একটি প্রতারণা, মানবতা আর সাবধানতার গল্প

নাজনীন মুন্নী:

কেউ দেখে ফেলবে … এই ভয়ে ভালোবাসার মানুষেরা এখন আর প্রকাশ্যে মেলামেশা করে না। আপাতত দৃষ্টিতে এমন সমস্যার মধ্যে একটা ভালো সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে প্রেমিক পুরুষেরা। ঘরের ভেতর চার দেয়ালে ভালোবাসার একটা মুখোশ পরে খুব সহজেই সে অন্তরঙ্গ হচ্ছে মেয়েটির সাথে।

শুধু যে এটিই লাভ তা না। মেয়েটিকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হয় না। ঝক্কি নিতে হয় না ফুল ,নদী, পাখি, খোলা বাতাস বা ‍সুন্দর কোনো দৃশ্য দেখানোর। সারাদিন ঘোরাফেরা আর খাওয়া-দাওয়ার যে খরচ তা থেকেও মুক্ত। মোটামুটি ফ্রিতে সবচে দুর্লভ জিনিস যেটা, সেই শরীর পাওয়াও  শেষ। এই জন্যই এতো ভালোবাসার বাহানা আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বোকা মেয়েগুলো বুঝেও না। রেড লাইট এরিয়াতে গিয়ে একটা মেয়ের শরীর পেতে যতো টাকা লাগে, সেই টাকাটাও মেয়েটির পেছনে ব্যয় করে না তারা।

প্রশ্ন উঠতেই পারে মেয়েটাও কি এই মজা নিচ্ছে না? ঠিক। কিন্তু যখন নিচ্ছে, তখন সে নিশ্চিত ভাবেই জানে, সেই পুরুষটিই তার জীবনে একমাত্র পুরুষ হয়ে আজীবনের জন্য পাশে থাকবে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, “শারীরিক মিলনের সময় ছেলেরা ভাবে, আমি পাইলাম, আর মেয়েরা ভাবে, আমি আরো ভালোবাসলাম।”

এই জন্যই বোধহয় ভালোবাসার মানুষটি চলে গেলে বুক হিম করা এক কষ্টে ঢুকে যায় মেয়েরা। কষ্ট কেবল যে খুৃব যত্নে রাখা শরীরটা এক প্রতারককে দিয়ে দেয়ার জন্য থাকে, তা তো নয়। শরীরটার সাথে নষ্ট হয় মনটাও, বিশ্বাস, আস্থা , ভালোবাসা সব যায় এক সাথে। সবচে বেশি বোধহয় হারায় আত্মসম্মান আর আত্মবিশ্বাসটা।

কিন্তু এর কোনোটাই বোধ করে না ছেলেরা। যখন শরীর আবিস্কার শেষ, তখন সবাই কলম্বাস হয়ে অন্য মহাদেশের খোঁজে বের হয়। বিয়ে বা সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ফিকে হতে থাকে। শুরুতে দেখা করার সময় কমতে থাকে। যে ছেলে একবার দেখা করার জন্য ঘন্টা ভর রাস্তায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতো, তাকে সেধেও তখন দেখা করানো যায় না। নিষ্কর্মা এক মানুষের তখন কাজের অজুহাত তৈরি হয় হাজারটা।

দেখা না পাওয়া মেয়ে তখন কথা বলায় আটকে রাখতে চায় সম্পর্কের বাঁধন। কিন্তু সারাদিন যে ফোন বেজেই যেতো, সেই ফোন আর চ্যাট বক্স পড়ে থাকে শূন্য। ফোন বাজলেই দৌড়ে ফোন ধরার পর যখন স্ক্রিনে ভাসে অন্য কারও নাম, মেয়েটি সেই প্রতিটা কলের সাথে মরে প্রতিবার। কাকে গিয়ে তখন সে বলবে, কী হয়েছে তার সাথে! বন্ধুকে বলতে ভয় পায় খারাপ ভাববে বলে। মা বাবাকে বলার সাহস তো কখনও হয়ই না। হাতটা ধরার, কাঁধটা বাড়িয়ে দেয়ার মানুষ তখন হাতড়েও খুঁজে পায় না মেয়েটা।

কষ্টের কথা, প্রতারণার কথা বলার জায়গাটা কই সেটা খুঁজতেই মেয়েটি হারায় তার সব শক্তি। এরপর ধীরে ধীরে হারায় তার যোগ্যতা, প্রতিভা সব। লাখো প্রতারণা এমন প্রতিদিন। কেউ বলতে পারে না কাউকে। কেউ বিচার চাইতে পারে না। কাউকে বলতে গেলেই বলে, ‘কেন গিয়েছিলে’? এই যে একটি কথা, ‘কেন গিয়েছিলে’, এটা মেয়েটাকে আরও মেরে ফেলে ভিতরে ভিতরে। আরেকটা যুক্তি কাছের বন্ধুরা দেখান মেয়েটিকে, ‘টেক ইট ইজি, তোমার সাথে তার সুর মেলেনি, তাই হয়নি’। এই যে সুর মেলেনি, এটা ভেবে ভেবে মেয়েটা আরও দমে যায়। সুরটা তাহলে মেলানোর দায়িত্ব ছিল তার একারই?

কষ্ট লুকানোর যায়গা একটিই তখন …মরে যেয়ে বেঁচে যাওয়া। এমন করেই চলবে? এটা তো স্রেফ প্রতারণা! এমন প্রতারণার বিচারটা কী? কোনো কি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হবে অন্তত বিচারটা দেয়ার, কষ্টটা বলার জন্য? কেউ কি ভাববেন?

ভাইদের বলি, কেবল ফ্রিতে শরীর পাওয়ার লোভে এমন কষ্টে আর না ফেলেন কাউকে। এর জন্য আরও অনেক জায়গা আছে, সেখানে যেতে পারেন টাকার বিনিময়ে। তবুও মেয়েগুলোকে কষ্ট দিয়েন না। অন্তত এইটুকু মানবিক আপনারা চাইলেই হতে পারেন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.