দিলশানা পারুল:
হাতুড়ি হাতে ছাত্রলীগের ছবি আমাকে এক ধাক্কায় ১৯ বছর আগে নিয়ে গেলো। সেদিন ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে প্রথমদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে ক্যাফের ঢাল বেয়ে নামছি। ছাত্রফ্রন্টের আহবায়ক মাসুম ভাইয়ের সাথে দেখা। মাসুম ভাইয়ের হাতে নবীন বরণের কার্ড। আমাকে বললো, চলো কার্ডগুলো বিলি করে আসি। আনু স্যারসহ সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের দেবো।
আমি আর মাসুম ভাই, চারপাশ থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ঘিরে ধরলো। মাসুম ভাইকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করলো। আশ্চর্যজনকভাবে শরীরের গিঁটে গিঁটে মারতে লাগলো। চারপাশে অনেক সাধারণ ছাত্র ঘিরে ধরে দেখতে লাগলো। আমি শুধু মাসুম ভাইকে জড়িয়ে ধরছি, আর চিৎকার করছি। যেদিকে হাতুড়ি চালাতে আসে আমি সেদিক থেকে মাসুম ভাইকে জাপটে ধরছি, বাঁচাতে চেষ্টা করছি।
যে ছেলেগুলো হাতুড়ি চালাচ্ছিলো আমি তাদের চিনি। সবাই তাদের চেনে। কিন্তু কেউ তাদের আটকাতে সাহস করেনি। সমাজ বিজ্ঞান থেকে ফারুক ওয়াসিফ ভাই, আর ছাত্র উইনিয়নের আরও দুই-একজন দৌড়ে এসে মাসুম ভাইকে সেদিন রক্ষা করেছিলো।
হাতুড়ি পেটানোর একটা ঘটনা! ওইদিনই আমি সিদ্ধান্ত নেই রাজনীতিটা করতে হবে, মানুষগুলোকে বুঝতে হবে, লোকগুলোকে রুখতে হবে। পরে এদের একজন পুরুষ্কৃতও হয়েছে, জাবিতে চাকরিও পেয়েছে। ছাত্রলীগ শুধু আজকে হাতুড়ি ব্যবহার করছে না। হাতুড়ি মামুনেরা আগেও ছিলো, এখনও আছে। হাতুড়ি মামুনদের সংখ্যা এখন অনেক। হাতুড়ি মামুনেরা ছাত্রদের মাঝখানে যেমন আছে, মন্ত্রী আমলা ক্ষমতাসীন সব স্তরেই আছে। মামুন প্রকাশ্যে মেরুদণ্ডে হাতুড়ি চালায়, আর অন্যরা আড়ালে জাতির মেরুদণ্ডে হাতুড়ি চালায়। হাতুড়ি মামুনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন পালন করা হয়, তোষণ করা হয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা বদ্ধ উন্মাদ, বধির, বুদ্ধি বিবেকহীন জেনারেশন তৈরি করা হচ্ছে। যারা হাতুড়ি মামুন হবে, শাহবাগের সামনে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করবে । আমরা ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে চুপ করে বসে থাকবো। হাতুড়ি মামুনদের তৈরি করার কারখানা যদি বন্ধ করতে না পারেন জাতি হিসেবে মেরুদণ্ড ভেঙে হুইল চেয়ারে বসে চলার প্রস্তুতি নেন।
(ফেসবুক থেকে নেয়া)