আন্দোলনকে ‘বিভ্রান্ত’ করার ‘ট্রেন্ড’ আওয়ামী লীগেরই তৈরি

ফড়িং ক্যামেলিয়া:

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে লেখার সময় পাচ্ছিলাম না বলে শুধু খবরের পাতায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলাম। আজকে মনে হলো না লিখলে অন্যায় হবে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই মনে হচ্ছিল আওয়ামী লীগ একটা ভয়ংকর ট্রেন্ড তৈরি করে ফেলেছে। সেটা হলো, যখনই কোনো যৌক্তিক দাবি নিয়ে জনগণ সোচ্চার হয়, তখন-ই সেটা জামাত শিবির কিংবা বাম এর আন্দোলন এর নাম দিয়ে দমিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়, কিংবা সেটা ছিনতাই করে নিজেদের বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, কারণ লীগ আপোষের রাজনীতি বেছে নিয়েছিল। কিন্তু ব্লগাররা যখন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি তুললো, এবং সর্বস্তরের মানুষ যখন এই আন্দোনের সমর্থন দিল, তখন লীগ এই আন্দোলন নিজেদের আন্দোলন বলে দ্রুত বামে চেপে তাদের বিজয় এর সিল মেরে দিল। যদিও এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শতভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মানুষ ছিল, তবুও লীগ সরকার এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ব্লগারদের ৫৭ ধারা দিয়ে হয় জেলে ভরলো, অথবা ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিল।

প্রশ্ন হলো যদি এটা লীগের আন্দোলন হয়, তবে কেন আন্দোলনকারীদের জেলে ভরা হয় কিংবা ৫৭ ধারা দেয়া হলো?

এবার আসি কোটা প্রসঙ্গে,
আজকে কোটা সংস্কারের যে দাবি, সে দাবি মোটেও অযৌক্তিক দাবি না। কিন্তু লীগ সরকার যেহেতু ৫৬ পারসেন্ট কোটায় বর্ধিত করেছে, তাই তারা কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবার পক্ষে না। আবার এরা ভালো করেই জানে, সাধারণ ছাত্রদের এই দাবি অযৌক্তিক না। তাহলে কী করা যায়? সমস্ত আন্দোলনটাকে জামাত-শিবিরের আন্দোলন বলে চালিয়ে দাও।

এখন প্রশ্ন হলো, জামাত এই দাবির সাথে সম্পৃক্ত কিনা?
তার আগে প্রশ্ন হলো, এই দেশে কি জামাত শিবির করা ছাত্র নেই? নেতা নেই? আছে তো, এবং এমন একটা আন্দোলন চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতাও আছে। যেহেতু কোটা সংস্কারের দাবি সরকারের বিপক্ষে, তাহলে সেই সুযোগ তারা কেন নেবে না?

সাধারণ ছাত্ররা যখন বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে মিছিল করেছিল, যখন তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি পেশ করেছিল, তখন কেন দাবিগুলো মেনে নেয়া হলো না? তাও বাদ দিলাম। ঈদের আগে সংসদে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়ন কেন হলো না?

এবার আসি দেশের আইন প্রসঙ্গে, কেউ বাম করলে, জামাত করলে, বিএনপি করলে কিংবা লীগের বিরুদ্ধে অন্য যে কোনো দল করলে তাকে রাস্তায় পিটানোর অধিকার কি আমার দেশের আইন দেয়? কেউ লীগ করলে তার রগ কাটার অধিকার তো আমাদের আইন দেয় না।
তাহলে আন্দোলনকারীদের পেটানোর অধিকার কে দিল? কিংবা কেন দিল?
যে ছেলেটাকে মেরে রক্তাক্ত করা হলো, সেটা কেন হলো?

এই যে এতগুলো প্রশ্ন করলাম, তার পক্ষে বিপক্ষে প্রচুর আলোচনা করা যায়। কিন্তু দিন শেষে ভুক্তভোগী সাধারণ ছাত্ররা। ওদের পেটে লাথি পড়েছে। হলের পাতলা ডাল আর আলু খাওয়া ছাত্রদের শরীরে হয়তো জোর কম, কিন্তু মনের জোর প্রবল। ওরা থামবে না। থামা উচিত হবে না।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা সাধারণ ছাত্র, সেখানে জামাতের মদদ জোগানোর পেছনে লীগের এই শোষণ এর নীতি দায়ী। এরা যে কোনো যৌক্তিক দাবিকে মেরেকেটে দমানোর কালচার শুরু করেছে, সেই সুযোগ অবশ্যই জামাত নেবে এবং নিচ্ছে। জামাতকে এতো শক্তিশালী করার জন্য একমাত্র লীগই দায়ী।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.