আতিকা রোমা:
ঢাকা শহরের পাবলিক বাসগুলো বাইরে থেকে দেখলেই আমার গা ঘিনঘিন করে। একটা বাসেরও ইন্ডিকেটর লাইট নেই। জানালা ভাঙ্গা, ভেতরটা নিশ্চই আরও অনেক বেশী নোঙরা। অথচ দশ বছর আগেও ঢাকা শহরে ঝকঝকে পাবলিক বাস চলতো। এখন প্রতিটা বাসের বাইরের দেয়ালে ঘষা খাওয়ার দাগ। দাগ ছাড়া কোন বাস পাবেন না।
কলকাতায় গিয়ে যখন ঝকঝকে পাবলিক বাস দেখি, ভাল লাগে। পাবলিক বাসে শেষ উঠেছি (রেগুলার) প্রায় ১৪ বছর আগে, আর একবার অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় শাহবাগ থেকে তিনজন পাবলিক বাসে ফিরেছিলাম, ঐদিন আমার স্কুটি ছিল না সাথে। সেটাও ২০১৩ সাল হবে মনে হয়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম ১০/১২ বছরেই বাসের ভেতরের চেহারার কী পরিবর্তন!!! পুরাতন লক্কর ঝক্কর বাসগুলো বিআরটিএ-এর ফিটনেস সার্টিফিকেট পায় কীভাবে জানি না, ব্রেক বলে যাদের বাসে বিশেষ কোন পার্টস নেই। বাসচালকের সিটে বসলে দেখবেন গিয়ার লিভার, ব্রেক প্যাড সবগুলোই ভাঙ্গাচোরা। এই বাহনগুলো দিনের পর দিন চলে, তেমনি চালকরাও চলে। দিনের পর দিন, বিরামহীন।
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। প্রতিদিন এই রাস্তাটা দিয়ে আমি যাতায়াত করি যেখানে আজ কলেজের বাচ্চাগুলো প্রাণ হারালো। এরপর যখনই যাতায়াত করবো আমি জানি না চাইলেও ঐ জায়গাটার দিকে চোখ চলে যাবে অজান্তেই। আমি জানি, কারণ আমি এমনই। এক একটা ফ্লাইওভার থেকে তীরের গতিতে গাড়িগুলো নামে বলে আমি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার রাস্তাটা থেকে একশ হাত দূর দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু এই সাবধানতা আসলেই কি সামলে রাখতে পারবে?? নাহ পারবে না। নিয়তির ওপর জীবন ছেড়ে দিয়ে বেঁচে থাকি।
অন্যদিকে চলছে ধর্ষণের মহোৎসব। একই দিনে এতোগুলো বাচ্চার সাথে যে অন্যায় হোলো, আমরা শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে মন শান্ত করছি। হয়তো আরও একটু এক্টিভ হলে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু কী হবে তাতে? আদৌ কি কিছু অর্জন হবে? আদৌ কিছু পরিবর্তন হবে? একটা নয় বছরের বাচ্চাকে বর্বরোচিত ভাবে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এতো ক্ষোভ ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি? এতো? এই মূল্যবোধহীন অশিক্ষিত সমাজের কার কাছে বিচার চাইবো? কে দেবে সমাধান? দেশ না এগিয়ে যাচ্ছে? হ্যাঁ যাচ্ছেই তো। ফোর জি থেকে ফাইভ জি হচ্ছে, আকাশ দিয়ে ট্রেন লাইন।
আজ সারাদিনে বাংলাদেশ যে চরম পরাজয় দেখলো, তা উপলব্ধি আমাদের মতো ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষগুলোকে যেভাবে স্পর্শ করেছে, করবে না নীতি নির্ধারকদের। করবে না ক্ষমতাবাজদের। হতাশায় ডুবে যাওয়াই আমাদের নিয়তি, ঠিক যেমন ঘর থেকে বেরিয়ে আবার সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসলে মা যেমন মনে মনে ভাবে, “যাক আজ অনতত ভালভাবে ফিরে এসেছে” তেমনি।