শামীম আরা নীপা:
অবস্থার ভয়াবহতা কিছু অনুমান করতে পারেন কিনা দেখেন… তারপরও আপনারা হাত পা গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকবেন কিনা ভেবে দেখুন… অপরাধী যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সেইটা নিশ্চিত করা আমার, আপনার- আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য… মানুষ যেন অপরাধ না করে, অপরাধ প্রবণ হয়ে না উঠে সেই চেষ্টাটাও আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে করতে হবে।
ঘরে বাহিরে সবাইকে শেখাতে হবে, শিখতে বাধ্য করতে হবে কীভাবে পারস্পরিক সম্মানবোধের মাধ্যমে সভ্য সুস্থ মানুষ হয়ে বাঁচতে হয়, নারী পুরুষ সহাবস্থান করতে হয়।
ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, যেকোনো নির্যাতন-নিপীড়ন প্রতিরোধে রাষ্ট্রযন্ত্র, আইন ও শাসন, বিচার ব্যবস্থার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তেমন আমার, আপনার- আমাদের সবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তা আছে। পথে নামুন যে যার অবস্থান থেকে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, যেকোনো নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে।
নিজের ঘর থেকে কাজ শুরু করুন- নিজেদের সন্তানদেরকে যেকোনো প্রকার বৈষোম্যবোধ থেকে মুক্ত রাখুন, পারস্পরিক সম্মানবোধের শিক্ষা দেন শিশুদেরকে, তাদেরকে সংবেদনশীল ও মানবিক হতে সাহায্য করুন। অপরাধী সে যেই হোক না কেন তার শাস্তি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ ভূমিকা রাখুন।
একটা পরিসংখ্যান দেই, তাহলেই বুঝতে পারবেন ভয়াবহতা কতখানি।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে — ৯৮ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার… ২৯ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে… ৬১ জন ধর্ষণের আগেই ধর্ষকের থেকে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে… ৬৫ জন নারী ও শিশুকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে… ৪৫ জন (কমপক্ষে) নারী ও শিশু অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার… ১০ জন অ্যাসিড আক্রমণের কারণে মৃত্যু বরন করেছে… ৭৭ জন নারী ও শিশু অপহৃত হয়েছে… ১৩ জনকে পাচার করা হয়েছে… ৪ জন কে পাচারের পর পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে… ২৬৮ জন নারী এবং শিশু হত্যা হয়েছে… ২৭ জন খুন হতে হতে বেঁচে গেছে… ১৩ জন গৃহকর্মি গৃহকর্ত্রী/ গৃহকর্তা দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে, তার মধ্যে ৩ জনকে হত্যা করা হয় এবং ২ জনকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়।
১১৩ জন নারী যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন তারমধ্যে ৫১ জনকে হত্যা করা হয়েছে… ৯০ জন নারী ইভ টিজিং এর শিকার তারমধ্যে ১১ জনকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয় এবং ১৫৪ জন বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়… ৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে… ১৫ জনকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা হয়… ১৮৮ জন নারী ও শিশু রহস্যজনকভাবে মৃত্যু বরন করে… ৮৪ জন কন্যা শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়… ১৭১ জন নারী ও শিশুকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়… ৭ জন নারী গ্রাম্য ফতোয়ার শিকার হয়… ৩ জন নারী পুলিশ দ্বারা নির্যাতিত হয়… ২০ জনকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়… ৬৮ টি বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে… ৫৯২ জন নারী ও শিশু কে ধর্ষণ করা হয়েছে।
২০৬৩ জন নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে আছে, ধর্ষণ, ইভ টিজিং, যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি… গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ১৪ টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সংকলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে।