ধিক্কার জানাই হামলাকারী ও তাদের অনলাইন-অফলাইন সমর্থকদের

সম্পাদকের ব্লগ:

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে আন্দোলনকারীরা তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে গেলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে শাহবাগে চেষ্টা চালায়। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হলে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার নেতৃত্বে একদল হামলাকারী তাদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে সরিয়ে দেয়। আমরা ওই হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। হামলার সময় কয়েকজন নারী আন্দোলনকারীও ভীষণভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। নারী লাঞ্ছনার দিক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহকই হোক, আর উগ্র মৌলবাদীই হোক, সবার ভাষা এক ও অভিন্ন।

উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে এইসব হামলাকারী এবং তাদের সমর্থকদের প্রতি ধিক্কার জানাই। সেইসাথে ধিক্কার জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। আর যারা প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের কর্মিদের নানাভাবে নিপীড়ন, নির্যাতন করে আসছে, জামাত-শিবির আখ্যা দিয়ে একটা যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তৎপর ছিল, তাদের প্রতিও ধিক্কার জানাই। আপনাদের মধ্যে অনেকেই মা-বোন-ভাই, আপনারা কীভাবে দেখছেন আজকের ঘটনাকে? একটু লজ্জাও লাগছে না আজ পূর্বের করা ট্রলগুলোর জন্য? সত্যিই আপনারা দারুণ! দলবাজি আপনাদের দেখেই শিখছি, এবং প্রচণ্ড একটা ঘৃণাবোধও কাজ করছে আপনাদের প্রতি।

এই ফাঁকে আরও একটি কথা বলতে চাই, এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে যখন ছাত্রীদের হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল আন্দোলনকারীরা, এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নেত্রীকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিল, তখন বেশকিছু সোকলড অ্যাক্টিভিস্ট নিজেদের মানবাধিকারের ঝাণ্ডা তুলে ধরেছিলেন। মেয়েটির পক্ষে হ্যাশট্যাগ দেয়াও শুরু করেছিলেন, তাদের বলছি, আপনারা আজকের ছবিটি ভালো করে দেখুন তো! আপনাদের মানবতাবোধ এখন কোন স্তরে আছে, একটু মাপুন দয়া করে। আর তা যদি না পারেন, তবে নিজেকে গুটিয়ে ফেলুন সম্পূর্ণ পচে যাবার আগে। দুর্গন্ধ ছাড়া আপনাদের কাছ থেকে আর কিছুই পাচ্ছি না আমরা। বিক্রি হয় মানুষ, তাই বলে এতোটাই?

আজকের হামলা নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজনের মন্তব্য নিচে দেয়া হলো:

সারোয়ার তুষার লিখেছেন-
একটা ‘বেয়াড়া’, ‘বেআইনি’ প্রশ্ন কি আমরা তুলতে পারি? গত মার্চ মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার খবর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ার পর, রাতে হলগুলো থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্ষুব্ধ ছেলে-মেয়েরা বের হয়ে এসছিল। মেয়েরা রাতে হল থেকে বের হওয়ায় নাকি প্রধানমন্ত্রী ‘দুশ্চিন্তায়’ ঘুমাতে পারেননি সারা রাত। আজ শহীদ মিনারে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের ‘সোনার ছেলেরা’ আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীর উপর এভাবে হামলে পড়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর ‘দুশ্চিন্তা’ হবে তো? প্রধানমন্ত্রী আজ ‘উদ্বিগ্ন’ হবেন কি?

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাসকাওয়াথ আহসান লিখেছেন-
“গণজাগরণ আন্দোলনকে দমাতে “ধর্মের ব্যবহার” এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবহার” একই আঙ্গিকে করা হয়েছে। নিজেদের স্বার্থে ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহার খুবই আশংকাজনক। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তি মানুষের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের মাঝে ইসলামভিত্তিক রাজনীতিকদের ঠিকাদারি অনধিকার চর্চা। স্বদেশ মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে স্বদেশের সম্পর্কের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাজনীতিকদের ঠিকাদারি অনধিকার চর্চা।”

সালমা লুনা লিখেছেন- “ঘুমাও বাংলাদেশ।
নিশ্চিন্তে ঘুমাও।
সবাই ভালো আছে।”

ফাহমি ইলা তিনটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ছবিগুলো ২০১৮ সালের। যেকোনো আন্দোলনে হামলারও যে প্রকারভেদ, লিঙ্গভেদ আছে তা তিনি স্পষ্টই দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন-

“এদেশে ধরেন একটা আন্দোলন হচ্ছে, সত্যের পক্ষে ন্যায়ের পক্ষে। সেই আন্দোলনে নারী-পুরুষ আছে। আন্দোলন যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে এগিয়ে এসেছে আক্রমণকারী (সে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী হোক আর সরকারের সমর্থনকারী)। কিন্তু প্রতিহতের ধরন শুধুমাত্র জেন্ডার পরিচয়ের জন্য পাল্টে যাবে। পুরুষ আন্দোলনকারীকে কিল ঘুষি মেরে পায়ের নিচে পিষে ফেলা হবে আর নারী আন্দোলনকারীর ক্ষেত্রে পুরুষালী থাবায় থাবায় তার শরীরে গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করা হবে তথাকথিত লজ্জার দাগ, শ্লীলতাহানির সংজ্ঞা। তার কাপড় খুলে নেয়া হবে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করে ভিক্টিমাইজ করার চেষ্টা করা হবে, সেই নারী কাউকে বাঁচাতে এলেতো কথাই নেই!!

এ দেশে আন্দোলন পথে হোক, ঘরে হোক, সামাজিক মাধ্যমে হোক – জেন্ডার পরিচয়ের ভিন্নতায় আক্রমণ হয় ভিন্ন। ছবিদুটো কিন্তু ২০১৮ সালের, আজকের!!!

হাতে হাত রেখে আন্দোলনের এখনই সময়
এখানে মানুষ টিকে আছে বড় অসহায়।”

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.