা দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাসবাণীটা সরাসরি বাচ্চাদের যে কোনো একটি দলকে জানান। মোবাইলের যুগ এটি। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্ত ভাইরাল হতে এক মুহুর্ত লাগবে না।

আমার বিশ্বাস, বাচ্চারা ফিরবেই ফিরবে। আর হ্যাঁ, দয়া করে স্কুল-কলেজগুলোকে একটু বলে দেবেন, ক্লাসে ফিরে গেলে যেনো ওদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন না নেয়া হয়। ইতিহাসে আপনার বাবার মেয়ে হয়ে নয়, একজন নেতা হিসেবে বাবার পাশে স্থান করে নেবার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

শেয়ার করুন: