উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক:
ধর্ষণ বন্ধে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা জোরদার করা ও প্রচারাভিযান চালানোর পাশাপাশি শক্তিশালী নাগরিক ফোরাম তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে “ধর্ষণ প্রতিরোধ যাত্রা-Anti Rape March” এর কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২ জুন (শনিবার) সকালে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকার সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন পেশা, শ্রেণি ও বয়সের মানুষ।
মানববন্ধনে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হকসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি, পেশাজীবী শ্রেণীর প্রতিনিধি, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা এই কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্ষণ বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করার কথা বলেন। ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনকে আরও শক্তিশালী করা এবং দ্রুত বিচার আইনে ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তি করার দাবি জানান বক্তারা।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা যদি সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারি, তবে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ বন্ধ করতে সক্ষম হবো। পাশাপাশি সামাজিক অনুশাসন আমাদের শক্তিশালী করতে হবে যা ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।’
ফাহমিদুল হক বলেন, ‘ধর্ষণ একটা মারাত্মক ব্যাধি। এটা দূর করতে রাষ্ট্রের যে আইন-কানুন আছে তাই যথেষ্ট নয়। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। এর মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে- নারীর উপরে পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শনের দিক আছে। এই সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধিগুলো দূর করার জন্য সমাজের সচেতন মানুষদের গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সামাজিক ব্যাধি ও দুষণ দূর হতে পারে।’
রিফাত ফাতিমা বলেন, ,‘ধর্ষণ বন্ধে পারিবারিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারের পুরুষেরা যেন শিশুদের সামনে নারী সদস্যদের ছোট করে কথা না বলেন।’
জাকিয়া শিশির বলেন, ‘ধর্ষণের ধারাবাহিক প্রতিবাদের অংশ হিসাবে আজকে আমরা বিপণী বিতানের সামনে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমরা দেখেছি যে বিপনী বিতানগুলোতেও যৌন হয়রানি বেড়ে চলছে। সারা দেশের মানুষ যদি এর প্রতিবাদে সোচ্চার না হোন, তাহলে ধর্ষণ বন্ধ হবে না।’
ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, ‘ধর্ষণ বন্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া উচিত। এজন্য সারাদেশব্যাপী গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন কার্যকর সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।’
গত ০২ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকায় ‘ধর্ষণ প্রতিরোধ যাত্রা-Anti Rape March’ একক বা সম্মিলিত উদ্যোগে উত্তরা, গুলশান, বসুন্ধরা, ৩০০ ফিট, পল্লবী, শ্যামলী, মোহাম্মপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, ইডেন কলেজ প্রভৃতি স্থানে মানববন্ধন করা হয়েছে।
এছাড়া এই ক্যাম্পেইন ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরে তিনটি জেলায় -নারায়ণগঞ্জে, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়াতে। ক্যাম্পেইনে অনুপ্রাণিত হয়ে নেপাল, ভারত, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, উগান্ডা ও কানাডায় বাংলাদেশী নাগরিকসহ ভিনদেশীরাও একক বা যৌথ আয়োজনে সড়ক ও সামাজিক গণমাধ্যমে নানাধরনের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।