আমেনা বেগম ছোটন:
ফেসবুকে বিভিন্ন ডাক্তারদের পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে, মেসেঞ্জারে চিকিৎসা বন্ধ। গুড ফর অল, রোগী না দেখে, ভিজিট না নিয়ে চিকিৎসা দেয়া কোনো ভালো কথা না। আর সবার মতো ফেসবুকে ডাক্তাররা দম ফেলতেই আসে। আপনার যে সমস্যা নিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে মেসেঞ্জারে টুকটুক করছেন, তার সমাধান করার জন্যে না।
ফেসবুক আসার পর, দেশে ডাক্তার রোগী সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে। আগে আড়ালে কসাই বলে গালিটালি দিতেন, (সার্ভিস ভাল্লাগে না তাই গালি দিছেন, অসুবিধা নাই) কেউ দেখতো না, জানতোও না যে কতোটা ঘৃণা করে মানুষ ডাক্তারকে। এখন প্রায়ই এসব পোস্ট দেখে, পারস্পরিক ঘৃণা বাড়ে। ডাক্তারদের সেবার মানসিকতা নষ্ট হয়।
এজ এ ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট, আসলে মানুষ ডাক্তার হয় সিকিউর জব বা সোশাল রেস্পেক্টের আশায়। পথে-ঘাটে আপামর জনসাধারণকে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা দেবার মানসিকতায় না। উকিল কোর্টে, ব্যাংকার ব্যাংকে, পুলিশ থানায় কাজ করে। ডাক্তারির জায়গাটাও হাসপাতালে, চেম্বারে হওয়া উচিৎ। ফেসবুকে, বাজারে, বিয়ার দাওয়াতে, বাসে, ট্রেনে হওয়া উচিৎ না। মুখে মুখে ডাক্তারি করে ডাক্তারির কোয়ালিটি খারাপ হয়ে গেছে। প্রপার হিস্ট্রি ফিজিক্যাল এক্সাম ছাড়াই ট্রিটমেন্ট দিলে সেটা ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি।
ডাক্তারি করার সবচেয়ে বড় সমস্যা, আপনাকে ইন্সট্যান্ট সলুশন দেয়া সম্ভব না। ব্যথায় পেইনকিলার দেয়া যেতে পারে বড়ো জোর। আপনি সারাজীবন জাংক ফুড খেয়ে, এক্সারসাইজ না করে, রোগ বাঁধিয়ে প্রায় বাতিল কলকব্জা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন, সে ফুসমন্তর দিয়ে সব ঠিক করে দিতে পারবে না। পারলে অবশ্যই দিত।
সেদিন কোনো এক কমেন্ট চালাচালিতে একজন বিবেকবান মানুষ বললেন, তিনি ডাক্তারদের গ্রেপ্তার চান৷ সেখানে, না না এ হতে পারে না বলে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়নি। ফেসবুক এখন আর অত ভাল লাগে না, প্রচুর সময় নষ্ট হয়, মানুষ বুঝে ঘন্টা।
মৃত্যু একটি অবধারিত বিষয়। রোগের জটিলতায় মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যথাযথ চিকিৎসা সত্ত্বেও। এতে ডাক্তার গ্রেফতার করার আব্দার করলে ডাক্তারি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় নাই। আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ, গাড়ি সেইটা বুগাতি হলেও মেকানিকের সেটা রিপেয়ার করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে, এজন্য মেকানিককে গ্রেপ্তার করবেন? ডাক্তার একজন সাধারণ মেকানিক, তার সম্বল অল্পকিছু মেডিসিন, যার অধিকাংশ আবার ফার্মেসির এন্টিবায়োটিক খাওয়া রেজিস্টান্স এর কারণে কাজ করে না। বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, ডাক্তার এন্টিবায়োটিক দিবে, সেটা কাজ করবে না, বাচ্চা মারা যাবে, সমাধান ডাক্তার জেলে – আব্দার মাইরি।
এখনকার ডাক্তাররা খুব খারাপ, আগে ভালো ছিল। হতে পারে, তবে আগে রোগীরা বিশ্বাস করতো, যে সব রোগের চিকিৎসা নাই। যক্ষ্মা, ক্যান্সার হলে নির্বিবাদে মারা যেত। ডাক্তারের কাজ সহজ ছিল। এখন সবাই অমরত্ব চান, তামিল সিনেমার হিরোদের মতো ডজন গুলি খেয়েও ইয়াহু বলে উঠে পড়তে চান। সরি ব্রো, নট পসিবল। দ্য সুন ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দিস, সুন উইল বি বেটার ফর আস৷
সব ডাক্তার ভালো? অফকোর্স না, কতিপয় অসাধু , না বহুসংখ্যক অদক্ষ ডাক্তার আছেন- দে পিসড ইউ অফ। আমি জানি। ভালো ডাক্তার খুঁজে বের করুন। তার কাছে চিকিৎসা নিন। ভালো ব্যবহার করলে ভিজিট না দেবার চেষ্টা করবেন না, ফাউ সার্ভিস দিতে দিতে সে একসময় কসাই হয়ে যায়। সিস্টেম প্রবলেম। ভালো থাকেন সবাই, স্বাস্থ্যবিধি জানুন, মানুন। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।