ঈহিতা জলিল:
গতকাল থেকে ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদ এর একটি ছবি অন্তর্জালের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাইরালও হয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গেছেন আমি কোন ছবিটির কথা বলছি!
টিএসসির সামনে বসা দুটি তরুণ-তরুণীর বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে চুমু খাওয়ার ছবিটি। এতো সুন্দর একটা ছবি! আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটি দেখেছি। ছবিটির কোথাও আমি এক মুহুর্তের জন্যও কোনো অশ্লীলতা খুঁজে পাইনি। নান্দনিকতা ও অশ্লীলতার মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে একটি চমৎকার উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে ছবিটি।
স্থির চিত্র এখনও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু। এই ছবিটি নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। আমি এতোসব তর্কে বিতর্কে যেতে চাই না। আমি শুধু জানতে চাই এটি ফেবুতে শেয়ার করার আগে তাঁদের অনুমতি নেয়া হয়েছিলো কিনা! ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার বিষয়টি আমি বুঝেছি। এতো সুন্দর একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ইচ্ছা করতেই পারে, এটি শিল্পীর কাজও বৈকি। কারণ অনুমতি নিতে গেলে হয়তো ছবিটি আর হতো না। কিন্তু একই সঙ্গে এটিও সত্যি আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ইগনোর করতে পারবো না।
আর প্রতিনিয়ত আমরা দায়বদ্ধতার সাংবাদিকতার কথা বলি। এই ছবিটির ফেসবুকে শেয়ার করাটা আসলে কতটুকু দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়!! আমরা কি সেটা ভেবেছি? ছবিটির নিচে করা মন্তব্যগুলো কাপলটির পরিবার তথা সামাজিক অবস্থানে কতটুকু প্রভাব ফেলছে তার খবর কি আমরা পাচ্ছি!
ছবিটির জনপ্রিয়তা ফটোগ্রাফারের কাজের প্রশংসা সব ঠিক আছে, কিন্তু আমি ভাবছি তাঁদের বাড়ির কথা। আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমার প্রাক্তন প্রেমিক ও বর্তমান স্বামীটির সঙ্গে আমাকে এক রিকশায় দেখতে পেয়ে আমাদের এক সো কলড্ শুভাকাঙ্ক্ষী নিজ দায়িত্বে আমার বাড়ি বয়ে খবর নিয়ে এসেছিলেন! আমার আপাতদৃষ্টির আধুনিক পরিবারে আমার জুটেছিলো ব্যাপক হারে উত্তম-মধ্যম! তারপরের ইতিহাসে আজ আর না যাই!
আমি তাই ভাবছি, ছেলেমেয়ে দুটির কী অবস্থা এখন!!! সেদিনের সেই ঘটনা আমাদের দুজনের জীবন আমূল বদলে দিয়েছিলো!! থিতু আমরা হয়েছি বটে, তবে দুই পরিবারের মানসিক স্ট্রেস আর আমাদের স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকার যুদ্ধটা সহজ ছিলো না। আমাদের ঘটনাটি ছিলো শুধু দুটি পরিবারে, আর ওরা তো দাঁড়িয়ে গেলো পুরো পৃথিবীর সামনে!
আশা করি ভবিষ্যতে এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার আগে কিছু বিষয় ভেবে দেখবেন! আর যারা ছবিটি শেয়ার করছেন তাঁরাও ভেবে দেখবেন নিজের আনন্দ যেনো অন্যের জীবনে আপদ হয়ে না আসে! কিছু আনন্দ গোপনে অনুভব করাই বুঝি বেশী সুখের, বিশেষত যেখানে অন্য কেউ জড়িত। ছবির তরুণ-তরুণী দুটি যদি ফটোগ্রাফারের পরিবারের কেউ হতেন,তাহলে কি তিনি পারতেন এটি এভাবে ছড়িয়ে দিতে!
জানার ইচ্ছা রইলো! যারা শেয়ার দিচ্ছেন তাঁদের কাছেও একই প্রশ্ন থাকলো!! আমরা প্রেম চাই, কিন্তু অন্যের প্রেমে বাঁধা হয়ে নয়!! আমাদের ভাবতে হবে পবিত্র-সুন্দর এই দৃশ্যটি নেয়ার জন্য আমাদের সমাজ কতখানি প্রস্তুত!
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানটি আমরা যতটা শুনতে ভালোবাসি ততটা দেখতে ভালোবাসার মতো মন আমাদের আছে কি না!! শ্রাবণ ধারায় ভিজে ভিজে একটা নির্ভেজাল চুমু কাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে গেলো কে জানে! আহারে জীবন! আহারে প্রেম!
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
ব্যারিকেড কর
প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি
শুধু তোমাকে চাই।
২৪.০৭.১৮
মঙ্গলবার
দুপুরঃ ০২.৩০ মিনিট