শামীম আরা শিউলি:
ঢাকার রাস্তায় বের হলে আনন্দে আমার বুক কাঁপে (পড়ুন আতঙ্কে), ফুটপাতে মোটর সাইকেল চমকে দেয়, একমুখী সড়কে যেখানে একপাশে চোখ রাখার কথা, সেখানে দুই পাশেই দেখতে হয়, কারণ উল্টো পথে চলাচলে আমরা কিছু মনে করি না, ফুট্ওভার ব্রিজে উঠতে আমাদের অনেক কষ্ট, সিগনালের ধার ধারে না কেউ, চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে যেভাবে মানুষ রাস্তা পার হয়, আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। চালকদের পথচারীদের মনস্তত্ব বুঝে গাড়ি চালাতে হয়, দৌড় দেবে, না কি দেবে না?
বাংলাদেশের সড়কে যানবাহনের গতি সবচেয়ে কম, বেলগাড়ি আর মোটরগাড়ির গতির মধ্যে কোন পাথর্ক্য নাই। বাস স্টপেজ বলে কি কিছু আছে? যেখানে সেখানে হাত তুললেই বাস থামতে যেন বাধ্য (অনেকটা টাকার মতো, চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে)। নামার সময় পারলে চালককে বলি, আমার বাড়ির দুয়ারে নামিয়ে দা্ও, আমরা এতো সুশৃঙ্খল!
পরিবহন শ্রমিকরা এই সুশৃঙ্খল জাতিরই অংশ নয় কি? বছর দশেক আগে আমি বিস্মিত হতাম এই ভেবে, কোনো দুঘর্টনার শিকার না হয়ে কেমন করে এই শহরে বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি! সে বিস্ময় কেটে গেছে, দুই দুইবার মরতে মরতে বেঁচে গেছি, আমার বাঁ হাত দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারি না, আমি এখন একা রিকশায় চড়তে পারি না, রাস্তা পার হতে পারি না। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করে।
তা করারই কথা, রাস্তা পার হবার জন্য কেউ যখন সিগনালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে, সে এদেশে উপহাসেরই পাত্র।
দেশে ১০০০ যানবাহনের বিপরীতে দুর্ঘটনার হার নাকি ৬০। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, আমাদের যে শৃংখলাবোধ, তাতে সড়ক দুঘর্টনায় এই মৃত্যুর হার আসলেই কি খুব বেশি?